ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

থিয়েটারকে পেশাদারিত্বে আনতে চাই ॥ চঞ্চল সৈকত

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

থিয়েটারকে পেশাদারিত্বে আনতে চাই ॥ চঞ্চল সৈকত

অভিনেতা ড.চঞ্চল সৈকত। মঞ্চ, সিনেমা ও টিভি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনায়ও মুন্সিয়ানার পরিচয় দেখিয়ে চলেছেন দীর্ঘদিন। সম্প্রতি কালচারাল এ্যান্ড ইকনোমিকে আমেরিকা থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন তিনি। দলের ১৮তম প্রযোজনায় সৈয়দ সামসুল হকের ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ নাটকের ১৫তম মঞ্চায়ন শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আজ সন্ধ্যা ৭টায়। নাটকটির সহযোগী নির্দেশকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিশেষ একটি চরিত্রে অভিনয়ও করছেন তিনি। নাটক ও অভিনয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। ‘তোরা সব জয় জয়ধ্বনি কর’ নাটক নিয়ে বলুন ড. চঞ্চল সৈকত : কবি ও নাট্যকার শ্রদ্ধেয় সৈয়দ শামসুল হকের অসাধারণ সব নাট্যকর্মের মধ্যে একটি হচ্ছে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ নাটক। নাটকটির মূল নির্দেশনা দিয়েছেন আরেক শ্রদ্ধাভাজন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নের পটভূমিতে রচিত এ নাটক। সে সময় একদিকে চলছিল গণহত্যা, অন্যদিকে চলছিল মুক্তিযুদ্ধ। দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে এ দেশের মানুষকে। গ্রেফতার করতে থাকে দেশপ্রেম সন্দেহ করে অনেককেই। এমনি গ্রেফতারকৃত একজনকে নিয়ে এ নাটক। নাটকটিতে আপনার চরিত্রটি সম্পর্কে বলুন ড. চঞ্চল সৈকত : নাটকের মুখ্য চরিত্র নজরুল ইসলামের ভূমিকায় অভিনয় করছি আমি। যে লোকটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সৈন্যদের হাতে সন্দেহভাজন লোক হিসেবে ধৃত হয়। তার পকেটে পাওয়া গিয়েছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণা গ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োলাস’ (তোরা সব জয়ধ্বনি কর) কবিতার কবির স্বাক্ষর সংবলিত পত্রিকার একটি কাটিং। এরপর সাধারণ ছাপোষ্য নজরুল ইসলামের ওপর পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে চলে অমানুষিক অত্যাচার। লোকটি নিজেকে যতই বলে যে সে নজরুল ইসলাম নয়, পাকিস্তানী আর্মি তা বিশ্বাস করে না। এভাবেই এগিয়ে চলে নাটকের কাহিনী। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মঞ্চ নাটকের গুরুত্ব কেমন? ড. চঞ্চল সৈকত : আমাদের সামাজিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মঞ্চ নাটক। দেশে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িকতা সমাজটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এটা রাজনীতিকরা বোঝেন না কিংবা বুঝতেও হয়ত চান না। আমার ধারণা সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে সাম্প্রদায়িক হামলা হলো, যদি সেসব স্থানে একটি করে নাটকের দল থাকত হয়ত এ ধরনের হামলা হতো না। বর্তমান পরিস্থিতিতে মঞ্চ নাটকের গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি কি মনে করেন আমাদের দেশের মঞ্চ নাটক আগের তুলনায় অগ্রসর? ড. চঞ্চল সৈকত : অবশ্যই। এখন অনেক তরুণরা নাটক নির্মাণে এগিয়ে আসছে। এবং তারা ভাল ভাল নাটক দর্শকদের উপহার দিচ্ছে। আমাদের মঞ্চ নাটক আন্তর্জাতিক মানের? ড. চঞ্চল সৈকত : আমরা এখনও বুঝি না যে আন্তর্জাতিক মানের নাটকটা কী? তবে দেশের দর্শকরা যদি সব দেশের নাটক দেখতে পারত তাহলে হয়ত এ মূল্যায়ন করা সম্ভব হতো। মঞ্চ নাটকের ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রতিকূলতা অনুভব করেন? ড. চঞ্চল সৈকত : পুরোটাই প্রতিকূলতা অনুভব করি। আমাদের দেশে এখনও উন্নতমানের মঞ্চ গড়ে ওঠেনি। নাটক নির্মাণ করতে গেলে যে সাজ সরঞ্জাম লাগে বলতে গেলে তার কোনটাই আছে বলে মনে হয় না। সরকারীও ও বেসরকারীভাবে কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এখন আমাদের দেশে অনেক মোবাইল ফোন কোম্পানি হয়েছে তাদের কাছে মঞ্চ নাটকের জন্য স্পন্সার চাইলে তারা দিতে চান না। অথচ অন্য বিষয়ে তারা অনেক সাহায্য করে থাকে। নাটক নিয়ে আপনার ভাবনার কথা বলুন ড. চঞ্চল সৈকত : আমার বহুদিনের ইচ্ছা মঞ্চ নাটককে পেশাদ্বারিত্বে নিয়ে আসা। এ নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছি। আমাদের দেশের থিয়েটারকে যদি পেশাদ্বারিত্বে নিয়ে আসা যায় তাহলে নাটক আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হবে। -গৌতম পা-ে
×