ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিটিসেল ফের চালু হলো

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৭ নভেম্বর ২০১৬

সিটিসেল ফের চালু হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খুলে গেল বেসরকারী মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের বন্ধ তরঙ্গ। রবিবার সন্ধ্যায়ই চালু করার জন্য কর্মকর্তারা টেকনিক্যাল কাজ শুরু করেছেন। বিশ্ব ডাক দিবস উদযাপন উপলক্ষে রবিবার দুপুরে জিপিওতে ডাক বিভাগের শ্রেষ্ঠ কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ কথা বলেন। জানা গেছে, আদালতের নির্দেশের পরেও সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দেয়া হচ্ছে না রবিবার সকালে বিষয়টি আপীল বিভাগের নজরে আনেন সিটিসেলের আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন। আপীল বিভাগ এ বিষয়ে বিটিআরসির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা জানান, বিটিআরসির বোর্ড মিটিংয়ের পর সিদ্ধান্ত হবে। তারানা হালিম বলেন, আমরা আদালতের মৌখিক সিদ্ধান্ত জানতে পেরেছি। আদালতের রায়ের প্রতি আমরা অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল। সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দিতে আমাদের একটু কাজ করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিটিআরসি কাজ শুরু করেছে। একটি তরঙ্গ বন্ধ করার পর তা পুনরায় স্থাপন করতে কিছুটা সময় লাগে। আদালতের সার্টিফাইড কপি পাইনি, তারপরও আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টি একটু টেকনিক্যাল ব্যাপার। আদালতের সার্টিফাইড কপির জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। এদিকে বিটিআরসির সচিব মোঃ সরওয়ার আলম জানান, আদালতের নির্দেশে আজকের (রবিবার) মধ্যে সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দেয়া হচ্ছে। আজই বিটিআরসির বিশেষ কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিটিআরসির একটি টেকনিক্যাল দল সিটিসেল কার্যালয়ে সন্ধ্যার আগেই যাবে। তারা সেখানে কিছু কারিগরি কাজ করার পর আশা করা যাচ্ছে, সারাদেশে সিটিসেলের নেটওয়ার্ক চালু হবে। আগামী ১৯ নবেম্বরের মধ্যে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্ত সাপেক্ষে গত ৩ নবেম্বর সিটিসেলের তরঙ্গ বরাদ্দ অবিলম্বে খুলে দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। তরঙ্গ খুলে দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে সিটিসেলের আপীল আবেদনের শুনানি শেষে ওই দিন এই আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এর আগে পাওনা টাকা না দেয়ায় গত ২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ ও কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল বিটিআরসি। বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাজাহান মাহমুদ বলেন, সিটিসেলের কাছে বিটিআরসির পাওনা রয়েছে ৪৭৭ কোটি টাকা। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের দিতে হতো ৩১৮ কোটি টাকা। কিন্তু তারা ১৩০ কোটি টাকা দিয়েছে। আর এনবিআরকে দিয়েছে ১৪ কোটি টাকা। বাকি টাকা তারা পরিশোধ করেনি। তাই তাদের তরঙ্গসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তরঙ্গ ফি বাবদ প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিটিআরসির পাওনা ছিল ২২৯ কোটি টাকা। বাকি ২৪৮ কোটি টাকা অন্যান্য খাতে পাওনা। এই টাকা আদায়ের জন্য বিটিআরসি গত দেড় বছর ধরে সিটিসেলকে চিঠি দিয়ে এসেছিল। কিন্তু তারা বিটিআরসির চিঠির কোন গুরুত্ব দেয়নি। এবার তারা আদালত থেকে তরঙ্গ বরাদ্দের অনুমতি পেয়েছে। আমরা রবিবার সন্ধ্যার মধ্যে তাদের তরঙ্গ ফিরিয়ে দিচ্ছি। উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল) নামে টেলিকম সেবা পরিচালনার লাইসেন্স পায় সিটিসেল। পরের বছর হংকং হাচিসন টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেড এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বিটিএল নাম বদলে হয় হাচসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল)। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় আবার পরিবর্তন আসে। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপি নেতা মোরশেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক মোটরস ও ফারইস্ট টেলিকম মিলে এইচবিটিএল এর শেয়ার কিনে নেয়। তখন কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড। ওই নামে ব্র্যান্ডিং শুরু করে। সর্ব শেষ নাম বদল করে রাখা হয় সিটিসেল। ২০০৪ সালে এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সিঙ্গাপুরের সিংটেল। প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের (সিটিসেল) সর্বশেষ ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান। ৪৫ শতাংশ সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিংটেলের। বাকি ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক ফার ইস্ট টেলিকম লিমিটেড। এই কোম্পানিটিও মোরশেদ খানের। মোট মালিকানার ৫৫ শতাংশের মালিক হচ্ছে মোরশেদ খান। বাকি ৪৫ শতাংশের মালিক সিংটেল।
×