ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গীবাদ নির্মূলে অস্ত্র ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ২২ অক্টোবর ২০১৬

জঙ্গীবাদ নির্মূলে অস্ত্র ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে তার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, এ দুটি দানব নির্মূলে যে কোন মূল্যে অস্ত্র ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে। অন্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনায় বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে না দেয়ার তার সরকারের অবস্থানের কথাও প্রধানমন্ত্রী পুনরুল্লেখ করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী আজাদ। প্রতিনিধি দলে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর ছেলে অভিজিৎ মুখার্জী এমপিও রয়েছেন। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে যোগদানে তারা বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। খবর বাসসর। সাক্ষাত শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ভারতের রাজ্যসভায় বিরোধীদলের নেতা গোলাম নবী আজাদ সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুটি আপনি সাফল্যের সঙ্গে সামাল দিয়েছেন। এ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে লড়াই করব। ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের এই প্রবীণ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে এখন একটি গতিশীল অর্থনীতির দেশ। গোলাম নবী আজাদ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জন্মশত বার্ষিকী পালন সংক্রান্ত কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। চিঠিতে ইন্দিরা গান্ধীর ওপর একটি লেখা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বর্ণনা দিয়ে কংগ্রেস নেতা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত অভিন্ন ইতিহাসের অংশীদার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সঙ্গে দেশের এবং দলের সঙ্গে দলের চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করা। তিনি বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ সময় শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, কাজী নাবিল আহমেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন। এর আগে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন চীনের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ও সে দেশের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ঝেং জিয়াওসং। ঢাকা-বেজিং বিদ্যমান সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে চীনা প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত দলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। চীনা প্রেসিডেন্টের সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শি জিনপিং ঢাকা সফর করে খুবই অভিভূত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর ফলে দু’দেশের সম্পর্ক সার্বিক ও কৌশলগত সহযোগিতার এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকালে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে ঝেং জিয়াওসং বলেন, এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তিনি বলেন, আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি গত অর্থবছরে বাংলাদেশের ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি অর্জনের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, এতে প্রমাণিত -আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ চমৎকার সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সাক্ষাতকালে ঝেং জিয়াওসং চীনা প্রেসিডেন্টের একটি চিঠি শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক সফরে সহযোগিতার এক নতুন দুয়ার খুলে গেছে। দলের সঙ্গে দলের সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে শীঘ্রই দু’দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় হবে বলে শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দ্রুত এগুলোর বাস্তবায়ন চায়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, চীনের উন্নয়নের ব্যাপারে জাতির জনক যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা সত্যে পরিণত হয়েছে। এ সময় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডাঃ দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন।
×