ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে শৃঙ্খলা কমিটির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি মাদকের কারবার

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৯ অক্টোবর ২০১৬

যশোরে শৃঙ্খলা কমিটির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি মাদকের কারবার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে শান্তি শৃঙ্খলা কমিটির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের অভিযোগ উঠেছে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জায়গা করে নিয়েছে এসব কমিটিতে। প্রশাসনকে বোকা বানিয়ে তারা দিনের পর দিন নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। এ নিয়ে জনসাধারণের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে চাঁদা উঠানোর বিষয়ে কিছুই জানেন না এ কমিটি গঠনের মূল ভূমিকায় থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা। বরং তারা বলছে ওইসব কমিটি গঠনের বিষয়েও তাদের কোন ভূমিকা নেই। স্থানীয়রা শুধু তাদের বিষয়টি অবহিত করেন। ফলে তারা কি করছে এর দায় পুলিশের নয়। সূত্র জানায়, সমাজ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, নৈরাজ্য একা পুলিশের পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সমাজকে সন্ত্রাসমুক্ত করার লক্ষ্যে যশোরে ২০১৩ সালের শেষের দিকে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। এ কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা পুলিশ সুপার। আর প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে একটি করে পৌর কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম শান্তিশৃঙ্খলা কমিটি। ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটির আওতায় ১০টি করে সাব-কমিটি গঠন করা হয়। সব মিলিয়ে যশোর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় অর্ধশত শান্তিশৃঙ্খলা কমিটি রয়েছে। যার পরিচালনায় রয়েছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ উঠেছে, শান্তিশৃঙ্খলার নামে প্রতিটি এলাকায় চলছে চাঁদাবাজি ও মাদক বিক্রি। বিশেষ করে মাদক বিক্রেতারা নিজেদের আড়াল করতে এসব কমিটিতে নাম লিখিয়েছেন। ফলে পুলিশকে বোকা বানিয়ে তারা অবাধে মাদক বিক্রি করে যাচ্ছে। শহরের রায়পাড়ায় মাদকদ্রব্য কেনাবেচার জন্য শান্তিশৃঙ্খলা কমিটিতে নাম দিয়েছেন এমন তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে মশিউর রহমান খোকন রায়পাড়া মাদ্ররাসা শান্তিশৃঙ্খলা কমিটির নেতা। অথচ তার শেল্টারে তার শ্যালক বাদশা ও বাদশার স্ত্রী রানী মাদক বিক্রি করছে। একই এলাকার জালালের স্ত্রী খুরশিদা, ছোট মিন্টুর বউ নূরী বেগম, মাদ্রাসা রোডের চাঁন গাজী, ছোট ও ছোটর ভাই সেকেন্দার মাদক বিক্রি করছে। অভিযোগ রয়েছে এদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নিচ্ছে মশিউর। আর সে সুবাদে তারা নিরাপদে এ বার বার করে যাচ্ছে। রায়পাড়ায় পূর্ব শান্তিশৃঙ্খলা কমিটির সহসভাপতি আরশাদ। তার ছত্রছায়ায় এলাকার অনেকে মাদক বিক্রি করছে। এদিকে একই এলাকার সাবেক সেনাসদস্য সার্জেন্ট বাবুর বাড়িতে যেসব ভাড়াটিয়া বসবাস করে তারা সকলেই শান্তিশৃঙ্খলা কমিটির দোহাই দিয়ে মাদক বিক্রি করছে। সার-গোডাউন এলাকার সাবকমিটির সভাপতি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা টিএসআই আলী। ওই কমিটিতেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আব্দুর রব পকেটমারের ছেলে শহিদুল, যুগ্ম সম্পাদক মফিজুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মামুন। এদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও রয়েছে। তাছাড়া এ তিনজনের মা আলোচিত মাদক বিক্রেতা বুদ্দি বুড়ি। কিন্তু কি করে এসব বিতর্কিত লোক শান্তিশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য হয় সেই প্রশ্ন এলাকাবাসীর। শুধু মাদক নয়। রীতিমতো শান্তিশৃঙ্খলা কমিটিকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করছে সদস্যরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি কমিটির আওতায় বসবাসরতরা প্রতিদিন সিডিউল করে নাইট ডিউটি দেবে। না দিতে পারলে নির্ধারিত অর্থ দেবে। যা দিয়ে অন্য লোককে টাকার বিনিময়ে ওই ডিউটি করিয়ে নেয়া হবে। তবে একজন বাড়ির মালিক নির্ধারিত ডিউটি দেবে। কোন ভাড়াটিয়া ডিউটি দেবে না বা কোন অর্থ দিবে না। কিন্তু নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রতিটি বাড়ির মালিক থেকে শুরু করে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকেও চাঁদা তোলা হচ্ছে। ১শ’ থেকে শুরু করে ২শ’ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যার পুরোটাই কমিটির লোকজন ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ মোঃ আবু সরোয়ার বলেন, পুলিশ কোন শান্তিশৃঙ্খলা কমিটি করে দেয়নি। স্থানীয়রা নিজেরাই কমিটি গঠন করে বিষয়টি আমাদের অবহিত করেন মাত্র। ফলে তারা চাঁদা আদায়সহ অন্য কোন কাজ করলে তার দায় পুলিশের নয়।
×