ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্কে প্রধান বিচারপতি সিনহা

বিচার বিভাগ এক শ’ ভাগ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

বিচার বিভাগ এক শ’ ভাগ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছে

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে ॥ ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার ও বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, ‘আগে সকলেই বিচার বিভাগকে সরকারের অঙ্গ হিসেবে মনে করতেন। প্রকৃত অর্থে বিচার বিভাগ হচ্ছে রাষ্ট্রের অঙ্গ এবং এখন হান্ড্রেড পার্সেন্ট স্বাধীনতা নিয়ে বিচার বিভাগ কাজ করছে।’ ১৬ অক্টোবর রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল) নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ায় ক্লাব সনমে প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা উপলক্ষে এ আলোচনার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশী-আমেরিকান আইনজীবীদের সংগঠন “বাংলাদেশ ল’ সোসাইটি।” আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোর্শেদা জামান এতে সভাপতিত্ব করেন এবং পরিচালনা করেন সংগঠনের নেতা এ্যাডভোকেট শাহ বখতিয়ার। শুরুতে ল’ সোসাইটির সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট এমএ ওয়াহিদের নেতৃত্বে অইনজীবীরা প্রধান অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ ল’ সোসাইটির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন এ্যাডভোকেট মোর্শেদা জামান। উল্লেখ্য, এ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণেই প্রধান বিচারপতি সংক্ষিপ্ত এক সফরে নিউইয়র্কে এসেছেন ১৫ অক্টোবর শনিবার সকালে। এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ বিচারপতি আবুল তারেক, বিচারপতি এমআর হাসান, সংসদ সদস্য ওয়ারেস হাসান খান বেলাল, মার্কিন এ্যাটর্নি অশোক কর্মকার, এ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান প্রমুখ। বিষয়ভিত্তিক এ আলোচনায় প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী সরকার গঠন ও পরিবর্তনের ভিত্তি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন বলেই মার্শাল ল’ আর কখনই বাংলাদেশের মানুষের ওপর চেপে বসার সুযোগ পাবে না। বাংলাদেশের আইন বিভাগ মার্শাল ল’কে চিরতরে কবর দিতে সক্ষম হয়েছে।’ প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, ‘বিভিন্ন সেক্টরের মতো বিচার বিভাগেও কিছু দুর্নীতি এখনও রয়েছে। এটি অস্বীকারের উপায় নেই। তবে তার অবসানে আমরা সকলে আন্তরিক অর্থেই সচেষ্ট রয়েছি।’ এস কে সিনহা বলেন, ‘বিচারের জট খুলতে আমি শুরু থেকেই তৎপর। সে কারণে অনেকটা কমেছে। ক্রমান্বয়ে বিচার নিয়ে বিলম্ব ঘটার বিড়ম্বনা একেবারেই কমে যাবে। বিচার বিভাগ যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট ভিত্তি তৈরি হয়েছে এখন। সুতরাং পরবর্তীতে যারা কাজ করবেন, তাদের বড় ধরনের সমস্যা হবে না। এখন থেকে সবকিছু আইন অনুযায়ী চালাতেও কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।’ অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এস কে সিনহা বলেন, ‘আমার বিচার বিভাগ এখন হান্ড্রেড পার্সেন্ট স্বাধীন। সরকারের কোনপর্যায় থেকেই কোন ধরনের হস্তক্ষেপের ঘটনা নেই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধসহ স্পর্শকাতর সব মামলা পরিচালিত হচ্ছে আইন অনুযায়ী। রাজনৈতিক কারণে অনেকে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের অবতারণা করছেন। যদিও সেই রাজনীতিকরাও পুরো সুবিধা পাচ্ছেন নিজেদের মামলাতেও। এটি সর্বজনবিদিত। আর এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষায় বিচার বিভাগ তার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এখন একযোগে কাজ করছে।’ বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর সহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখন কোন কিছুই চেপে রাখা সম্ভব নয়। মিডিয়া সোচ্চার থাকায় আমরাও সঠিকভাবে কাজে তৃপ্তি পাচ্ছি।’ সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে এ্যাডভোকেট মোর্শেদা জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর আড়ালে জ্বালাও-পোড়াওসহ জঙ্গীবাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব পথ বেয়েই বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি ঘটছে।’ মোর্শেদা জামান বলেন, ‘মানবতা এবং গণতন্ত্রে আদৌ বিশ্বাসী নয়Ñ এমন কতক মহলের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দেশপ্রেমিক প্রতিটি প্রবাসীকে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।’ মুক্ত আলোচনা আয়োজনে সার্বিক সমন্বয় করছেন এ্যাটর্নি অশোক কর্মকার, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বাবুল, এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুধীজনের মধ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করেন ঠিকানার প্রেসিডেন্ট ও সিইও সাঈদ-উর রব এবং চেয়ারম্যান সাবেক এমপি এমএম শাহীন। প্রধান বিচারপতি স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় শনিবার রাত) জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণের পর বিশিষ্ট প্রবাসীরা তাকে স্বাগত জানান। এ সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, কন্সাল জেনারেল শামীম আহসানসহ বাংলাদেশ ল’ সোসাইটির নেতৃবৃন্দ এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন। ১৯ অক্টোবর তিনি ঢাকার উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগের আগে বস্টনে তার স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হবেন।
×