ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মাইক্রোবাস হিসেবে রুট পারমিট নিয়ে চলছে বেশিরভাগ এ্যাম্বুলেন্স

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৬

মাইক্রোবাস হিসেবে রুট পারমিট নিয়ে চলছে বেশিরভাগ এ্যাম্বুলেন্স

নিখিল মানখিন ॥ রুট পারমিট দিয়েই সাধারণ মাইক্রোবাস বা জীপ হয়ে যাচ্ছে ‘এ্যাম্বুলেন্স’। এ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসেবার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু দেশের এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোন যোগসূত্র নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিতে হয় না কোন অনুমোদন। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) লাইসেন্স নিয়ে লোক দেখানো কিছু মেডিক্যাল যন্ত্রাংশ সংযোজন করে ‘এ্যাম্বুলেন্স’ পরিচয় দিয়ে ঠেলে দেয়া হয় রাস্তায়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, দেশে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নীতিমালা নেই। দেশের এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসাও নেই সরকারী নিয়ন্ত্রণে। এ সুযোগে আধুনিক চিকিৎসা উপকরণ ছাড়াই শত শত এ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় নামছে। এ্যাম্বুলেন্স বিষয়ে সাধারণ মানুষের অনভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অবাধে চলছে রমরমা এ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য। অথচ আধুনিক চিকিৎসা উপকরণে সমৃদ্ধ একটি এ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহনকালেও চিকিৎসাসেবা দেয়া যায়। এতে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটা কমে আসে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকে ব্যবহৃত সরকারী বা বেসরকারী বেশির ভাগ এ্যাম্বুলেন্সেই এসব সুবিধা নেই। ফলে হাসপাতালে আনার সময় মারা যায় অনেক রোগী। রোগীকে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন এ্যাম্বুলেন্স মালিকরা। তবে সম্প্রতি ‘এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নীতিমালা’ এর একটি খসড়া তৈরি করেছে সরকার। আর দেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এ্যাম্বুলেন্সের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সরকারী হাসপাতালের অনেক কর্মচারীর বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশের এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ রবিবার জনকণ্ঠকে জানান, এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সঙ্গে রোগীর জীবন-মৃত্যুর সম্পর্ক জড়িত। এমন মানবিক বিষয়টি নিয়ে কেউ ইচ্ছেমতো অমানবিক কাজ করে যাবে, তা হতে দেয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর বেশ সতর্ক। এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নীতিমালার একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। এ্যাম্বুলেন্স মালিকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি আলোচনাও হয়েছে। এ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা, প্রতিষ্ঠানের নাম ও গাড়ির নম্বর জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে এ বছরের শুরুতেই একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার এ্যাম্বুলেন্সের তালিকা জমা পড়েছে। মহাপরিচালক আরও জানান, অতি পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা সম্পন্ন করার পর ব্যক্তিমালিকানায় চালিত এ্যাম্বুলেন্সগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকার বাইরে এবং মানহীন এ্যাম্বুলেন্স রাস্তায় নামতে দেয়া হবে না বলে জানান মহাপরিচালক। রাজধানীর এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা ॥ শুধু ঢাকার অভ্যন্তরে সার্ভিস দিয়ে থাকে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ হৃদরোগ হাসপাতাল এ্যাম্বুলেন্স, ঢাকা মেডিক্যাল এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, আদ-দ্বীন এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, মেডিনোভা মেডিক্যাল এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। আর ঢাকা মহানগর এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে ২শ’টি প্রতিষ্ঠান এবং তাদের মোট এ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। স্কয়ার হাসপাতাল এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যান (জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল), কার্ডিয়াক এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, আলিফ এ্যাম্বুলেন্স ও আল-মারকাজুল ইসলাম এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্সগুলো ঢাকাসহ সারাদেশে রোগী ও লাশ পরিবহনে সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া নামে-বেনামে রাজধানীজুড়ে ভাড়ায় চলে শত শত এ্যাম্বুলেন্স, সেগুলোর তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই। এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বা নির্ধারিত ফোন নম্বরে ফোন করে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা যায়। ফোন করে ঠিকানা জানালে এ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যায়। যেকোন সময়ই এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা যায়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো রোগীদের সেবায় ২৪ ঘণ্টাই সার্ভিস দিয়ে থাকে। হরতাল, অবরোধ ও অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনগুলোতে ভাড়ার হারের কোন তারতম্য হয় না। হৃদরোগ হাসপাতাল এ্যাম্বুলেন্স ঢাকার মধ্যে ব্যবহারে এসি গাড়ির জন্য ৫০০ টাকা ও নন-এসি গাড়ির জন্য ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানের প্রতি ঘণ্টায় চার্জ দিতে হয়। ঢাকার মধ্যে প্রতি ঘণ্টার চার্জ ১ হাজার টাকা, ঢাকার বাইরের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ৪৫ টাকা হারে ভাড়া দিতে হয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গন্তব্য থেকে ঢাকায় ফিরে আসার ভাড়াও পরিশোধ করতে হয়। প্রতি ঘণ্টা বিলম্বের জন্য ১ হাজার টাকা বিলম্ব ফি দিতে হয়। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও ঢাকা মেডিক্যাল এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে ঢাকার মধ্যে ৩০ কিলোমিটারের জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০০ টাকা। এর পর প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১০ টাকা হারে ভাড়া দিতে হয়। আল মারকাজুল ইসলাম এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ভাড়ার নির্ধারিত চার্জ নেই। এক্ষেত্রে সেবাগ্রহণকারীরা বিবেচনা করে ভাড়া দিয়ে থাকেন। আদ-দ্বীন এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে সেবার জন্য ঢাকা মহানগরীর মধ্যে ২৬০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া গরিব রোগীদের ফ্রি পরিবহনে সহায়তা করে থাকে। কার্ডিয়াক এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক রোগীদের শতকরা ১০ ভাগ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ব্রিজ ও ফেরি ভাড়া রোগীর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হয়। বুকিংয়ের সময় শতকরা ২৫ ভাগ ও যাত্রার পূর্বে বাকি শতকরা ৭৫ ভাগ পরিশোধ করতে হয়। যাত্রা বাতিল করলে বুকিংয়ের শতকরা ২৫ থেকে ১৫ ভাগ কেটে রাখা হয়। আর আলিফ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে ঢাকার ভেতরে এসি এ্যাম্বুলেন্স দূরত্ব অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা এবং নন-এসি সার্ভিসে ৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। আর ঢাকার বাইরে দূরত্বভেদে এসি সার্ভিসে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা এবং নন-এসি সার্ভিসে ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা ভাড়া নেয়া হয়। বিআরটিএর লাইসেন্স নিলেই হয়ে যাচ্ছে এ্যাম্বুলেন্স ॥ এ্যাম্বুলেন্স শব্দটির সঙ্গে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়টি জড়িত থাকলেও এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনাকারীদের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোন যোগসূত্র নেই। তবে চলতি বছরের শুরুতে দেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে এ্যাম্বুলেন্সের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই প্রেক্ষিতে কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা ও গাড়ি নম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তারেকুল ইসলাম মুকুল জনকণ্ঠকে জানান, এ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে রয়েছে ৬০টি এ্যাম্বুলেন্স। সবই নন-এসি। প্রতিটি গাড়ির জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছ থেকে লাইসেন্স নেয়া রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশের প্রেক্ষিতে এ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা ও গাড়ির নম্বর জমা দিয়েছি বলে জানান তারেকুল ইসলাম মুকুল। এদিকে ২শ’টি এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে উঠেছে ঢাকা মহানগর এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমবায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে চলছে এ সমিতি। সমিতির বর্তমান সভাপতি ও আলিফ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মালিক মোঃ মমিন আলী জনকণ্ঠকে জানান, সমিতির তত্ত্বাবধানে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন অনুমোদন নিতে হয়নি। শুধু গাড়িগুলোর জন্য বিআরটিএর লাইসেন্স নেয়া হয়েছে। তাদের কাছে এসি ও নন-এসি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তবে এসি এ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যাই বেশি। তারাও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে এ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা ও গাড়িগুলোর নম্বর পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার আলিফ এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে বর্তমানে রয়েছে ১৪টি এ্যাম্বুলেন্স। তিনি অভিযোগ করেন, ইদানীং ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। সরকারী হাসপাতালের কর্মচারীরা এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা দখলে নিয়েছে। হাসপাতালের সামনে অন্যসব এ্যাম্বুলেন্স ভিড়তে দেয় না। নীতিমালা না থাকায় সরকারী হাসপাতালের কর্মচারীরা এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা দেদার চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের তুলনায় তাদের এ্যাম্বুলেন্সগুলোর মান অনেক খারাপ। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমরা সব সময় আমাদের এ্যাম্বুলেন্সগুলো মানসম্মত করে রাখি বলে দাবি করেন মোঃ মমিন আলী। রোগীবাহী একটি এ্যাম্বুলেন্সে যা যা থাকা দরকার ॥ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, এ্যাম্বুলেন্স কখনও প্রাইভেটকার বা যাত্রীবাহী গাড়ি হতে পারে না। এ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে রোগীর একটা যোগসূত্র রয়েছে। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছার আগপর্যন্ত রোগীকে সাময়িক কিছু চিকিৎসাসেবা দেয়ার দায়িত্বও এ্যাম্বুলেন্সের ওপর বর্তায়। আর এ্যাম্বুলেন্স মানে শুধু সুন্দর গাড়ি (কার) হলেই চলবে না। এখানে থাকবে আইসিইউর প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা উপকরণ। প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধও থাকতে হবে। আর এসব সুবিধা থাকলেই একজন মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে আনার সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এ দেশে জরুরী চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েই এখন পর্যন্ত কোন নীতিমালা নেই। আর এটা না থাকায় এ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় কোন নীতিমালা হচ্ছে না। এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে টাকাই মুখ্য হয়ে ওঠে। এ সুযোগে এখন রেন্ট-এ-কারের মতোই এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা চলছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি এ্যান্ড ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডাঃ এইচ এ নাজমুল হাকিম জানান, অনেক সময় রোগীকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। হাসপাতাল ও রোগীর অবস্থানের দূরত্ব বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল সার্ভিসের মধ্যে আগে হচ্ছে প্রি-হসপিটাল কেয়ার। এরপর হসপিটাল কেয়ার। রোগীকে হাসপাতালে প্রবেশ করানোর আগের চিকিৎসাটুকু খুবই জরুরী। এটার অভাবে বছরে অনেক লোকের মৃত্যু ঘটে। তিনি আরও বলেন, একটি এ্যাম্বুলেন্সে ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন, কার্ডিয়াক মনিটর, ইমার্জেন্সি ড্রাগসহ অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণসহ আইসিইউ (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) থাকা জরুরী। কিন্তু দেশের কিছু এ্যাম্বুলেন্সে এসব সুবিধা থাকলেও বেশির ভাগ এ্যাম্বুলেন্সেই নেই বলে জানান ডাঃ এইচ এ নাজমুল হাকিম। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর আশপাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর সামনের রাস্তায় পার্কিং করানো রয়েছে অনেক এ্যাম্বুলেন্স। সরকারী হাসপাতালগুলোর সামনে এ্যাম্বুলেন্সের ভিড় যেন একটু বেশি। রবিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের গেটের কাছে মূল রাস্তায় পার্কিং করানো এ্যাম্বুলেন্সগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘সুফিয়া এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।’ এ্যাম্বুলেন্সের সামনে যেতেই দৌড়ে এলেন এক লোক। মোঃ সামাদ মিয়া (৩৪) তার নাম। তিনি তিনটি এ্যাম্বুলেন্সের মালিক। সুফিয়া নামে কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান নেই। ব্যবসার সুবিধার্থেই এ্যাম্বুলেন্সটির নাম রাখা হয়েছে ‘সুফিয়া এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।’ সামাদ মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, তিনটি এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি তিনি নিজে চালান। অন্য দুটির জন্য ড্রাইভার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকা ও গ্রামের ঠিকানা জানতে চাইলে এড়িয়ে গেলেন সামাদ মিয়া। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভাররা জনকণ্ঠকে জানান, তারা একেকটি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রাপ্ত এ্যাম্বুলেন্স চালক। দৈনিক ভাড়াপ্রতি একটি কমিশনও তাদের প্রদান করা হয়ে থাকে। সরকারী হাসপাতালগুলোর সামনেই তারা বেশি অবস্থান করেন। অনেকে কল করে তাদের নিয়ে যান। আর হাসপাতালের ভেতরে তাদের সোর্স অবস্থান করেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক থাকে। হাসপাতালের কোন রোগী অন্যত্র যাওয়ার প্রয়োজন হলেই সোর্স বা কর্মচারীরা তাদের ডাক দেন। এভাবে তারা রোগী সংগ্রহ করেন। কোন রোগীর মৃত্যু ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তারা খবর পেয়ে যান বলে জানান এ্যাম্বুলেন্স চালকরা। তারা অভিযোগ করেন, এখন সরকারী হাসপাতালের কর্মচারীরাও এ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের সামনে অবস্থান করতে তাদের কাছ থেকে হাসপাতালের কর্মচারীরা চাঁদা দাবি করেন বলে এ্যাম্বুলেন্স চালকরা অভিযোগ করেন। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, হাসপাতাল ক্যাম্পাসের ভেতরে-বাইরে ভিড় করে রয়েছে ৪০ থেকে ৫০টি এ্যাম্বুলেন্স। এগুলোর বেশির ভাগই সাধারণ মাইক্রোবাসের উপরে সাইরেন-বাতি, ভেতরে খুবই সাধারণ মানের স্ট্রেচার। গায়ে কেবল বড় করে এ্যাম্বুলেন্স লেখা, দেয়া রয়েছে ফোন বা মোবাইল নম্বর। কোনটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে, কোনটিতে নেই। বেশির ভাগেই নেই অক্সিজেন ইউনিট। অনেকটির গায়ে বিভিন্ন হাসপাতালের নাম লেখা। তবে প্রকৃতপক্ষে এগুলো কোন হাসপাতালের নয় বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় যত প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স থাকে, ওই হাসপাতালেরই ২০ থেকে ৩০ জন কর্মচারী ওই এ্যাম্বুলেন্সগুলোর মালিকানার সঙ্গে যুক্ত। কেউ কেউ সরাসরি নিজে আবার কেউ লোক রেখে এ্যাম্বুলেন্স তদারকি করেন। আবার কারও ভাই বা আত্মীয়স্বজন দিয়ে এগুলো পরিচালনা করিয়ে থাকেন। এভাবে দেশজুড়েই চলছে এ্যাম্বুলেন্সের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবসা।
×