ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের বাজার চীনা পণ্যের দখলে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশের বাজার চীনা পণ্যের দখলে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ও চীনের ব্যবসায়িক বিনিয়োগের মোট পরিমাণ ছিল গত বছর ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশে চীনের পণ্য রফতানির মোট পরিমাণ প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার, সেখানে বাংলাদেশ থেকে চীনে পণ্য রফতানির হার এক বিলিয়নেরও কম। অর্থাৎ বাংলাদেশের বাজারে চীনা পণ্যের ব্যবসা এতটাই রমরমা যে তাকে মোটামুটিভাবে চীনের দখলে বললেও ভুল হবে না। বাংলাদেশ চীনের বাজার তো ধরতে পারছেই না, নিজেদের দেশেও তারা চীনা পণ্যের তুলনায় বহু অংশে পিছিয়ে আছে, কিন্তু কেন? মোবাইল ফোনসেট ও এ সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রি হয় যেসব দোকানে ছুটির দিনের দুপুরে সেখানে ছিল বেশ ব্যস্ততা। সেখানে মোবাইল ফোনসেট ও সেটের কাভার কিনতে এসেছেন কেউ। কেউ কিনছেন পেনড্রাইভ। এমনই একজন মোবাইল সেটের গ্লাস প্রটেক্টর কিনলেন। দোকানিরা জানান, এখানকার প্রোডাক্ট বেশিরভাগই চীনের তৈরি। একজন বিক্রেতা জানান, ‘ক্রেতারা এ ধরনের জিনিসের পেছনে খুব একটা অর্থ ব্যয় করতে চান না। তাই চীনের পণ্যই চলে বেশি।’ শুধু তাই নয়। আসবাবপত্রের বাজারের একটি বড় অংশই চীনের পণ্যের দখলে। ঢাকার পান্থপথ এলাকার আসবাবপত্রের দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেল একই চিত্র। এস আর ফরেন ফার্নিচারের বিক্রয়কর্মী সৈয়দ নুর বলেন, ‘এখানে আমাদের যা কিছু আছে অফিস ফার্নিচার, ডাইনিং টেবিল, সেন্টার টেবিল, টিভি ট্রলি, কাউন্টার টেবিল এসব আসবাবই চীনের তৈরি।’ বাংলাদেশে এসব আসবাব তৈরি করা যায় কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু কিছু হয় কিন্তু ফিনিশিং ভাল হয় না।’ বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে আনা হয় তার তুলনায় খুব সামান্যই রফতানি হয় চীনে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, আমদানি প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বিপরীতে রফতানি এক বিলিয়নও নয়। অথচ বাংলাদেশের বাজার চীনের পণ্যে সয়লাব বললে ভুল হবে না। আসবাব থেকে প্রযুক্তি পণ্য, পোশাক থেকে গহনা, শিশুদের খেলনা থেকে জুতা সবকিছুই চীনের বাজার থেকে চলে আসছে বাংলাদেশের বাজারে। পোশাকের বাজারেও যেসব বিদেশী কাপড়ের পোশাক বেশি বিক্রি হয় তার মধ্যে চীনের পোশাকেরও রয়েছে আধিপত্য। মূলত চাকচিক্যময় ও নক্সাদার হওয়ায় এগুলোর কদর বেশি। কোন কোন বিক্রেতা জানান, এসব পোশাকের ফেব্রিক্সও তুলনামূলক ভাল। এছাড়া মেয়েদের ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের জুয়েলারিও আসছে চীন থেকে। থাইল্যান্ড ও ভারতের সাথেই চীনের এসব পণ্যের প্রতিযোগিতা । সেখানে দেশীয় পণ্য এগোতে পারছে না খুব একটা। এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব। সেই সাথে অবকাঠামোগত অসুবিধার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। যার কারণে এ বিশাল ভারসাম্যহীনতা। তিনি বলেন, চীনে এখন শ্রমের মূল্য বাড়ছে। ফলে তারা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে। বাংলাদেশের এ সুযোগটি কাজে লাগানো দরকার। নিজ দেশের সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি পোশাক পণ্য উৎপাদন থেকে সরে আসছে চীন। সেখানেও বাংলাদেশের সামনে সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন মুস্তাফিজুর রহমান। আর যেহেতু বাংলাদেশের মোটামুটি সব পণ্যেই চীন শূন্য শুল্ক সুবিধা দিয়ে আসছে, তাই চামড়াজাত শিল্প এবং জুতার বাজার হতে পারে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য চীনে একটি লাভজনক ক্ষেত্র।
×