ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর নিরাপত্তায় যথাযথ মর্যাদায় পালিত হলো পবিত্র আশুরা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

কঠোর নিরাপত্তায় যথাযথ মর্যাদায় পালিত হলো পবিত্র আশুরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যথাযথ মর্যাদায় সারাদেশে পালিত হয়েছে পবিত্র আশুরা। গত বুধবার এ উপলক্ষে রাজধানীতে শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পুরান ঢাকার হোসেনী দালান থেকে বের হয়ে বকশীবাজার, উর্দুরোড, লালবাগ, আজিমপুর এতিমখানা, আজিমপুর চৌরাস্তা, নিউমার্কেট হয়ে ধানম-ি ২ নম্বর সড়কের লেকেরধারে অবস্থিত অস্থায়ী কারবালায় গিয়ে শেষ হয়। আশুরা উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোক হোসেনী দালান প্রাঙ্গণে হাজির হয়ে মিছিলে শরিক হয়। সেখান থেকে তারা ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলে মিছিলে শরিক হয়। এ সময় মিছিলে অংশ নেয়া অনেকের মাথায় শোকের কালো কাপড় বাঁধা ছিল। এছাড়া হাতে জরি লাগানো সবুজ নিশান নিয়ে মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায়। কারবালার ঘটনা স্মরণে কালো চাঁদোয়ার নিচে বহন করা হয় ইমাম হোসেনের (রা.) প্রতীকী কফিন। মিছিলের সামনে ছিল ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়া। তবে অন্যান্য বছর কারাবালার রক্তপাতের স্মরণে অনেকে মিছিলের মধ্যে দা, বল্লম, ছুরি বা শেকল দিয়ে আঘাত করে নিজের দেহ থেকে রক্ত ঝরালেও এ বছর ওই ধরনের অস্ত্র বা দীর্ঘ লাঠি বহন ছিল নিষিদ্ধ। মিছিলে যাতে কোন প্রকার নাশকতার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে পুলিশ ছিল সদাসতর্ক। মিছিল যে এলাকা দিয়ে প্রদক্ষিণ করে, সে এলাকায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণও করা হয়। রাস্তার উভয়পাশে ভবনের ছাদে পুলিশের নিরাপত্তা প্রহরা বসানো হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশর পক্ষ থেকে বলা হয় গতবারের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই এবারে তাজিয়া মিছিল ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে নিরাপত্তার কারণে কোন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট হয়নি। হোসেনী দালান ছাড়াও রাজধানীর ফার্মগেট, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। তাজিয়া মিছিলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, গত বছরের ঘটনা মাথায় রেখেই এ বছর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। শুধু শিয়া সম্প্রদায়ই নয়, মুসলিম ধর্মীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও যথাযথ মর্যাদায় আশুরা পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, কোরানখানি ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয় বিভিন্নস্থানে। বিভিন্ন মসজিদে আলোচনা সভায় আশুরার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় শিরনি বিতরণ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও রোজা রাখার মাধ্যমে আশুরার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে দেখা গেছে অনেককে। বুধবার ছিল আরবী হিজরীর হিসাব অনুযায়ী ১০ মহরম। এদিন ইসলামী পরিভাষায় আশুরা হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে মানব সৃষ্টিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এদিনেই হয়েছে। এছাড়া এদিনেই পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কথাও উল্লেখ রয়েছে ধর্মীয় গ্রন্থে। এ কারণে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে দিনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে কারবালার ঐতিহাসিক বিষাদময় ঘটনা সবার মনে রেখাপাত করে। তাই এই ঘটনা স্মরণ করেই আশুরার আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে দেখা যায় মুসলমানদের। শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ১০ মহরম শোকের দিন হিসেবে তাজিয়া মিছিল, মাতম করাসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে দেখা যায়। বাংলাদেশের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বেও দিনটিকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। হিজরী ৬১তম বর্ষের (৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সকলকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা যোগায়। এ ছাড়া ১০ মহরম আশুরার দিন মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করা ছাড়াও এদিন হযরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকু- থেকে রক্ষা পেয়েছেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। এ রকম অসংখ্য ঘটনায় তাৎপর্যম-িত এ দিনটি মুসলিম সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করে থাকে।
×