ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পিইসি-জেএসসি

পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধের তথ্য ঠিক নয় ॥ গণশিক্ষা সচিব

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

পরীক্ষার সময়  ফেসবুক বন্ধের তথ্য ঠিক  নয় ॥ গণশিক্ষা  সচিব

বিভাষ বাড়ৈ ॥ আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এবার ‘সর্ববৃহৎ এ দুই পাবলিক পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়’- এমন একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে এ তথ্য ঠিক নয়। মন্ত্রণালয় ফেসবুক বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধের সিদ্ধান্তের এ খবর ঠিক নয় দাবি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান ও পরীক্ষা কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন মাধ্যমে পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধের খবর প্রকাশ হচ্ছিল। গণমাধ্যমে পরীক্ষা কমিটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে তা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর থেকেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সমালোচনার মুখে পড়ে। তবে এ সংবাদ প্রকাশ হলেও মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্যও দেয়নি। তবে নানান বিতর্কের পর বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান বলেছেন, পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী (জেএসসি) পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধ রাখার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমন কোন মিটিং বা সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে সে রকম কিছু যদি হয়েও থাকে, তাহলে আমরা সে সিদ্ধান্ত বাতিল করব।’ মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১১ আগস্ট সমাপনী পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি বিষয়ক বৈঠকে পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধ রাখার বিষয়ে কেউ কেউ সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব হুমায়ুন খালিদ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যের একটি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। সমাপনী পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি বিষয়ক বৈঠকের কার্যবিবরণী ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রশ্ন ফাঁসরোধ বিষয়ে বলা হয়েছেÑ পরীক্ষা চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধ, কোচিং সেন্টারে নজরদারি ও ফটোকপিয়ারের দোকান বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। অনেকে কোচিং সেন্টার বন্ধের বিষয়ে পরামর্শ দেন। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক বন্ধ রাখার বিষয়টি ভাবার দাবি তোলেন অনেকে। কোচিং সেন্টারগুলোয় নজরদারি করার জন্য ডিআইজি, এসবি বরাবর চিঠি দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। এমন আলোচনা হলেও শেষপর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখার বিষয়টি ঠিক হবে না বলে মত দেন কেউ কেউ। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে নড়েচড়ে বসে মন্ত্রণালয়। কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) নজরুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে বলেন, দু’একটি গণমাধ্যমে বলা হয়েছেÑ আমরা নাকি ফেসবুক বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ খবর তো ঠিক নয়। এমন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। একটি পত্রিকার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকালে আমি পত্রিকাটি দেখে অবাক হয়েছি। এটা কেন লিখল। তাহলে বেশ কয়েক দিন ধরে খবর প্রকাশ হলেও কেন মন্ত্রণালয় বিষয়টি পরিষ্কার না করে নীরব ছিলÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হ্যাঁ, এটা বলা দরকার ছিল। কিন্তু বিষয়টি না জেনে কেন লেখা হলো? মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললেই বিভ্রান্তি থাকত না বলে দাবি এই কর্মকর্তার। নজরুল ইসলাম খান বলেন, এবারই প্রথমবারের মতো এ দুই পরীক্ষাই নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের পর এবারই প্রথম সর্ববৃহৎ দুই পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানা গেছে, পরীক্ষার সময় যাতে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে কেউ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে না পরে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে চিঠি দিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধির সুপারিশ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে কোচিং সেন্টারগুলোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকবে। উল্লেখ্য, আগামী ১ নবেম্বর থেকে অষ্টম শ্রেণীর জেএসসি-জেডিসি এবং ২০ নবেম্বর থেকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেছেন, পরীক্ষার সব প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ হবে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ১ নবেম্বর। চলবে ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত দিনে সকাল দশটা থেকে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষায় সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। জেএসসির সময়সূচী ॥ ১ নবেম্বর জেএসসিতে বাংলা প্রথমপত্র, ২ নবেম্বর বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ৩ নবেম্বর ইংরেজী প্রথমপত্র, ৬ নবেম্বর ইংরেজী দ্বিতীয়পত্র, ৭ নবেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, ৮ নবেম্বর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ৯ নবেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ১০ নবেম্বর শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ১৩ নবেম্বর গণিত, ১৪ নবেম্বর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা, ১৫ নবেম্বর বিজ্ঞান, ১৬ নবেম্বর চারু ও কারুকলা এবং ১৭ নবেম্বর কৃষি/গার্হস্থ্য বিজ্ঞান। জেডিসির সময়সূচী ॥ ১ নবেম্বর কুরআন মাজীদ ও তাজবীদ, ২ নবেম্বর আকাঈদ ও ফিকহ্, ৩ নবেম্বর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ৬ নবেম্বর ইংরেজী প্রথমপত্র, ৭ নবেম্বর ইংরেজী দ্বিতীয়পত্র, ৮ নবেম্বর বাংলা প্রথমপত্র, ৯ নবেম্বর বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ১০ নবেম্বর কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা বা শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ১২ নবেম্বর গণিত, ১৩ নবেম্বর আরবি প্রথমপত্র, ১৪ নবেম্বর আরবি দ্বিতীয়পত্র, ১৫ নবেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ১৬ নবেম্বর বিজ্ঞান, ১৭ নবেম্বর কৃষি/গার্হস্থ্য বিজ্ঞান/গার্হস্থ্য অর্থনীতি। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনীর সময়সূচী ॥ প্রাথমিক সমাপনীতে ২০ নবেম্বর ইংরেজী, ২১ নবেম্বর বাংলা, ২২ নবেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২৩ নবেম্বর প্রাথমিক বিজ্ঞান, ২৪ নবেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা ও ২৭ নবেম্বর গণিত পরীক্ষা হবে। ইবতেদায়ীতে ২০ নবেম্বর ইংরেজী, ২১ নবেম্বর বাংলা, ২২ নবেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং বিজ্ঞান, ২৩ নবেম্বর আরবি, ২৪ নবেম্বর কুরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং আকাঈদ ও ফিকহ্ ও ২৭ নবেম্বর গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকল পরীক্ষা সকাল এগারোটা থেকে দুপুর একটা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
×