ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে অগ্নিকা- না নাশকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

ঠাকুরগাঁওয়ে অগ্নিদগ্ধ একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ অক্টোবর ২০১৬

ঠাকুরগাঁওয়ে অগ্নিদগ্ধ একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১১ অক্টোবর ॥ জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার জনগাঁও গ্রামে মঙ্গলবার ভোরে এক অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মঙ্গলবার ভোর ৫টায় ওই গ্রামের বাসিন্দা ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল খরেশের বাড়িতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলেই খরেশের স্ত্রী কেয়া (৩৫) ও শ্যালিকা স্বর্ণা রানীর (২৩) মৃত্যু হয়। পরে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কনস্টেবল খরেশ চন্দ্র (৪৫), তার ছেলে নিলয় (১০) ও মেয়ে নাইস রানীর (৮) মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানায়, পুলিশ কনস্টেবল খরেশ স্ত্রী, শ্যালিকা, ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার রাত ১টার দিকে নবমী পূজা শেষে বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর ৫টার দিকে পুলিশ কনস্টেবল খরেশ চন্দ্রের বাড়িতে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন বাড়ির পাঁচটি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। পরে খবর পেয়ে পীরগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। তবে ততক্ষণে ঘটনাস্থলেই কেয়া ও স্বর্ণার মৃত্যু হয়। পরে রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহত কনস্টেবল খরেশ চন্দ্র দিনাজপুর জেলায় ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পূজার ছুটিতে পরিবারসহ বাড়িতে এসেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা নগেন চন্দ্র বলেন, ভোরে লোকজনের চিৎকারে ছুটে এসে দেখি খরেশের বাড়ি থেকে দেয়াল ভেঙ্গে ফায়ার সাভির্সের লোকজন আহতদের দগ্ধ অবস্থায় বের করছে। সারাবাড়ি আগুনে জ্বলছে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। অগ্নিকা-ের ঘটনাটি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট অথবা নাশকতা কি-না সে ব্যাপারে এলাকাবাসী সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে। কারণ সন্দেহ করা হচ্ছে, প্রতিটি ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল বলেই তারা কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেনি এবং সেজন্য ঘরের ভেতর দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। পীরগঞ্জ থানার ওসি আমিরুজ্জামান ও ফায়ার সার্ভিসকর্মী দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে ওই গ্রামের খরেশ চন্দ্রের বাড়ির উপর দিয়ে যাওয়া ৪৪০ ভোল্টের বিদ্যুত লাইনের তার ছিঁড়ে পড়ে বাড়িতে আগুন লাগতে পারে। এ সময় ঘরের ভেতরে থাকা মোটরসাইকেলের পেট্রোলভর্তি ট্যাঙ্কে আগুন লেগে বিস্ফোরণ ঘটে। আগুনে চার কক্ষের পুরো বাড়িটি মালামালসহ পুড়ে যায়। এতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি ধরা হয়েছে। ভোমরাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিটলার জানান, নিহতদের ময়নাতদন্তের পর সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ বলেন, এ ঘটনা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে হতে পারে আবার নাশকতাও হতে পারে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুত অফিসের এজিএম জোবায়ের হোসেন বলেন, ঘটনাটি বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট নয়, অভ্যন্তরীণ অগ্নিকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে, জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সংবাদকর্মীদের জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া মৃত ব্যক্তিদের সৎকারের জন্য ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে। সকালে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল, পুলিশ সুপার ফরহাত আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফজলে রাব্বী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহমেদ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ইয়াসিন আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা, সাবেক সংসদ সদস্য এমদাদুল হক, পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
×