ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইনের খসড়া অনুমোদন

সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম যাচাই করে অনুমতি নিতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ অক্টোবর ২০১৬

সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম যাচাই করে  অনুমতি নিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বৃদ্ধি ও উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে এ্যাক্রিডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল আইন ২০১৬-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৬’ এর খসড়ায় অনুমোদন দেয়া হয়। আইনটি চূড়ান্ত হলে দেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এই কাউন্সিলের অনুমতি নিতে হবে। কাউন্সিল প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম যাচাই করে এ বিষয়ে স্বীকৃতি দেবে। এছাড়া সভায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অনুসমর্থনসহ বেশ কিছু আইনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ্যাক্রেডিটেশন আইনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক কাক্সিক্ষত ও দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত একটি আইন। উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের জন্য এ আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। একজন চেয়ারম্যান, চারজন পূর্ণকালীন সদস্য ও আটজন খ-কালীন সদস্যসহ মোট ১৩ সদস্যের কাউন্সিল হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চেয়ারম্যান ও পূর্ণকালীন সদস্যরা কাউন্সিলে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। মূলত সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, অধ্যাপক হিসেবে কমপক্ষে ১০ বছরের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য হবেন। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৮টি পাবলিক ও ৯৬টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই কাউন্সিলের স্বীকৃতি পেতে হবে। এ্যাক্রেডিটেশন সনদ ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান এ্যাক্রেডিটেশনপ্রাপ্ত বলে প্রচার করতে পারবে না। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া কোন সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কাউন্সিলের দায়িত্ব ও কাজ তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে কনফিডেন্স সার্টিফিকেট বা ক্ষেত্রমতে এ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট দেয়া বা স্থগিত করা, যদি মনে করেন দেয়ার মতো না তখন স্থগিত করবেন, বাতিল করবেন বা প্রদান করবেন। এ তিনটি তাদের প্রধান দায়িত্ব। এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠিত হলে তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ্যাক্রেডিটেশনের কোন দায়িত্ব ইউজিসির নেই। ইউজিসির আইনটি নতুনভাবে পুনর্বিন্যাস করে আনা হবে। ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট, ফাইন্যান্স, জনবল দেখে থাকে। আর এদের কাজ কোয়ালিটি কন্ট্রোল অব দ্য এডুকেশন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষাবিদদের সুপারিশ অনুসারেই দেশের উচ্চশিক্ষার মান যাচাইয়ে হতে যাচ্ছে পৃথক এ প্রতিষ্ঠান। এর আগে গত মার্চে মন্ত্রিসভায় আইনটির খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন পায়। তবে সংসদে তোলার পর কিছু ধারা সংশোধনের জন্য তা আবার ফেরত আসে। সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সংশোধন করেই এবার মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়। জাতীয় শিক্ষানীতির ‘শিক্ষা প্রশাসন’ অধ্যায়ে বলা হয়েছিল উচ্চ শিক্ষার মান রক্ষা ও যাচাইয়ে গঠন করতে হবে ‘এ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল। শিক্ষানীতিতে বলা হয়, ‘দেশে বর্তমানে বেশ কিছ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী বেসরকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্নাতক ও পরবর্তী) মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা পরিচালনায় সক্ষম কি-না এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ব্যয় যৌক্তিক কি-না, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়ানোর যথাযথ ব্যবস্থা আছে কি-না সে সম্পর্কে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন জরুরী। স্বাস্থ্য, প্রকৌশল এবং কৃষিশিক্ষা প্রদানকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। শিক্ষানীতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘অপর দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী সরকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মাননির্ণয় এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবছর এগুলোর র‌্যাংকিং নির্ধারণ করা ও উন্নয়নের পরামর্শ দান করা হবে। উপযুক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য যথাযথ ক্ষমতা ও দক্ষতা সম্পন্ন একটি এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হবে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেয়া ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করবে কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের কারিকুলামের নিয়ন্ত্রণও থাকবে এই কাউন্সিলের হাতে। বলা হয়েছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা বিভাগ খোলার জন্য কাউন্সিলের কাছে আবেদন করতে হবে। কাউন্সিলের সদস্যরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবে। পরে কাউন্সিলই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বিভাগ খোলার অনুমোদন দেবে। সনদ বাতিলের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় আইনের শর্ত ভাংলে তাদের সনদ বাতিল হবে। এ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃত) সনদ ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি বা তথ্য-নির্দেশিকা প্রকাশ করতে পারবে না। কোন সনদও দিতে পারবে না। কাউন্সিলের সদস্যরা কোন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে কোন তথ্য গোপন করা যাবে না। ব্যবস্থা নেয়া হবে ভুল তথ্য দিলেও। সনদ বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অবশ্য রিভিউ আবেদন করতে পারবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করে আবেদনটি বিবেচনা করে দেখবে কাউন্সিল। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অনুসমর্থন, কয়েকটি আইনের অনুমোদন ॥ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তাবিত ‘উৎপাদনশীলতা সহযোগিতা উন্নয়ন’ বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অনুসমর্থন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তাবিত উৎপাদনশীলতা সহযোগিতা উন্নয়ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির অনুসমর্থন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এটি মূলত দুই দেশর ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ের জন্য। ছোট একটি চুক্তির ফ্রেম অব এগ্রিমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। চীনের রাষ্ট্রপতি আসবেন, তার উপস্থিতিতে এই চুক্তি হবে। তারা এটির অনুসমর্থন চেয়েছে, তাই চুক্তির অনুসমর্থন দেয়া হয়। এ ছাড়াও মন্ত্রিসভা বৈঠকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র-বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) আইন-২০১৬ তে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই সংস্থাটি সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ ও ১৯৮৫ সালের দুটি অধ্যাদেশ দিয়ে এতদিন পরিচালিত হতো। এই দুই অধ্যাদেশকে একত্রিত করে আইনে রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন সংশোধন আইন-২০১৬ এর খসড়াতেও চূড়ান্ত নীতিগত অনুমোদন দেয় হয়েছে। ভায় ‘বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
×