ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১১ অক্টোবর ২০১৬

তিন মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রফতানি আয় হয়েছে ৮০৭ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয় অর্জিত হয় ৭৭৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ সময়ে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় হয়েছে ২২৪ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে দেশে মোট রফতানি আয় ছিল ২৩৭ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানিতে আয় হয়েছে ৮০৭ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। অথচ এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। এ হিসাবে দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি আয় কমেছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তবে আগের অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় বেড়েছে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি আয় অর্জিত হয় ৭৭৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) সময়ে রফতানি আয় ঘুরে দাঁড়ালেও সেপ্টেম্বরে এসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় কমেছে। সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় হয়েছে ২২৪ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। গেল অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে দেশে মোট রফতানি আয় ছিল ২৩৭ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় ২৫০ কোটি ১৩ লাখ ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে মোট ৭৩৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় আসে ৬৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ অর্থবছর হিসাবে প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাক খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ। শুধু গত আগস্টেই তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় আসে ২৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলারের। সেপ্টেম্বরে ঈদ-উল-আযহার কারণে বেশ কিছুদিন ছুটি থাকায় রফতানি আয়ে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে প্রাইম মুভার ধর্মঘটের ফলে কন্টেনার পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে এটিকেই রফতানি আয় কমে আসার অন্যতম কারণ বলছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ঈদ-উল-আযহার কারণে কারখানা ৭ থেকে ১০ দিন বন্ধ ছিল। এর ফলে উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া মাসের শেষদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রাইম মুভার ধর্মঘটের ফলে কন্টেনার পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে রফতানি আয় কমে এসেছে বলে এ উদ্যোক্তা মনে করেন। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে আমাদের দেশে দুটি ঈদ উদযাপিত হয়েছে। ঈদের কারণে শ্রমিকদের বেশ লম্বা একটা সময়ের ছুটি ছিল। এছাড়া ঈদের জন্য কিছু অর্ডার জুনে হয়ে যায়। এ কারণে জুলাই এবং সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় কিছুটা কমেছে। তবে গেল বছরের একই সময়েও আমরা দুটি ঈদ উদ?যাপন করেছিলাম। সে হিসাবে তিন মাসে আগের অর্থবছরের তিন মাসের তুলনায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। অর্থাৎ এটা খুব বেশি আশাব্যঞ্জক না হলেও ভাল। তবে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার বিবেচনায় বেশ নিচে। গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, সারাবিশ্বেই বর্তমানে অর্থনীতিতে একটি শ্লথগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। অন্য দেশেও প্রবৃদ্ধি বেশি ইতিবাচক ধারায় নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে আসার সিদ্ধান্ত (ব্রেক্সিট), পাউন্ডের দরপতন- সব মিলিয়ে বৈশ্বিক হিসাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ভাল। রফতানি প্রবৃদ্ধি ভাল অবস্থানে আছে। তবে ‘নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে’ আমাদের রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেন তিনি। অন্য পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে তিন মাসে রফতানি আয় এসেছে ২০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। এছাড়া এ তিন মাসে প্লাস্টিক পণ্য থেকে দুই কোটি ১৯ লাখ ডলার রফতানি আয় এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলার। গেল অর্থবছরে (২০১৫-১৬) দেশে মোট রফতানি আয় হয় তিন হাজার ৪২৫ কোটি ডলার।
×