ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আয়নাবাজি ॥ অমিতাভ রেজার

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৬ অক্টোবর ২০১৬

আয়নাবাজি ॥ অমিতাভ রেজার

কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হওয়ার পর এবার দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘আয়নাবাজি’। গল্পবৈচিত্র্যেও গুণী নির্মাতা, সৃষ্টিশীল কারিগর অমিতাভ রেজার ক্যারিশমা রয়েছে ছবিটিতে। বহুল আলোচিত ছবিটি। নাবিলা ও চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ছবি নিয়ে লিখেছেন- রুহুল আমিন ভূঁইয়া শূটিং শুরুর পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ‘আয়নাবাজি’ ছবিটি। এর প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী ও মাসুমা রহমান নাবিলা। বড় পর্দায় চঞ্চলের ছবি আগে মুক্তি পেলেও নাবিলার এটি প্রথম ছবি। এ কারণে শুরুতেই তার কাছে জানতে চাওয়া যেহেতু প্রথম ছবি, সেহেতু প্রত্যাশাও নিশ্চয় আকাশছোঁয়া? উত্তরে তিনি বলেন, কোন কিছু নিয়েই আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা করি না। এটি আমার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। এটি দেখে দর্শক যদি আমার অভিনয়ের প্রশংসা করে, তাহলে সেটিই হবে সবচেয়ে বড় পাওয়া। দর্শকের ভালবাসা পাওয়াটাই আমার কাছে মুখ্য বিষয়। তারা যদি এই ছবি দেখে বিনোদিত হয়, তাহলেই আমি সার্থক। ছবিটি তাদের ভাল লাগলেই আমার মনে হবে, আকাশ ছুঁয়েছি। তিনি বলেন, জীবনবোধ বেশি থাকলে অভিনয়টা সাবলীল হয়। ছবিটি সবার মনোযোগ আটকে রাখবে। মাসুমা রহমান নাবিলা পরিচিতি পেয়েছেন উপস্থাপিকা হিসেবে। সাবলীল ও দক্ষ উপস্থাপন শৈলীর কারণে দর্শকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। গুণী নির্মাতা, সৃষ্টিশীল কারিগর অমিতাভ রেজা পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’ ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয়েছে তার। উপস্থাপিকা নাবিলা থেকে ছবিটির ‘হৃদি’ হয়ে উঠেছেন। আর বড় ক্যানভাসেরও প্রথম কোন কাজ তার। গত বছরই শেষ হয়েছে ছবিটির দৃশ্যধারণ। ৩০ সেপ্টেম্বর সারদেশে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। ‘শোবিজে তো অনেকদিন ধরেই কাজ করছি। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। পার্থক্য তো অনেক। সেটা হচ্ছে- অনেকগুলো মানুষ একটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত থেকে কাজের পরিকল্পনা করেন। প্রত্যেক বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা দক্ষ লোকজন থাকেন। কিন্তু টিভি পর্দায় তো সে বিষয়টি অনেকখানি ভিন্ন। এ বিষয়টি আমার চোখে দারুণভাবে লেগেছে’। শোবিজ থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তিনি। নাবিলা আগে কখনও কোন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। তাই পরিচালক, আর সহ-শিল্পীর ওপর নির্ভর করেই ‘আয়নাবাজি’ ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রথম কাজটি কি চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন? ‘অবশ্যই, নিজেকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ অভিনয়ে আমার অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু ভরসা ছিল অমিতাভ রেজার প্রতি। তাঁকে বলেছিলাম, আমি একেবারেই আনকোরা, সব দায়িত্ব আপনার’। আর তাই পুরো কাজের কৃতিত্বটুকু পরিচালক আর সহ-অভিনেতা ও ছবির কলাকুশলীদের দিতে চান। নাবিলা বললেন, আমি আসলে যতটুকু করেছি সব কৃতিত্বের ভাগিদার আমার পরিচালক এবং আমার সহ-শিল্পীরা। তারা আমার থেকে এ মাধ্যমে আরও অনেক বেশি অভিজ্ঞ। সেখান থেকে তাদের সহায়তা এবং আমার চেষ্টা ছিল কাজটি করার সময়। কোন চরিত্র চাইলেই তো ১০০ ভাগ তুলে ধরা সম্ভব নয়। কিছুটা তো গ্যাপ থাকেই। সমস্য ডাবিং করার সময় দেখেছি, কিছু কিছু দৃশ্যের শূটিং যদি আবারও করতে পারতাম, তাহলে আরও ভাল করতে পারতাম। প্রথম ছবিতেই একটি চুম্বন দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না নাবিলা। ছবিটির পরিচালক অমিতাভ রেজা তাকে গল্পটি ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়ার পর জানালেন, একটি দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরীকে চুম্বন করতে হবে। যদি নাবিলা রাজি হন তাহলেই তাকে এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাখা হবে। আর নাবিলা তখন হ্যাঁ বা না কিছু বলেননি। তবে বেশ ভয় পেয়েছিলেন। তার ভাষ্য, এ দৃশ্যেই সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি! এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তো স্বাভাবিক একটা বিষয় না। অভিনয়ের জায়গা থেকে ভিন্ন বিষয়। এই দৃশ্যের কথাটা যদি বলি, আয়নাবাজির কোন দৃশ্যই আরোপিত না। একটু বিব্রতবোধ করেছি। কেমন লাগবে, কীভাবে করব, করতে পারব কিনা? যদিও দৃশ্যটাতে অভিনয় করার আগে অমিতাভ ভাই আমাকে নিয়ে অনেকটা ভীত ছিলেন। যখন স্পটে যাই এটা নিয়ে আমাকে অনেকবার বোঝানো হয়েছে যাতে আমি কমফোর্ট ফিল করি। আর আমরা যখন শূটিং করছিলাম সবাই বিষয়টি অনেক হাসাহাসি করছিলাম। সবচেয়ে বেশি মজা মনে হয় ওই সিনটা করতে গিয়েই করেছি। আর চঞ্চল ভাইয়ের আনকমফোর্টনেস দেখে আমিও মজা পেয়েছি। আমাদের দেশের কালচার অনুযায়ী এখনও ওই জায়গাটা তৈরি হয়নি যে কমফোর্ট ফিল করবে। যা করেছি কাজের স্বার্থেই করেছি। এ ছবিতে হৃদি চরিত্রটি ঠিক কেমন? এমন প্রশ্নে নাবিলার উত্তর, এখানে আমার নাম হৃদি। আর দশজন সাধারণ মেয়ে যেভাবে জীবনযাপন করে সে-ও তাদের মতোই। থাকে পুরান ঢাকায়। ‘আয়নাবাজি’ এমন একটি শহরের গল্প শোনাবে, যে শহরে এখনও সকালে দুধওয়ালা আসে, ফেরিওয়ালারা হাঁকডাক দেয়, বাচ্চারা দল বেঁধে নাটকে অভিনয় শিখতে যায়। মহল্লার চা-পুরির দোকানে ঠাট্টা-মশকরা করে বেকার-বখাটেরা। আয়না (চঞ্চল চৌধুরী) সেই শহরের একজন বাসিন্দা। তার সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় হৃদির। অভিনয় করতে গিয়ে দেখেছি চঞ্চল ভাই অনেক ফ্রেন্ডলি এবং হেল্পফুল। তার সঙ্গে কাজ করে খুব ভাল লেগেছে আমার। হৃদি চরিত্রটির জন্য কেমন প্রস্তুতি ছিল? তিনি বলেন, ‘আমি আসলে আলাদাভাবে খুব যে বেশি কিছু করেছি তা কিন্তু নয়। আমি পুরোপুরি পরিচালকের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু আমি যেটা শিখেছি, অভিনয় করার আগে মঞ্চ কিংবা কোন অভিনয় স্কুল থেকে অভিনয় শিখে আসার বিষয়টি খুব জরুরি। যারা হয়ত হুট করেই অভিনয় করেন তাদের অভিনয়ের মজবুত ভিতটা তৈরি হয় না। আর একটা বিষয় আমি যে কাজটিই করব সেটি অবশ্যই আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। সেটাকে আমার মধ্যে ধারণ করতে হবে। ওটা নিয়ে ভাবা, ব্যাস করা। আর বিশ্বাস যদি থাকে তাহলে আমি এমনিতেই ওই চরিত্রটা হয়ে যাব। আমি হৃদি চরিত্রে প্রবেশ করতাম। তখন আমি ভাবতাম এই মুহূর্তে হৃদি আসলে কি করতে পারে। হৃদির মতো করেই চিন্তা করতাম। নাবিলার মতো করে নয়। তিনি মনে করেন, যার জীবনে জীবনবোধ যত বেশি, জীবনে যে যত বেশি প্রেম, বিরহ দেখেছে, বিভিন্ন সঙ্কটকালীন সময়ের মধ্যদিয়ে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অভিনয় করাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। দেখা গেল একটা কষ্টের চরিত্রে অভিনয় করতে যাবেন, তখন হয়ত জীবনের সবেচেয়ে বেশি কষ্টটা পেয়েছেন। ভাবখানা এমন থাকবে। নাবিলা জানালেন, জীবনবোধটা যদি একটু বেশি থাকে সেটি অভিনয়ে একটু বেশি হলেও সহায়তা করে। এদিকে কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখায় অংশ নিয়েছে ‘আয়নাবাজি’। এ নিয়ে নাবিলা অনেক উচ্ছ্বসিত। এত বড় একটি আয়োজনে তার অভিনীত ছবি প্রদর্শিত হয়েছে, এটা নিঃসন্দেহে নাবিলার জন্য ইতিবাচক ব্যাপার। তবে নাবিলা এখন দেশের দর্শকদের প্রতিক্রিয়া নিয়েই বেশি চিন্তিত। তারা কীভাবে ছবিটিতে গ্রহণ করছেন সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় আছেন। নাবিলা বলেন, ‘বড়পর্দায় কতটা সফল হতে পারব তা নির্ভর করছে দর্শকের ওপর। আমার কাছে পুরোটাই এসএসসি পরীক্ষার আগ মুহূর্তের মতো মনে হচ্ছে। আমি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি, পরীক্ষাও দিয়েছি, এখন রেজাল্ট দেয়ার সময়ও ঘনিয়ে আসছে। ভাল হলে সবাই প্রশংসা করবে। আর খারাপ হলে বাবা-মা যেমন বকা দেয় ঠিক তেমনটাই ঘটবে। আর দর্শকদের জন্যই তো কাজ করা, আবার দর্শক যদি খারাপ বলেন, তাহলে কখনও বলব না যে তারা ভুল বলেছেন। নিশ্চয়ই কোথাও খারাপ ছিল। কথা প্রসঙ্গে নাবিলার সঙ্গে আয়নাবাজির বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়েই আলাপ হচ্ছিল। তিনি জানালেন, নির্মাতা অমিতাভ রেজা এমন কিছু স্পটে ছবিটির দৃশ্যধারণ করেছেন যেখানে সাধারণত কোন চলচ্চিত্রের শূটিং সাধারণত হয় না। এর কারণ হিসেবে বললেন, অমিতাভ রেজা যেটি চেষ্টা করেছেন সেটি হলো রিয়েলে লোকেশনে শূটিং করার! এটা কিন্তু অভিনয়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। জেলখানার সেট তৈরি করে শূটিং করা আর রিয়েল লোকেশনে গিয়ে শূটিং করা কিন্তু ভিন্ন বিষয়ই বটে। ওই ফিলিংটাও কিন্তু আলাদা। দর্শক কেন ‘আয়নাবাজি’ দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যাবেন? এ বিষয়ে নাবিলা দাবি করেন, ‘বাংলাদেশী সিনেমার দর্শক প্রচুর। বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যমও সিনেমা। দর্শক ভাল চলচ্চিত্র দেখতে চায়। আয়নাবাজির গল্প বেশি চিন্তা করা কিংবা বেশি মুডি কোন গল্প নয়। সবাইকে বিনোদন দেবে চলচ্চিত্রটি। এক সেকেন্ডের জন্যও আয়নাবাজি বোর করবে না। সব ফিল্মেই আসলে কোন না কোন ম্যাসেজ থাকে। আর এখন ম্যাসেজটা কে কিভাবে নেবেন সেটি পুরোটাই দর্শকের ওপর নির্ভর করবে। এ সিনেমাটির ক্ষেত্রেও তাই। ‘আয়নাবাজি’র গল্পের শুরুটা ‘আয়না’ নামের চঞ্চলকে ঘিরেই। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন লুৎফর রহমান জর্জ, গাউসুল আলম শাওন, হীরা চৌধুরী প্রমুখ। কনটেন্ট ম্যাটার লিমিটেড প্রযোজিত এবং হাফ স্টপ ডাউন লিমিটেড নিবেদিত ‘আয়নাবাজি’র নির্বাহী প্রযোজক এশা ইউসুফ। এর কাহিনী লিখেছেন সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন, চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন অনম বিশ্বাস। সংলাপ লিখেছেন অনম বিশ্বাস ও আদনান আদীব খান। গানগুলো তৈরি করেছেন ফুয়াদ, অর্ণব, হাবিব ও চিরকুট ব্যান্ডের সদস্যরা। চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবেন কী না, এমন প্রসঙ্গে নাবিলা জানালেন’, যদি ভাল কোন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান কিংবা কোন চরিত্র তার পছন্দ হয় কিংবা তাঁর বিশ্বাস হবে যে চরিত্রটিতে তাকে মানাবে, তাহলেই অভিনয় করবেন। এ ছবি থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? জানতে চাইলে নাবিলা বলেন, ফেসবুকেও ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে দারুণ তোলপাড় শুরু হয়েছে। সিনেমাপ্রেমী থেকে শুরু“করে মিডিয়া কর্মীরাও ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। অনেকদিন পর আরও একটি গল্পনির্ভর পরিচ্ছন্ন চলচ্চিত্র দেখবেন দর্শক। নিজের অভিনয়টা কেমন হলো, তা দেখতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আয়নাবাজি দেখেছেন নাবিলা। এ ছবি প্রসঙ্গে নাবিলা বলেন, ‘আয়নাবাজি’র হৃদি চরিত্রটি নিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছি। কাছের, দূরের অনেকেই মুঠোফোনে প্রশংসা করছেন। অনেকেই ফেসবুকে আমার অভিনয়ে পঞ্চমুখ হচ্ছেন। তবে প্রথম ছবিতেই এতটা সাড়া পাব ভাবতে পারিনি। আমি মনে করি, এটি আমার কাজের অনুপ্রেরণা। এছাড়া আমাকে বড়পর্দায় দেখে পরিবারের সবাই অনেক খুশি। ছবির কাজ করার স্বপ্ন কমবেশি সবার থাকে। আয়নাবাজিতে অভিনয় করে আমারও সেই বাঞ্ছা পূরণ হয়েছে’।
×