ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২ অক্টোবর ২০১৬

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে চায় সরকার

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশে বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ রয়েছে। সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। বেশ কিছু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এসব স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, হামিম গ্রুপ হাইতিতে তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাইতি যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত তৈরি পোশাক রফতানি করতে পারে। বাংলাদেশের এই বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ লাভজনক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সফররত হাইতির ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে মুগ্ধ। প্রতিনিধিদলের প্রধান বলেন, বিনিয়োগের জন্য হাইতিতে জমি, বিদ্যুত, দক্ষ শ্রমিকসহ প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক উন্নতি করেছে। এ খাতে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা অনেক। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা হাইতিতে তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ করলে উভয় দেশ উপকৃত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, হাইতির ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কস অথরিটির কনসালটেন্ট জোসেফ পিয়েরি লিওনেল ডিলেটর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বর্তমানে পুঁজিবাজার একটি সুন্দর অবস্থানে রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন বাজারে চোখ-কান খোলা রেখে বিনিয়োগ করতে পারে। তবে বর্তমানে ক্যাপিটাল মার্কেটের ভাল অবস্থার মধ্যে অসংখ্য নিচুমানের কোম্পানিও রয়েছে। যে কোন সময় তারা সুযোগ নিতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। যদিও বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক সচেতন। অর্জন করেছে অনেক অভিজ্ঞতাও। বিনিয়োগকারীরা এখন আর আগের মতো না বুঝে বিনিয়োগ করে না। দেখে-শুনে ও বুঝে বিনিয়োগ করে। ফলে আগের মতো এখন আর বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। এটা পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত ভাল দিক। তারা আরও বলেন, সরকার বিগত কয়েক মাসে ক্যাপিটাল মার্কেটের উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। যা বাস্তবায়নও হচ্ছে। বিদ্যুতখাতে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার একটি উপযুক্ত জায়গা বলে মনে করেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, এখান থেকে সরকার আগামী কয়েক বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পেতে আগ্রহী। রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ‘পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুত খাতের উন্নয়ন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন। সভার আয়োজন করে ডিএসই ব্রোকারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগকারীরা নাকি শেয়ারবাজারের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সরকার যে কোন মূল্যে বিনিয়োগকারীদের এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে চায়। সরকার সব সময়ই এই বাজারের জন্যই আছে। তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বসে থাকলে চলবে না। বিনিয়োগ বোর্ড যেমন বসে থেকে কিছু অর্জন করতে পারেনি তেমনি স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও বসে থাকলে বিনিয়োগ আসবে না। এজন্য উদ্যোক্তাদের কাছে যেতে হবে। মন্ত্রী স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর সমালোচনা করে বলেন, দুঃখের বিষয় আপনারা কখনও শেয়ারবাজার থেকে বিদ্যুত খাতে অর্থায়ন নিয়ে মন্ত্রণালয়ে যাননি। বিনিয়োগ বোর্ডের মতো বসে থাকলে এ কাজ কখনও হবে না। বিনিয়োগ বোর্ড মনে করে অন্যরা তার কাছে বিনিয়োগ নিয়ে যাবে কিন্তু সিঙ্গাপুরে ভিন্ন চিত্র। তাই বসে না থেকে বিদ্যুত খাতে অর্থায়নে আলোচনায় বসতে হবে। কীভাবে অর্থায়ন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। তিনি জানান, দেশের বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের জন্য বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে কয়েকটি বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করা হয়েছে। তিতাস গ্যাসের ট্যারিফ বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিমন্ত্রী। পূর্বে ট্যারিফ কমানোতে বিনিয়োগকারীদের যে লোকসান হয়েছিল, তা লাঘব হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, তিতাসে বিনিয়োগ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের পুষিয়ে দেয়া হবে। বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে বিদ্যুত খাতের কোম্পানিগুলোর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বাজার মূলধনে ১২ ভাগ এই খাতের কোম্পানিগুলোর দখলে। বাজারের ৮ থেকে ১০ ভাগ লেনদেনও হয় বিদ্যুত খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মাধ্যমে। বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করার প্রতি বিনিয়োগকারীদের চাহিদা আছে। তাই শেয়ারবাজারের মাধ্যমে দেশের বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে অর্থায়ন করা যেতে পারে। আইডিএলসি ফাইন্যান্সের এমডি ও সিইও আরিফ খান বলেন, বিদ্যুত খাতের উন্নয়নে পুঁজিবাজার বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় এই বাজার বড় হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাইলে পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনায় দেশ। আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগে এই দেশকে আমরা অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। অর্থনীতি ডেস্ক
×