ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কে চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সমালোচনায় ট্রাম্প

অস্বস্তিতে এশিয়া

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অস্বস্তিতে এশিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোন প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থান পেতে পারেন, তার আভাস পেতে এশিয়ার লোকজন ঐ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত বিতর্ক প্রত্যক্ষ করেন। কারণ এ নির্বাচনের ফলাফল এশিয়াতে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পাল্টে দিতে পারে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিতর্কানুষ্ঠানে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যুগুলোর দিকেই প্রধানত দৃষ্টি দেন, তবে তারা পররাষ্ট্র নীতি নিয়েও কথা বলেন। এ সময় তারা পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার, সাইবার নিরাপত্তা ও বাণিজ্য নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হন। অস্ট্রেলিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড অবধি ঐ বিতর্ক স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় টিভি ও বেতার কেন্দ্রযোগে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। চীনের ওয়েইবো মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্মে অনুষ্ঠানটি প্রচারের সময় এতে ১০ হাজারেরও বেশি মন্তব্য পড়ে। ট্রাম্প এশিয়ার নিরাপত্তা ও বাণিজ্য কাঠামোর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কারণ এ কাঠামোই কয়েক দশক ধরে অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপিন্সের সঙ্গে মার্কিন মিত্রতা অটুট রেখেছে এবং সম্প্রতি চীনের শক্তি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এক প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে। হিলারি বিতর্কের পর কয়েক সাক্ষাতকারে ঐ অঞ্চলে স্থিতাবস্থাকেই বহুলাংশে সমর্থন করেন বলে মনে হয়। কোন কোন এশীয় রাজধানীতে অস্বস্তির সৃষ্টি করে ট্রাম্প একথা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, আমেরিকান মিত্ররা অভিন্ন নিরাপত্তা ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাদের ন্যায্য অংশই পরিশোধ করছে না। মন্তব্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে উদ্বেগ বাড়বে, এমন মন্তব্য করেন আসান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্ট্যাডিজের রিসার্চ ফেলো জেমস কিম। এটি সিউলভিত্তিক এক গবেষণা সংস্থা। কিম বলেন, ট্রাম্প মার্কিন মিত্রদের নিরাপত্তা ব্যয় বহন করতে হবে বলে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছেন। এটি চীন ও উত্তর কোরিয়ার কাছে ভুল বার্তা পাঠাচ্ছে। এর বিপরীতে, কিম বলেন, হিলারির বার্তা বর্তমান মৈত্রী বজায় রাখার ব্যাপারে ‘দ্ব্যর্থহীন’। দক্ষিণ কোরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার জবাব দেন যে, সিউল কোরীয়-মার্কিন যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বজায় রেখে শক্তিশালী করতে এবং কোরিয়াতে মার্কিন বাহিনীর জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখেছে। টোকিও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী সমর্থন করতে আরও অর্থ পরিশোধ না করলে জাপান থেকে আমেরিকান বাহিনী প্রত্যাহার করতে ট্রাম্পের দেয়া হুমকি ঐ দেশে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এক জাপানী টুইটারে পোস্টট করেন, দৃঢ়চেতা ট্রাম্পের সঙ্গে জাপানের দ্বিতীয় প্রজন্মের রাজনীতিকদের কোন তুলনাই হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক ভিয়েতনামী রাষ্ট্রদূত লে ভান বাং বাণিজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি নিয়ে ট্রাম্পের যুক্তির প্রশংসা করেন, কিন্তু তিনি বলেন, ট্রাম্পের নীতি জাপান ও ভিয়েতনামের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। ‘খোলাখুলি বলতে গেলে আমি ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়াকে ভয়ের চোখে দেখি’ বলে স্থানীয় এক টিভির কাছে মন্তব্য করেন ফিলিপিন্সের সাবেক কূটনীতিক আপোলিনারিও লোজাদা। তিনি এখন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুর্তাতেকের সরকারকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ট্রাম্প আগেকার এ অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করেন যে, চীন এর রফতানি বাড়াতে এর মুদ্রার মূল্যমান হ্রাস করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এক ‘মানি ব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহার করছে। চীন সম্প্রতি এর মুদ্রার মূল্যমান কমানোর বদলে বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ট্রাম্পের কড়া কড়া কথা চীনে কঠোর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ভিক্টর গাও বলেন, ট্রাম্পের কপটতা, গোঁড়ামি, বর্ণবাদ ও অশিষ্টতার মাত্রা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা চীনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন, কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বে যে অস্থিরতা দেখা দেবে তা নিয়ে চীনের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। তিনি চীনের প্রয়াত নেতা দেং জিয়াও পিংয়ের দোভাষী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে জাপানের মতো দেশগুলোর অস্ত্রসজ্জিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। এটি চীনের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের বড় কারণ। অন্যত্র ট্রাম্প অনুকূল সাড়া পেয়েছেন। সিঙ্গাপুরের মেরিন সার্ভিসেস ফার্ম সিএইচ অফশোর লিমিটেডের পারচেজার কাং চি (৪৯) বলেন, আমি ট্রাম্পকে পছন্দ করি। কারণ তিনি অকপট এবং তার মনে যা আসে তাই তিনি বলে ফেলেন। -ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
×