ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যপাড়া খনিতে এক বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মধ্যপাড়া খনিতে এক বছর ধরে  পাথর উত্তোলন বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র ও সম্ভাবনাময় পাথর খনি মধ্যপাড়ায় গত এক বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিমাসে খনিতে লোকসান হচ্ছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলার লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়া প্রধান উৎপাদন যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিনেও পুনঃস্থাপন করতে না পারায় বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। খনির ইতিহাসে আর কখনই এত দীর্ঘকাল খনির পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ থাকেনি। উত্তর কোরিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় কোরীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘নামনাম’ মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। ২০০৭ সালের ২৫ মে খনি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিন শিফটে পাথর উত্তোলনের কথা থাকলেও, এক শিফটের বেশি পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। ফলে সম্ভাবনাময় এই খনিটি দিনে দিনে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। খনির উৎপাদন বৃদ্ধি ও একে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করতে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যপাড়া পাথর খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব নতুন প্রতিষ্ঠানকে দেয়। বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া কর্পোরেশন লিমিটেডের সমন্বয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি) এই দায়িত্ব পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ওই বছরে ২৪ ফেব্রুয়ারি খনি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করে এবং অল্পদিনের মধ্যে খনির পাথর উত্তোলন তিন শিফটে উন্নীত করে। কিন্তু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত পুরনো যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ার কারণে তারা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে। উত্তোলনযোগ্য নতুন উৎপাদন ইউনিট প্রস্তুত করা সম্ভব না হওয়ায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উত্তোলন বন্ধ হওয়ার সময় খনি ইয়ার্ডে বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৭ লাখ টন পাথর মজুদ ছিল। তবে স্থানীয়ভাবে পাথরের ব্যাপক চাহিদা থাকায় তিন মাসের মধ্যে পাথরের পুরো মজুদ শেষ হয়ে যায়। মধ্যপাড়া খনির পাথর উত্তোলন বন্ধের আগে, সেখানকার পাথর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পদ্মাসেতুর নদী শাসন ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হতো বলে নির্মাণ ঠিকাদার সূত্রে জানা যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় বর্তমানে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। উত্তোলন বন্ধের আগে জিটিসি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ১শ’ ৪৪ কোটি টাকার মাইনিং ইক্যুপমেন্ট আমদানির জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে চাহিদাপত্র দেয়। সে সময় যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য মালামালের বাজার মূল্য ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জিটিসির সঙ্গে খনির কর্তৃপক্ষকের মতবিরোধ দেখা দেয়। পরে খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার হস্তক্ষেপে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৮৫ কোটি টাকার মাইনিং ইক্যুপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয় খনি কর্তৃপক্ষ। জিটিসির অনুকূলে খোলা হয় ৩৬টি এলসি। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ৩০টি এলসির যন্ত্রপাতি আসার কথা থাকলেও, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে পারেনি। এ পর্যন্ত মূল খননযন্ত্র রেইজ বোরিং মেশিনসহ ২১টি এলসির মালামাল খনিতে এসে পৌঁছেছে। ৪টি এলসির যন্ত্রপাতি চট্টগ্রাম বন্দরে ও ১টি এলসির যন্ত্রপাতি শাহজালাল বিমানবন্দরে রয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদানি করা বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ খনি অভ্যন্তরে ও উপরিভাগে স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট যন্ত্রপাতি আমদানি শেষে খনিতে স্থাপনের পর নবেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাথর উত্তোলন শুরু করা সম্ভব হবে বলে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পেট্রোবাংলা ও জিটিসি’র মধ্যে উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার সংক্রান্ত ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়। চুক্তি আওতায় জিটিসি ৬ বছরে তিন শিফটে ৯২ লাখ মে.টন পাথর উত্তোলন করবে। দায়িত্ব লাভের পর এ পর্যন্ত উত্তোলন করেছে ১১ লাখ ৯২ হাজার টন পাথর। দীর্ঘ এক বছর পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় খনিতে কর্মরত প্রায় ৬শ’ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
×