ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নূর চৌধুরীকে কিভাবে ফিরিয়ে দেয়া যায় তা কানাডা খতিয়ে দেখছে ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নূর চৌধুরীকে কিভাবে ফিরিয়ে দেয়া যায় তা কানাডা খতিয়ে দেখছে ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয়। বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে এ রকম খবর পাওয়ার পরে আমাকে নিউ ইয়র্ক থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী (এএইচ মাহমুদ আলী) ফোন করেছিলেন। “আমাদের দুজনের আলোচনার প্রেক্ষিতে এই খবরটার সত্যতা জানতে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং সেখানকার হাইকমিশনার জানান, এই সংবাদটি সর্বৈব অসত্য। তিনি তার জায়গা থেকে কনফার্ম করেছেন এটার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।” কানাডা মৃত্যুদ- সমর্থন করে না এবং এ বিষয়ে তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে কীভাবে তা এড়ানো যায়, তাও তারা খতিয়ে দেখছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফিলিপিন্সের কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়ায় যাতে কোন ব্যাঘাত না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই এ ঘটনায় সরকারের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে। শনিবার সচিবালয়ের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা আগে থেকেই অব্যাহত ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফরে গিয়ে ওই দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে এ বিষয়টি তুলেছেন। তাদের আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। সে আলোচনার প্রেক্ষিতেই কীভাবে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়া যায়, তা খতিয়ে দেখছে কানাডা সরকার। আইনমন্ত্রী বলেন, কানাডা মৃত্যুদ- সমর্থন করে না এবং এ বিষয়ে তাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে কীভাবে তা এড়ানো যায়, তাও তারা খতিয়ে দেখছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বহিষ্কার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পাওয়ার পর তাকে নিউইয়র্ক থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। আমাদের দুজনের আলোচনার প্রেক্ষিতে খবরটার সত্যতা জানতে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানকার হাইকমিশনার জানান, এ সংবাদটি অসত্য। এছাড়া কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ডেস্কেও হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে এ সংবাদের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কানাডার সংবিধানে বলা আছে- মৃত্যুদ-াদেশ যেসব দেশে আছে সেখানে কোন আসামিকে, যার মৃত্যুদ-াদেশ হতে পারে এমন কোন আসামিকে সেখানে ফেরত পাঠানো যাবে না। এই একটা পয়েন্টের উপরে নূর চৌধুরী এখনও সেখানে টিকে আছেন। এই পয়েন্টটার সুরাহা হলেই নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো যাবে কি যাবে না, সেটার সিদ্ধান্ত হবে।’ খুনীদের আনতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান আইনমন্ত্রী, যিনি নিজে বঙ্গবন্ধু হত্যামামলাটি পরিচালনা করেন। ‘যখনই কানাডীয় সরকারের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হবে, তখনই নূর চৌধুরীর বিষয়ে কথা হবে। নূর চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য সব সময়ই কানাডীয় সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব। আমার বিশ্বাস এবারও সেই আলোচনা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।’ নূর চৌধুরীর পাশাপাশি আরেক খুনী রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের খবর সরকারের জানা বলে মন্ত্রী জানান। রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে জন কেরি এসেছিলেন, ওই সময় এই ব্যাপারটা উত্থাপন করেছিলাম। কেরি সাহেব বলেছেন, এই ব্যাপারে দেশে ফিরে খোঁজ-খবর নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’ ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনী ফারুক রহমান ও সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর হয়। এ মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর সাতজনের মধ্যে আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আবদুল মাজেদ বিদেশে পালিয়ে আছে। দ-িত অপরজন আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যায়। পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। রিজার্ভের অর্থ অন্যদিকে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক আরও বলেছেন, বাংলাদেশের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফিলিপিন্সের কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনী প্রক্রিয়ায় যাতে কোন ব্যাঘাত না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই এ ঘটনায় সরকারের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। সেজন্য আমরা খুব সতর্কতার সাথে সব বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেহেতু চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পেতে একটা মামলা ফিলিপিন্সে চলছে, সেই অর্থটা ফেরত পাওয়াতে ব্যাঘাত ঘটে এমন কিছু আমরা হতে দিতে চাই না। সেই ক্ষেত্রে ওই (তদন্ত ) রিপোর্টের আগে ওই মামলাটা নিষ্পত্তি হলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করেছি কয়েকটা দিন পরে এই রিপোর্ট পাবলিশ করলে বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকবে।’ রিজার্ভের অর্থ ফিরিয়ে আনার পর কারা তা চুরিতে সাহায্য করেছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত তা বের করা প্রয়োজনীয় বলেও মনে করেন আইনমন্ত্রী। ‘কিন্তু সম্পদটা ফিরিয়ে আনাটা অগ্রাধিকারের ব্যাপার।’ গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই এ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়। ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিনকে।
×