ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নরডিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নরডিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ ইউরোপের নরডিক দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হতে চলেছে। এসব দেশের সঙ্গে বিনিয়োগ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গভীর সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ছে। এছাড়া আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্জ ব্রেন্ড ঢাকা আসছেন। ইউরোপের নরডিক দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন ও আইসল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব দেশ সফর করেছেন। এ সফরের মধ্যে দিয়ে এসব দেশ তাদের জোরালো অবস্থান প্রকাশ করেছে। রাজধানীর গুলশান হামলার প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছে নরওয়ে। এছাড়া সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, জাহাজ নির্মাণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিদ্যুত উৎপাদন, সমুদ্র অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে চায় নরওয়ে। আগামী বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সফরে আসছেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্জ ব্রেন্ড। এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নরওয়ের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। সৌরবিদ্যুত প্রযুক্তিতে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নরওয়ে। বিশেষ করে নরওয়োজিয়ান কোম্পানি স্কাটেক সোলার বাংলাদেশে আট শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুত প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। ঢাকার নরডিক দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসা করছে এ রকম ৯১ শতাংশ নরডিক কোম্পানি আগামী তিন বছরে এখানে ব্যবসা বাড়াতে চায়। অন্য দেশের তুলনায় এ দেশে ব্যবসায় মুনাফা বেশি হয় বলে এসব কোম্পানি ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা বলেছে। সম্প্রতি নরডিক দূতাবাস থেকে প্রকাশিত এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নরডিক দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী। এর অন্যতম কারণ এখানকার বাজারে বর্ধিত চাহিদা। জরিপে অংশ নেয়া ৫৬ শতাংশ নরডিক ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এখানে ব্যবসা পরিবেশ অনুকূল, ৫৩ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন গত দুই বছরে বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ১৬ শতাংশ নরডিক ব্যবসায়ী মনে করেন, বাংলাদেশে উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয়ী। জরিপে অংশ নেয়া ৩২ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি হবে এ দেশে নরডিক বিনিয়োগের বড় খাত। পোশাক ও বস্ত্র খাতকে বড় মনে করে ২৫ শতাংশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় তিনটি নরডিক দেশ একত্রে নরডিক দূতাবাস চালু করেছে। নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেন একযোগে একই ছাদের নিচে থেকে দূতাবাস পরিচালনা করছে। নরডিক দূতাবাস উদ্বোধনের সময় ঢাকায় এসেছিলেন ডেনমার্কের কর্মসংস্থানমন্ত্রী জর্ন নিরগার্ড লারসেন, নরওয়ের বাণিজ্য, শিল্প ও মৎস্য প্রতিমন্ত্রী ডিলেক আয়হান ও সুইডিশ মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রদূত ইভা এ্যাকারম্যান। সে সময় যৌথ দূতাবাস চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নরডিক দেশগুলোর দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারি আরও সম্প্রাসারিত হবে বলেও প্রত্যাশা করেছিলেন ঢাকায় আগত নরডিক দেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র পরিবহনে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ডেনমার্ক। এছাড়া ডেনমার্ক এখন সবুজ উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবুজ উন্নয়নে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। ডেনমার্ক বাংলাদেশে পানি ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধে নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া ডেনমার্কের কাছে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। চলতি মাসে সুইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরামর্শ বৈঠক অনুষ্ঠানের জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ সমঝোতা সইয়ের মধ্য দিয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা নিয়মিত আলোচনা করবেন। ফলে দুই দেশের মধ্যে আরও রাজনৈতিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আইসল্যান্ডের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ধীরে ধীরে বাড়ছে। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে আগ্রহী আইসল্যান্ড। বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে ৬০ কিলোমিটারের বেশি দূরে মৎস্য আহরণে সক্ষম নয় বাংলাদেশ। গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশের প্রযুক্তিও দুর্বল। তবে গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে দেশটি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দুই দেশ একযোগে কাজ করবে বলেও একমত হয়েছে। বিশেষ করে সরকারী-বেসরকারী যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আইসল্যান্ড বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া আর্কটিক কাউন্সিলে বাংলাদেশ পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইসল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে আইসল্যান্ড। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ইউরোপের যেসব দেশ আমাদের স্বীকৃতি প্রদান করেছিল, তাদের মধ্যে নরডিক দেশগুলো ছিল অন্যতম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নরডিক দেশগুলো আমাদের সহযোগিতা করে আসছে। তবে আমরা আশা করছি এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান ক্ষেত্রের পরিধি আরও বাড়বে। নরডিক দেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হতে চলেছে বলেও তিনি জানান।
×