ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

যাবেন কানাডায়ও, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কথা বলবেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে জঙ্গী দমনে দেশের সাফল্য তুলে ধরবেন

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে জঙ্গী দমনে দেশের সাফল্য তুলে ধরবেন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী কানাডা সফর করবেন। কানাডায় অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন শেখ হাসিনা। ঈদ-উল-আযহার পরদিন আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর কানাডা সফর ও জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে গ্লোবাল ফান্ডের সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিয়লের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। দীর্ঘ সময় পর উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে বাংলাদেশের কোন সরকার প্রধান সফরে যাচ্ছে। কানাডা সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানাডা সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডাসহ আরও নয় জন আমন্ত্রিত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও মাইক্রোসফ্টের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে গ্লোবাল ফান্ড কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কনফারেন্সের একটি প্যানেল সেশনে বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডা বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম একটি দেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে এই দেশটি আমাদের প্রত্যক্ষ সমর্থন জানিয়েছিল। তাছাড়া নব্য স্বাধীন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে কানাডা সবসময়ই পাশে থেকেছে। কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘে আমাদের সদস্যপদ লাভের ক্ষেত্রেও দেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আসন্ন কানাডা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন এবং নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পিতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডোর অবদানের কথা আপনারা সকলেই জানেন। তাঁর সেই অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাঁকে মরণোত্তর ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননায়’ ভূষিত করা হয়। এবারের সফরে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর হাতে তাঁর পিতার এই সম্মাননা পুরস্কারটি তুলে দেবেন। কানাডা থেকে প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছবেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে তিনি ৭০ সদস্যের সরকারী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে ইউরোপে চলমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট ও অভিবাসন সমস্যা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে অন্যান্য দেশে লাখ লাখ আশ্রয় প্রত্যাশীদের সমস্যা সমাধানের বিষয়গুলো এবারের অধিবেশনে অত্যাধিক গুরুত্ব পাবে। অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বের আগে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের উদ্যোগে শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনের পুরোটা সময় জুড়েই অসংখ্য নীতিনির্ধারণী বৈঠক হবে। মধ্যপ্রাচ্যে আইএসসহ বিশ্বব্যাপী সহিংস জঙ্গী তৎপরতার উত্থান এবং প্যারিস, ব্রাসেলস, ইস্তান্বুল, বাগদাদ, মদিনা, জাভা, পুচং এমনকি ঢাকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের আওতায় আরও কার্যকর প্রয়াস গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সচেষ্ট থাকবেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ে আয়োজিত একটি সম্মেলনের প্লেনারি সেশনে বক্তব্য রাখবেন। প্রধানমন্ত্রী প্লেনারি সেশনের বক্তব্যে অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ে বংলাদেশের অগ্রাধিকারসমূহ তুলে ধরবেন এবং শরণার্থী ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করবেন। একই সঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের শরণার্থী সঙ্কট ও অভিবাসন সমস্যার মূল কারণসমূহ চিহ্নিত করে এর স্থায়ী সমাধানে কাজ করে যাওয়ার জন্য বিশ্বনেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাবেন। ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য পানি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষ বৈঠকে এই প্যানেলের একজন মনোনীত সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণে আয়োজিতব্য শরণার্থী বিষয়ে এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ সময় তিনি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতে অবস্থান নেয়া ১০ মিলিয়ন শরণার্থীর বিষয়টি উল্লেখ করে শরণার্থীদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কতগুলো সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমার শরণার্থী ও অনিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক সম্পর্কিত সমস্যাটির একটি স্থায়ী, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধানের বিষয়টি তুলে ধরবেন। ২০ সেপ্টেম্বর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমন্ত্রণে একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বৈঠকে তিনি সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করবেন। সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্সের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল যোগ দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশন নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদরদফতরে শুরু হবে। এই অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্ব আগামী ২০-২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ন্যাম সম্মেলনে যোগ দেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ॥ আগামী ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) ১৭তম শীর্ষ সম্মেলনটি ভেনিজুয়েলার মার্গারিটা দ্বীপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় মন্ট্রিয়লে ও নিউইয়র্ক সফরে ব্যস্ত থাকবেন। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ন্যামের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করে জাতির জনকের নির্দেশিত নীতির আলোকে পরিচালিত বর্তমান সরকারের জাতীয় উন্নয়ন ও সুশাসনবিষয়ক বিভিন্ন অগ্রাধিকারসমূহ তুলে ধরবেন। এর পাশাপাশি, বিশ্বশান্তি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগণের ক্ষমতায়ন, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইত্যাদি ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নরডিক দেশ সফর ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৩-১০ সেপ্টেম্বর চারটি নরডিক দেশ সফর করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অবহিত করা হয়। তিনি এই সময়ে নরওয়ে, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড ও সুইডেন সফর করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নরওয়ের কোম্পানি স্কাটেক সোলার বাংলাদেশে ৮শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুত প্লান্ট স্থাপনের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। আর গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার বিষয়ে আইসল্যান্ড বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে। এছাড়া আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
×