ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কূটনীতিকদের আজ ব্রিফ করা হবে

বিদেশীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনে আনসার নিয়োগ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিদেশীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনে আনসার নিয়োগ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদেশীদের নিরাপত্তায় নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরতে বিদেশী কূটনীতিকদের ব্রিফ করবে সরকার। আজ রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন পদ্মায় এই ব্রিফের আয়োজন করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাদের ব্রিফ করবেন। সেখানে বিদেশীদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে সশস্ত্র আনসার নিয়োগের প্রস্তাব দেয়া হবে। ঢাকায় অবস্থানরত সকল বিদেশী দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের রবিবারের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বিদেশী মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করবেন। এর আগে বিদেশী কূটনৈতিক মিশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্সের এক বৈঠকে নিরাপত্তায় বিদেশী মিশনকে সশস্ত্র আনসার ভাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলার প্রেক্ষিতে বিদেশীদের নিরাপত্তা জোরদারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। বিদেশী কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যেই রাজধানীর গুলশান, বারিধারা ও বনানীসহ কূটনৈতিক জোনে টহল, গুলশান লেকে টহল, বিভিন্ন চেকপোস্টে তল্লাশি, কূটনৈতিক এলাকায় বিশেষ বাস ও রিক্সা চালুসহ আরও যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেটা অবহিত করা হবে। এছাড়া কূটনীতিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন মতামতও নেয়া হবে। সূত্র জানায়, বিদেশীদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিভিন্ন মিশন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিসে সশস্ত্র আনসার নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোন মিশন ও সংস্থা প্রয়োজনে সরকারের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে আনসার নিতে পারবে। তবে সশস্ত্র আনসার নিতে হলে প্রতি আনসার সদস্যের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট মাসে আড়াইশ’ ডলার ( প্রায় ২০ হাজার টাকা) পরিশোধ করতে হবে। প্রতি আনসারের জন্য আড়াইশ ডলার নেয়ার জন্য বিদেশীদের কাছে যুক্তি তুলে ধরা হবে। কেননা প্রত্যেক আনসার নির্ধারিত সময় ডিউটি করবেন। এ ক্ষেত্রে আনসারদের ওই মিশনে আনা-নেয়ার জন্য ব্যয় হবে। তার বাইরেও অনেক ব্যবস্থাপনা খরচ রয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে প্রত্যেক আনসার সদস্যকে ভাড়ার জন্য মাসিক আড়াইশ’ ডলার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশী কূটনীতিকরা নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের কাছে ইতোমধ্যেই ছয়টি সুপারিশ করেছেন। সেসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, কূটনৈতিক জোনে নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিদেশী ক্লাবে নিরাপত্তা প্রদান, বিদেশী প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিরাপত্তা বৃদ্ধি, ঢাকার বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অফিসে নিরাপত্তা নিশ্চিত, বিমানবন্দরে চেক আউট ও চেক ইনের সময় বিদেশীদের নিরাপত্তা প্রদান ও ঢাকার বাইরে থাকা সকল বিদেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিদেশীদের নিরাপত্তায় সরকার থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পরে বেশ কয়েকটি দূতাবাসের পক্ষ থেকে আরও কয়েকটি দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে জাপান দূতাবাস থেকে তাদের সকল প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রধারী নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আর বুলেট প্রুফ গাড়ি ব্যবহারেরও অনুমতি চেয়েছে বেশ কয়েকটি দূতাবাস। তবে সরকার থেকে তাদের বুলেট প্রুফ গাড়ির বদলে আর্মড ভেহিকেল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন দূতাবাসে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বেসকারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীদের অস্ত্রবহন ও বুলেট প্রুফ গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি আগে কখনও দেয়া হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএইড) কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান নির্মমভাবে খুন হওয়ার প্রেক্ষিতে নিজ দেশের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদারের একটি বেসরকারী নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের অস্ত্র বহনের অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন দূতাবাসের ওই অনুরোধে সাড়া দেয়নি সরকার। তবে গুলশানে হামলার পর আবারও বেসরকারী নিরাপত্তা প্রহরীদের অস্ত্রবহন ও বুলেট প্রুফ গাড়ি ব্যবহারের অনুমতির বিষয়টি সামনে চলে আসে। তবে সরকার থেকে বিভিন্ন পর্যালোচনার পরে বিদেশীদের নিরাপত্তায় সশস্ত্র আনসার নিয়োগ দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়।
×