ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানী দুর্গন্ধমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে দুই সিটির বিশেষ উদ্যোগ

৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরাতে হবে কোরবানির পশুর বর্জ্য

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সরাতে হবে কোরবানির পশুর বর্জ্য

মশিউর রহমান ॥ রাজধানীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। ঢাকার দুই সিটিতে সম্ভাব্য ৪ লাখ কোরবানির পশু জবাইয়ের আগে ও পরে জমা হওয়া বর্জ্য পরিষ্কার করার রাজধানীকে দুর্গন্ধমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতেই দুই মেয়র দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে দুই সিটিতে দায়িত্ব পালনকারী বর্জ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। এজন্য দুই সিটি ও এর আশপাশের নতুন যুক্ত হওয়া মোট ১৬টি ইউনিয়নে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশপাশি নিয়োজিত থাকছে প্রায় ১৩ হাজার পরিচ্ছন্ন কর্মী। ২ সিটির সকল বর্জ্য ঈদের দিন দুপুর থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই অপসারণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে। দুর্গন্ধ ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে পশুর রক্ত ও মাটিতে লেগে থাকা বর্জ্যরে উপরে পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক তরল ও ব্লিসিং পাউডার ছিটানো হবে। ফলে কোরবানির কারণে সৃষ্ট কোন প্রকার দুর্গন্ধ থাকতে দেয়া হবে না। আসন্ন কোরবানির ঈদে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রায় ৪ লাখ পশু কোরবানি করা হবে বলে মনে করছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (উত্তর-দক্ষিণ)। এ থেকে কমপক্ষে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন হবে। প্রতিবছর এসব বর্জ্য অপসারণে হিমশিম খেতে হয় নগর ভবনকে। পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ বছর সে হারে প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থা দু’টি। এ বছর কোরবানির বর্জ্য অপসারণে দুই মেয়র সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন ৪৮ ঘণ্টা। এ সময়ের পর কোন বর্জ্য কেউ যেন রাস্তায় পড়ে থাকতে না দেখেন তা কঠোরভাবে মনিটর করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তাই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। এছাড়া নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণে নগরবাসীকে সচেতন করতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। দৈনিক সাপ্তাহিক পত্রিকা, টিভি, রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা অব্যহত রয়েছে। জাতীয় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি মসজিদ মাদ্রাসার ইমাম খতিব ও শিক্ষকদেরও এ কাজে জড়ানো হয়েছে। নাগরিকদের মাঝে এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে কয়েক হাজার লিফলেট। দুই সিটি ২৪টি পশুর হাট ও প্রতিটি বাড়িতে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে ৪ লাখের বেশি চটের ব্যাগ। ইতোমধ্যে সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। অপরদিকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বর্জ্য অপসারণ প্রস্তুতি থেমে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ সকালে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হককে এ সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতির খবর সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। পাশপাশি সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলররা যথাযথ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবছর ঢাকা দক্ষিণের ৫৭টি ওয়ার্ডসহ নতুন ইউনিয়নগুলোতে কোরবানির জন্য সম্ভাব্য জবাইকৃত পশুর সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার বা এর কিছু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন যুক্ত হওয়া ৮টি ইউনিয়ন ছাড়া পুরাতন ৫৭টি ওয়ার্ডে পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫শ’ ৪টি স্থান। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল বর্জ্য অপসারণের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন সংস্থার মেয়র সাঈদ খোকন। এজন্য গত কয়েকদিন ধরে সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে দফায় দফায় মতবিনিময় করে চলেছেন মেয়র। নাগরিকদের এ বিষয়ে অধিক সচেতনতা গড়ে তুলতে সমাজের সকল শ্রেণীর নাগরিকদেরকে সাথে নিয়ে সচেতনতামূলক র‌্যালি করছেন। এ সংক্রান্ত সার্বিক কর্মকান্ড সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে তিনি সংস্থায় নিয়োজিত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সম্পন্ন করেছেন। শুনেছেন কর্মীদের কাজ করতে গিয়ে তাদের নানা সমস্যার কথা। দিয়েছেন তাৎক্ষণিক পরামর্শ ও সমাধান। বর্জ্য পরিষ্কারে যারা ভাল কাজ করবেন তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
×