ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এসব কোম্পানির নেই রিক্রুটিং লাইসেন্সও

সিঙ্গাপুরে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর নামে প্রতারণা চলছেই

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সিঙ্গাপুরে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর নামে প্রতারণা চলছেই

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ সিঙ্গাপুরে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা চলছেই। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোন কোনটির আবার রিক্রুুটিং লাইসেন্সও নেই। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি চক্রের সহায়তায় তারা কর্মী পাঠানোর অনুমোদন নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর্মীরা সিঙ্গাপুর গিয়ে নির্ধারিত বেতন ও অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যে কাজের কথা বলে তাদের নেয়া হচ্ছে সেখানে গিয়ে তারা সে কাজ পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় এক বছর পার হয়ে গেলে তাদের আর নতুন করে ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের সুযোগ থাকছে না। স্বাভাবিক কারণেই শূন্য হাতেই তাদের ফেরত আসতে হয়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, প্রোগ্রেসিভ টেস্ট সেন্টার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য ট্রেনিং সেন্টার পরিচালনা করছে দীর্ঘদিন ধরে। ট্রেনিং সেন্টারের মালিক চীনা বংশোদ্ভূূত সিঙ্গাপুরের নাগরিক ভিক্টর লী সিওং কি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৭ সালে ২৯ এপ্রিল প্রোগ্রেসিভ টেস্ট সেন্টার প্রাইভেট লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি ‘লিমিটেড কোম্পানি’ হিসাবে নিবন্ধন লাভ করে। ২০১২ সালের ৮ মে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতর থেকে কোম্পানি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। কোম্পানি বিলুপ্ত ঘোষণার তথ্য গোপন করে প্রতিষ্ঠানটি গত চার বছর ধরে বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ করে সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠাচ্ছে। ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট প্রোগ্রেসিভ সেন্টার সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠানোর জন্য ওয়েসিস সার্ভিসেস রিক্রুটিং এজেন্সি ও জিহান ওভারসিস রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত হয়। এছাড়া এই কোম্পানির কর্ণধার সম্প্রতি বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠানোর ব্যয় কমানোর প্রস্তাব করে। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তিনি সিঙ্গাপুরে ৪-৫ লাখ টাকায় কর্মী নেয়ার প্রস্তাব দেন। অথচ সিঙ্গাপুরে কর্মী পাঠানোর জন্য সরকার নির্ধারিত ফি এক লাখ টাকারও নিচে। বিলুপ্ত কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং সরকার নির্ধারিত সীমার কয়েকগুণ বেশি অর্থে কর্মী নিয়োগের প্রস্তাব তিনি কিভাবে মন্ত্রণালয়ে দিয়েছেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু প্রোগ্রেসিভ টেস্ট সেন্টারই নয়, নোভা সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টার নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠান একই কাজ করে যাচ্ছে। ট্রেনিং পরিচালনার নামে কোন প্রতিষ্ঠানের সরকারের অনুমোদন নেই। অথচ নোভা সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টার কোরিয়ান মালিকানাধীন একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কর্মী পাঠানোর জন্য সিঙ্গাপুরের এমপ্লয়মেন্ট জেএলইউ গ্লোবাল ক্যারিয়ার পিটিই লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। নোভা সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টারের সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়েলটেক এমপ্ললয়মেন্ট সার্ভিসেস ও সিঙ্গাপুরের জেএলইউ গ্লোবাল ক্যারিয়ার পিটিই লিমিটেডের সঙ্গে করা হয় ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। সিঙ্গাপুর গমনেচ্ছু কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাহি স্কিল সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে জনশক্তি পাঠানোর অপচেষ্টায় রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরেই প্রতারণার অভিযোগ আছে। এখন এই প্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘মাহি ট্রেনিং সেন্টার’। এর বাইরে আশুলিয়া, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ডিওসি ট্রেনিং সেন্টার, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ ট্রেনিং সেন্টার, এশিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালসহ অননুমোদিত ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমেও সিঙ্গাপুর গমনেচ্ছু কর্মীদের প্রতারিত করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে অফিস দেখিয়ে অবৈধভাবে জনশক্তি রফতানির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সিঙ্গাপুর থেকে ডেলিগেট আনার নাম করে প্রশিক্ষণের নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিরীহ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামসুন্নাহারের কাছে জানতে চাইলে এমন অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, অনেক কোম্পানির লাইসেন্স নেই। এরপরও তারা কর্মী পাঠায়। বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কেউ কর্মী পাঠালে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্সের প্রধান ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আকরাম হোসেনও বলেন, এমন বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগেও এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×