ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় কালবৈশাখী টর্নেডো অতি ও অনাবৃষ্টি বিষয়ে নিখুঁত পূর্বার্ভাস দিতে পারবে আবহাওয়া অধিদফতর ;###;প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকে উঠছে আজ

১৮৬ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে জাইকা ॥ ঢাকা ও রংপুরে দুটি ডপলার রাডার প্রতিস্থাপন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

১৮৬ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে জাইকা ॥ ঢাকা ও রংপুরে দুটি ডপলার রাডার প্রতিস্থাপন হচ্ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ জাপানী সংস্থা জাইকার সহায়তায় রংপুর ও ঢাকায় ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে স্থাপন করা হয় কনভেনশনাল রাডার সিস্টেম (আবহাওয়ার গতানুগতিক পূর্বাভাসের জন্য)। প্রায় দেড় যুগ পর জাইকার অনুদানেই ওই দুটি রাডার সিস্টেমের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। দ্রততম সময়ে আবহাওয়ার ‘নিখুঁত’ পূর্বাভাস পেতে বসানো হচ্ছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ডপলার রাডার। এটি স্থাপিত হলে আবহাওয়া অধিদফতর ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডো, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ইত্যাদির আরও সঠিক ও সময়মতো পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবে। এতে জানমালের রক্ষা হবে ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমবে। এছাড়া বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে (এভিয়েশন) অধিকতর নিরাপত্তা এবং নৌ-সমুদ্রগামী যানসমূহের আরও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা যাবে। অনুদানের অর্থে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প তৈরি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২০৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। বাকি ১৮৬ (প্রকল্প ব্যয়ের ৮৯ শতাংশ) কোটি টাকা জাইকার কাছ থেকে পাওয়া যাবে অনুদান হিসেবে। সোমবার পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ‘ঢাকা ও রংপুরে আবহাওয়া রাডারের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করার কথা। অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে জাইকার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় দেশের পাঁচটি স্থানে আবহাওয়া অধিদফতরের জন্য রাডার স্থাপন করা হয়। স্থানগুলো হলোÑ ঢাকা, কক্সবাজার, খেপুপাড়া, মৌলভীবাজার ও রংপুর। এর মধ্যে ঢাকা ও রংপুরের দুটি রাডার বসানো হয় প্রায় দেড় যুগ আগে। আয়ুস্কাল উত্তীর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে রংপুর রাডারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে এবং ঢাকা রাডারের অপারেশনাল ও টেলিযোগাযোগ কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী বহুতল ভবন নির্মাণ এবং শিল্প উন্নয়নের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও এই রাডার দুটির খুচরা যন্ত্রাংশ বিশ্ব বাজারে সহজলভ্য না হওয়ায় সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। তাই রাডার দুটি প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানায়, দেশে জীবনমৃত্যুর ক্ষেত্রে আবহাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একমাত্র আবহাওয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই অত্যাধুনিক আবহাওয়া যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকতর সঠিক আবহাওয়া পূর্বাভাস তাৎক্ষণিক প্রদান করা অগ্রধিকার ভিত্তিক বিষয়। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের তরফে রাডারের আধুনিকায়নের প্রস্তাব করা হলে জাপান সরকার এতে সম্মতি জানায়। এ লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৪ জুন দুই দেশের মধ্যে বিনিময় নোট ও অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী জাপান সরকার জাইকার মাধ্যমে রাডারের আধুনিকায়নের জন্য রাডার টাওয়ার ভবন নির্মাণসহ দুটি অত্যাধুনিক এস-বেন্ড ডপলার রাডার স্থাপনের জন্য ১৮৬ কোটি টাকা অনুদান হিসাবে প্রদান করে। সে অনুযায়ী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা ও রংপুরের আবহাওয়া রাডারের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) ওপর ২০১৬ সালের ২৭ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা হয়। সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ডিপিপি পুনর্গঠন করে ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট ফের পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্প সূত্রে গেছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা এবং রংপুরের পুরান রাডার দুটি অত্যাধুনিক এস-বেন্ড সলিড স্টেট ডপলার রাডার দ্বারা প্রতিস্থাপন করে অন্য তিনটি ডপলার রাডারের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। এতে ঢাকাস্থ আবহাওয়া অধিদফতরের প্রধান অফিসে কমন প্লাটফরমে কম্পোজিট ভিজুয়ালাইজেশন ইমেজারিস (সারাদেশের সামগ্রিক দৃশ্যমান ছায়া চিত্র) তৈরি হবে। ফলে পাঁচটি রাডার হতে সৃষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ ছায়াচিত্রের মাধ্যমে আবহাওয়ার অধিকতর সঠিক ও আগাম তথ্য প্রদান করা সম্ভব হবে। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাডার কেন্দ্র থেকে ২০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ঝড়ের গতিবেগ সর্বোচ্চ ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্ণয় করা যাবে। আর রাডার কেন্দ্র থেকে ৪৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে প্রতি ঘণ্টায় কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হবে তার পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব হবে। আর ঢাকার ঝড়-সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাডার ইমেজের কম্পোজিট ছবি পাওয়া যাবে। প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম হচ্ছেÑ দুটি রাডার টাওয়ার নির্মাণ, দুটি এস-বেন্ড রাডার সিস্টেম স্থাপন, আবহাওয়া রাডার উপাত্ত প্রদর্শন সিস্টেম স্থাপন, আবহাওয়া রাডার উপাত্ত প্রেরণ যন্ত্র স্থাপন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক নির্মাণ কাজ। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত দুটি ডপলার রাডার প্রতিস্থাপনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে জাপান সরকার ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব মেটেওরোলজিক্যাল রাডার সিস্টেম ইন ঢাকা এ্যান্ড রংপুর’ শীর্ষক কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এক কোটি ৮২ লাখ টাকা প্রদান করে। জাইকা নিয়োজিত পরামর্শকের মাধ্যমে রাডার দুটির টাওয়ারের উচ্চতা নির্ধারণ, টাওয়ার ভবনের স্থাপত্য নক্সাসহ কাঠামোগত নকশা প্রণয়ন, রাডার যন্ত্রের ‘ডিটেল্ড স্পেসিফিকেশন’ তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা ও রংপুরের পুরান রাডার দুটি অত্যাধুনিক রাডার দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হবে। এছাড়া বিদ্যমান অন্য তিনটি রাডারের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং করে আবহাওয়া অধিদফতরের প্রধান অফিসে একটি কমন প্লাটফরম স্থাপন করা হবে। এতে দেশের যে কোন স্থানে সম্ভাব্য কালবৈশাখী, টর্নেডো এবং সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কম্পোজিট ভিজুয়ালাইজেশন বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদফতর ঢাকার প্রধান অফিস হতেই অধিকতর সঠিক ও আগাম তথ্য প্রদান করা সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ-ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, আকস্মিক বন্যা, টর্নেডো, কালবৈশাখী ইত্যাদি হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস সতর্কবাণী প্রদানকারী একমাত্র সরকারী সংস্থা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঠিক ও সময়মতো নির্ভুল পূর্বাভাস প্রদানের মাধ্যমে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি লাঘবে এ অধিদফতর কাজ করে।
×