ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য ২২ বছরে পদার্পণ

২১ বছরে সাড়ে ১১শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আয়

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

২১ বছরে সাড়ে ১১শ’ কোটি টাকার রাজস্ব আয়

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য ২১ বছর অতিক্রম করে ২২তম বছরে পদার্পণ করেছে। ২১ বছরে টেকনাফ স্থলবন্দর কাস্টম্স কর্মকর্তারা মোট রাজস্ব আয় করেছে ১ হাজার ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৪ টাকা। ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দেশের টেকনাফ এবং মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপে পৃথক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণভাবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। স্বল্প পরিসরে চালু হওয়া সীমান্ত বাণিজ্য হাঁটি হাঁটি পা পা করে ২২তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। অবকাঠামোসহ নানা ধরনের সমস্যা এবং সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বে¡ও সরকার টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে। রফতানি বাণিজ্যের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন পণ্য। সরকার সীমান্ত বাণিজ্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে ক্রমান্বয়ে তা নিরসন করতে উভয় দেশের সীমান্ত এলাকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করেছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার ট্রেড জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। বাংলাদেশের টেকনাফ ও কক্সবাজার এবং মিয়ানমারের মংডুসহ বিভিন্ন শহরে ইতোমধ্যে ওই গ্রুপের ৮টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ সমস্যাসমূহ দূরীকরণের সুপারিশ এবং প্রস্তাব তৈরি বিশেষত বর্ডার হাট চালু ইত্যাদি চূড়ান্ত করা হয়েছে অনুষ্টিত সভাগুলোতে। যা টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে গত ২ বছর ধরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডার ট্রেড জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি। জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য চালু হওয়ার পর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২১ বছরে টেকনাফ স্থলবন্দর কাস্টম্স মোট রাজস্ব আয় করেছে ১ হাজার ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৪ টাকা। ২১ বছরে টেকনাফ স্থলবন্দর থেকে ১৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৯৭ হাজার ২২০ টাকা মূল্যের বাংলাদেশী পণ্য মিয়ানমারে রফতানি হয়েছে। একাধিক ব্যবসায়ী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ঘটনা বহুলের মধ্য দিয়ে ২১তম বর্ষ সম্পন্ন করে ২২তম বর্ষে পদার্পণ করলেও বর্ষপূর্তি এবং নববর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ, আমদানি-রফতানিকারক, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন বা সরকারী বেসরকারী কোন সংস্থা কোন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। স্বল্প পরিসরে শুরু হওয়া এই সীমান্ত বাণিজ্য বর্তমানে সম্ভাবনাময় বিশাল ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য চালু হওয়ার পর প্রথম ৪ আর্থিক বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত বার্ষিক রাজস্ব আয়ের কোন লক্ষ্যমাত্রা ছিল না। ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৭৯ লাখ ৯৮ হাজার ১১৬ টাকা। রফতানি মূল্য ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৭ টাকা। ১৯৯৬-১৯৯৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার ২৫৮ টাকা। রফতানি মূল্য ছিল ১ কোটি ৮১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৬ টাকা। ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৯৫ টাকা। রফতানি মূল্য ছিল ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ৭৮০ টাকা। ১৯৯৮-১৯৯৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ কোটি ৮২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬৯ টাকা। রফতানি মূল্য ৭৪ লাখ ১০ হাজার ৯৭৩ টাকা। ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। রাজস্ব আয় হয় ৮ কোটি ৩০ লাখ ১০ হাজার ৩২৬ টাকা। রফতানি মূল্য ৪৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬৫ টাকা ইত্যাদি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মাসিক রাজস্ব আয়ের বাজেট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। উক্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৭৬টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে শুধু কাস্টমস খাতেই রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ২৩ হাজার টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা বেশি আয় হয়েছে। সব মিলে রাজস্ব আয় হিসাব করলে ১ কোটি ৫২ লাখ ৬৯ হাজার ৩০১ টাকা বেশি আয় হয়েছে। জুলাই মাসে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৫ টাকা মূল্যের পণ্য মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে। তন্মধ্যে ১৭ কোটি ৮৯ লাখ ৭৯ হাজার ১২৬ টাকা মূল্যের পণ্য শুল্কযুক্ত এবং ২৭ লাখ ১০ হাজার ১২৯ টাকা মূল্যের পণ্য শুল্কমুক্ত। উক্ত মাসে ২৩টি চালানে ৭৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৭ টাকা মূল্যের বাংলাদেশী ২৬ আইটেমের পণ্য টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারে রফতানি হয়েছে। গত মাস আগস্টে মাসিক রাজস্ব আয়ের বাজেট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। উক্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৭৬টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে সব মিলে রাজস্ব আয় করেছে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮৭ টাকা। আগস্ট মাসে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ৪৪ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৩৬ টাকা মূল্যের পণ্য মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে। তন্মধ্যে ৪৩ কোটি ৫২ লাখ ৩৮ হাজার ৯২৫ টাকা মূল্যের পণ্য শুল্কযুক্ত এবং ৪৯ লাখ ৫৯ হাজার ৪১১ টাকা মূল্যের পণ্য শুল্কমুক্ত। উক্ত মাসে ৫৫টি চালানে ২ কোটি ৬০ লাখ ২৫ হাজার ৯২১ টাকা মূল্যের বাংলাদেশী ৪১ আইটেমের পণ্য টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারে রফতানি হয়েছে।
×