ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চে এলো সুবচনের নাটক প্রণয় যমুনা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মঞ্চে এলো সুবচনের নাটক প্রণয় যমুনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাধা আর কৃষ্ণের প্রেম আখ্যানে আজো আলোড়িত হয় যে কোন প্রেমিক যুগল। তাই প্রেমের চিরায়ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন রাধাকৃষ্ণের প্রণয় আখ্যান। সেই অমর প্রেমলীলাকে উপজীব্য করে মঞ্চে এলো সুবচন নাট্য সংসদের নতুন নাটক ‘প্রণয় যমুনা’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রাধাকৃষ্ণ উপন্যাস অবলম্বনে নাট্যরূপ দিয়েছেন আসাদুল ইসলাম। নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে সুবচনের ৩৭তম প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো। প্রদর্শনীর আগে ছিল নাটকটির উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা। উদ্বোধন করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রখ্যাত অভিনয়শিল্পী শিমূল ইউসুফ। সংক্ষিপ্ত কথনে অংশ নেন আসাদুল ইসলাম ও সুদীপ চক্রবর্তী। নাটকের কাহিনীজুড়ে আছে অভিসার, বিরহ-মিলন, বৃন্দাবন, বাঁশির সুর আর স্রোতস্বিনী যমুনা । শুরুতেই দেখায় যায়, যমুনার তীরে বাঁশি বাজিয়ে ও নৌকা ভাসিয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে কৃষ্ণ। সেই নদী পারেই অপরূপা রাধার দেখা পায় কৃষ্ণ। তারপর থেকেই রাধার ছবিটি কৃষ্ণের মনে গাঁথা হয়ে যায়। বন্ধুদের সাহচর্যে কৃষ্ণ কৌশলে শুল্ক আদায়কারীর ছদ্মবেশে রাধার কাছে প্রেম নিবেদন করে, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়। এরপর মাঝির বেশ ধরে রাধাকে কৌশলে নৌকায় তুলে যমুনা পাড়ি দেয় কৃষ্ণ। যমুনার জলতরঙ্গে ভাসতে থাকা দুটি প্রাণ পরস্পরের খুব কাছাকাছি হয়। রাধা এবার আর কৃষ্ণকে উপেক্ষা করতে পারে না। মনের মধ্যে প্রেমের তরঙ্গ নিয়ে ঘরে ফেরে রাধা। যমুনার কূলে কৃষ্ণের বাঁশি শুনে ঘর ছেড়ে ছুটে আসে রাধা। ভালবাসার অসুখে ভুগে প্রেমে পাগলপারা রাধার স্বাস্থ্যহানি ঘটলে চলে যায় ব্রজপুরী, তার বাপের বাড়ি। সেখানেও হানা দেয় কৃষ্ণ। যমুনার তীরে পূর্ণিমার রাতে তাদের আবার দেখা হবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যখন কৃষ্ণ বৃন্দাবনের পথে পা বাড়ায়, পথিমধ্যে দেখা হয় সান্দীপণী ঋষির সঙ্গে। ঋষি কৃষ্ণের বিস্মৃতি ভাঙায়। রাজা কংসের কারাগারে কৃষ্ণের বাবা-মা বন্দী। তাদের উদ্ধার করে ও ধরণীকে পাপমুক্ত করতে ভালবাসা ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানায় কৃষ্ণকে। সে তা ফেরাতে পারে না। কৃষ্ণকে পাড়ি দিতে হয় অজানা পথে। তাই বলে ভালবাসা মরে না। একদা কৃষ্ণ যে দীপ জ¦ালিয়ে ছিল রাধার মনে, ভালবাসার সেই দীপ হাতে রাধা যমুনার তীরে এসে দাঁড়ায়। কৃষ্ণের ফিরে আসার অপেক্ষায় রাধা নিশ্চল। নাটকে কৃষ্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুল হক রাসেল। রাধা চরিত্রে রূপ দিয়েছেন সোনিয়া হাসান। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আহাম্মেদ গিয়াস, মোহাম্মদ আনসার আলী, মেহেদী হাসান সোহাগ, হোসেন ইমরান, তানভীর দীপু, ইমতিয়াজ শাওন, শাহ সালাউদ্দিন, আলামিন, মারুফ, সবুজ, আরিফ মহিউদ্দিন ও জাকারিয়া। নাটকটির সহযোগী নির্দেশক আহাম্মেদ গিয়াস, সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আমিরুল ইসলাম বাবুল, আলোক পরিকল্পনা করেছেন গর্গ আমিন। বইপড়া কর্মসূচীর পুরস্কার বিতরণী ॥ তারা সবাই বইপড়–য়া শিক্ষার্থী। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও সৃজনশীল বইয়ের প্রতি রয়েছে তাদের বিশেষ আকর্ষণ। এমন বইপ্রেমী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৩৮ বছর ধরে বইপড়া কর্মসূচী চালিয়ে আসছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রমে একাদশ শ্রেণীর বইপড়া কর্মসূচীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো পুরস্কার বিতরণী উৎসব-২০১৬ । শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় ঢাকা মহানগরের সেরা ১৫টি কলেজ ও কেন্দ্রভিত্তিক বইপড়া কর্মসূচীর মোট ৭৫২ ছাত্রছাত্রীকে তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকের উপস্থিতিতে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ডাঃ আব্দুন নূর তুষার, আইএফআইসি ব্যাংকের হেড অব বিজনেস শাহ মোঃ মঈনুদ্দীন ও হেড অব ব্রান্ডিং মোঃ আসাদুজ্জামান। তারা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার পাশাপাশি আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করে আইএফআইসি ব্যাংক । শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, বেদনার মধ্য দিয়ে যে মহত্ত অর্জন করা যায়, আনন্দের মধ্য দিয়ে তা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। বই পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করে আলোকিত মানুষ হওয়া যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বই কেন ভাল? বই এমন একটা জিনিস, যেখানে এমন একটি জিনিস থাকে শ্রেষ্ঠ মানুষের আত্মার আলো জ্বলে। সেই আলো নিজের মধ্যে নিতে পারলে জীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে। আনিসুল হক বলেন, বিশ্বের অন্যতম বড় ধনীদের একজন মাক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিলগেটস ছোটবেলা থেকেই স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন। বই পড়েই সফল হয়েছেন স্বপ্নবাজ এই মানুষটি। অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সন্তানরা ভাল যে বিষয় বা জিনিসটি পছন্দ করে, তাদের সে দিকে ধাবমান করার চেষ্টা করুন। তাহলে তারা সেখানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা প্রত্যেকেই যদি আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠো গড়ে উঠবে আলোকিত দেশ । অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৫ সালে ঢাকা মহানগরের ১৫টি কলেজ কেন্দ্রভিত্তিক বইপড়া কর্মসূচীতে মোট ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে আজ ৭৫২ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীরা বাংলা সাহিত্য ও পৃথিবীর কিশোর সাহিত্যের সেরা ১২টি বই পড়ার সুযোগ পেয়েছে। একটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থদের পাঠ মূল্যায়ন করে পঠিত বইয়ের ওপর ভিত্তি করে চারটি শাখায় পুরস্কারপ্রাপ্তদের নির্বাচন করা হয়েছে। মূল্যায়ন পর্বে যারা ৬টি বই পড়েছেন তারা পেয়েছে স্বাগত পুরস্কার, যারা ৮টি বই পড়েছে তারা শুভেচ্ছা পুরস্কার, যারা ১০টি বই পড়েছে তারা অভিনন্দন পুরস্কার এবং যারা ১২টি বই পড়েছে তারা পেয়েছে সেরা পাঠক পুরস্কার। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সারাদেশে আলোকিত, উচ্চ মূল্যবোধ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ৩৮ বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম নামে একটি বইপড়া কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। কর্মসূচীর ভেতর দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের মন ও বয়সের উপযোগী বাংলা ভাষাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার শ্রেষ্ঠ বইগুলো পড়ার সুযোগ পায়। বর্তমান সারাদেশে প্রায় ১৪ হাজার স্কুল ও কলেজে এই বইপড়া কর্মসূীচ পরিচালিত হচ্ছে। কর্মসূচীতে এ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী সদস্যের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ২০১৫ সালে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন কলেজে এই কর্মসূচী সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়েছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে বলা হয়, কলেজভিত্তিক ফলে, কেন্দ্রীয় কলেজ কর্মসূচী (ঢাকা মহানগর) আওতায় পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজয়ী ছাত্রছাত্রী ৫০, নটর ডেম কলেজের ১৪৭, হলিক্রস কলেজ ১৭৪, ভিকারুননিসা ন্যূন কলেজে ১০৫, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ৪৮, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ৩৪সহ মোট ১৫টি কলেজের সর্বমোট ৭৫২ ছাত্রছাত্রী এই পুরস্কার পেয়েছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সূত্র জানায়, চলতি ২০১৬ সালেও এ সকল প্রতিষ্ঠানে বইপড়া কর্মসূচী শুরু হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮শ’ ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করছে। বর্তমানে সদস্য সংগ্রহ চলছে। ঢাকা মহানগর এলাকার একাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া আগ্রহীর যে কেউ এ কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারে । যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘প্যাপিরাস’ ॥ রাজধানীর ধানম-ির গ্যালারি টোয়েন্টি ওয়ানে শুরু হলো যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘প্যাপিরাস’। গ্যালারি টোয়েন্টি ওয়ানের সঙ্গে যৌথভাবে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বিআইভিএবি। সমকালীন ১১ চিত্রশিল্পী সম্প্রতি মিসরের শিক্ষা সফরকালীন আঁকা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে মিসরের গিজার আহমেদ শাখায় জাদুঘরে একই চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ও মিসর দূতাবাসের চার্জ দ্যা এ্যাফেয়ার্স আহমেদ জাকি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন মাহমুদুল হক, নাসরিন বেগম, রোকেয়া সুলতানা, রেজাউন নবী, আফরোজা জামিল কঙ্কা, সোহানা শাহ্্রীন, শামীম সুব্রানা, মাহমুদুল ইসলাম বাবু, বিপাশা হায়াত, মাকসুদা ইকবাল নিপা ও গোলাম ফারুক স্বপন। আটদিনের এ প্রদর্শনী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। খুদে শিল্পীদের ক্যানভাসে নিসর্গের গল্প ॥ খুদে শিল্পীদের চিত্রিত হয়েছেন নিসর্গের বিচিত্র রূপ। ক্যানভাসে মেলে ধরেছে গ্রামবাংলার সবুজ-শ্যামলিমা। উঠে এসেছে গ্রামীণ জনপদের গল্প। নগরের নামী-দামী স্কুলপড়য়া শিশুর ১১৭টি ছবি নিয়ে শুক্রবার থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৫ নম্বর গ্যালারিতে আয়োজিত হলো ‘সিজন ফেস্টিভাল’ শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। শিশুদের মধ্যে সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে কাজ করে যাওয়া বেসরকারী সংগঠন লাইরা এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। চলতি বছর মার্চ মাসের আয়োজনটিতে অংশ নিয়েছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শতাধিক স্কুল। সেই প্রতিযোগিতা থেকে বাছাই করা ছবি নিয়ে প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে শিশুদের রং তুলির ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে বাংলার ষড়ঋতুর গল্প। বৈশাখের খরতাপ, বর্ষায় কর্দমাক্ত পথঘাট, শরতের মেঘমুক্ত আকাশ, হেমন্তে নবান্ন উৎসব, শীতের পিঠা উৎসব, বসন্তে ফুলের মেলা- এসবই নানাভাবে চিত্রিত হয়েছে ১১৭টি ক্যানভাসে। আয়লান কুর্দিকে নিয়ে মিউজিক ভিডিও ॥ পরিবারের সঙ্গে দেশান্তরী হয়ে শেষ পর্যন্ত আশ্রয়ের খোঁজ না পেয়ে সমুদ্রে ভেসে ওঠে সিরিয়ার শিশু আয়লান কুর্দির মৃতদেহ। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বরের ঘটনাটি প্রশ্নবিদ্ধ করে সারা বিশ্বের মানবতাকে। সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতা তুলে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াসে প্রকাশিত আয়লান কুর্দিকে নিয়ে মিউজিক ভিডিও। কায়েস হোসেন রচিত গানটিতে সুর দিয়েছেন এইচ আল বান্না। ভিডিও চিত্রটি নির্মাণ করেছেন শাহাদাৎ সেতু ও ইনজাম হাসান।
×