ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাতার থেকে অবৈধদের দেশে ফিরতে হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৯ আগস্ট ২০১৬

কাতার থেকে অবৈধদের দেশে ফিরতে হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ কাতার থেকে বাংলাদেশের কয়েক হাজার অবৈধ কর্মীকে দেশে ফিরতে হবে। অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশীদের জন্য তিন মাসের ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেছে কাতার কর্তৃপক্ষ। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সরকারের অনুমতি নিয়ে কাতার ছাড়ার সুযোগ পাবেন অবৈধরা। গত বৃহস্পতিবার কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণায় কোন বিদেশী আইনী পদক্ষেপ ছাড়াই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে পারবেন। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে কাতার কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি কিছু জানায়নি। তবে মন্ত্রণালয় বিষয়টি জেনেছে। কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। লেবার উইং কাতার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে বাংলাদেশী কর্মীদের অবস্থান সম্পর্কে জানাবে। তবে তারা উন্নয়ন কর্মকা-ে বাংলাদেশে থেকে দক্ষ আধাদক্ষ বিপুলসংখ্যক কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সূত্র মতে, সাধারণ ক্ষমায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর মধ্যে অবৈধদের স্ব স্ব দেশে ফিরে যেতে হবে। কাতার সরকারের পক্ষ থেকে এটি দ্বিতীয়বারের মতো ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করা হলো। যেসব বিদেশী আইন লঙ্ঘন করে কাতারে অবস্থান করছেন, তারা কোন ধরনের আইনী জটিলতা ছাড়া দেশত্যাগ করতে পারবেন। অবৈধ অভিবাসীদের কাতারের সিআইডি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার দেশে যাওয়ার ‘এক্সিট পারমিট’ বা ‘খুরুজ’ নিতে সুযোগ পাবেন। এর আগে ২০০৪ সালে এ ধরনের ঘোষণার আওতায় তিন মাসে প্রায় ৬ হাজার প্রবাসী এই সুবিধা নিয়েছিলেন। এবার অবৈধ কর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি। বিভিন্ন দেশের ২৫ থেকে ৩০ হাজার কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছে। কাতার থেকে এক বাংলাদেশী কর্মী টেলিফোনে জানান, এখানে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে ১ সেপ্টম্বর থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধ কর্মীদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফিরে না গেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার গবেষণা) আব্দুর রউফ জনকণ্ঠকে বলেন, কাতারের বিষয়টি অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন দেশে এরকম ঘোষণা দিয়ে অবৈধ কর্মীদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়। কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব এমন ঘোষণা দিয়ে অবৈধ কর্মীদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়েছে। কাতারও এমন করতে পারে। এটা নিয়মিত কাজ। বাংলাদেশের খুব বেশি কর্মী এর আওতায় পড়বে না। কারণ কাতারে বেশিরভাগ বাংলাদেশী কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। দেশটিতে প্রায় তিন লাখ কর্মী কাজ করছে। আমার কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার উইংয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়া কঠিন। তবে দেশটি বাংলাদেশ থেকে নতুন করে কর্মী নিয়োগ করবে এমন আশ্বাস দিয়েছে। সূত্র জানায়, সৌদি, লেবানন ও জর্দানের শ্রমবাজার খুলে যাওয়ায় কাতারও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার জন্য অবকাঠামো নির্মাণে বিপুলসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হবে। বিভিন্ন সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও তারা ২ থেকে আড়াই লাখ কর্মী নেবে। এ বছরের গোড়ার দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি কাতার সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন খলিফা আল থানি ও প্রশাসনিক উন্নয়ন, শ্রম ও সমাজ কল্যাণমন্ত্রী ড. ঈসা সাদ আলজাফালি আল নুয়াইমির সঙ্গে বৈঠকে এমন আশ্বাস দিয়েছেন। ঢাকায় আগামী মাসে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৫ সালে এক লাখ ২৩ হাজার ৯৬৫ কর্মী গেছে কাতারে।
×