ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ক্লোন প্রাণী কি জন্ম থেকেই বুড়ো

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৬ আগস্ট ২০১৬

ক্লোন প্রাণী কি জন্ম থেকেই বুড়ো

ক্লোন প্রাণী কি জন্ম থেকেই বুড়ো? তাদের বয়স কি অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে বাড়ে না? এই প্রশ্নগুলো বিজ্ঞানীদের ধাঁধায় ফেলেছে। প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য তারা একের পর এক গবেষণায় মাথা ঘামিয়ে চলেছেন। ক্লোন মেষগুলো নানাভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছেন। বিশ্বের প্রথম ক্লোন স্তন্যপায়ী প্রাণী ডলি নামের একটি ভেড়া। ছয় বছরের এক সুস্থ সবল ভেড়ার কোষ ক্লোন করে ডলিকে সৃষ্টি করা হয়। ডলির জন্ম হয় ১৯৯৬ সালের ৫ জুলাই। কিন্তু ছয় বছরের মাথায় ডলি এক ধরনের ফুসফুসের রোগে মারা যায়। যে রোগটা ভেড়াদের মধ্যে অতি সচরাচর দেখা যায়। আরও জানা যায় যে ডলির অস্টিও আর্থ্রাইটিস হয়েছিল। অস্টিও আর্থ্রাইটিস ছয় সাত বছরের ভেড়াদের হওয়ার কথা নয়। আরও বেশি বয়সীদের হওয়ার কথা। তার মানে কি ডলি তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যাচ্ছিল? কিংবা এই বুড়ো হওয়ার বৈশিষ্ট্যটা (যেমন অস্টিও আর্থ্রাইটিস হওয়া) তার গোড়া থেকেই ছিল? সেই উত্তর খুঁজে পাবার জন্য বিজ্ঞানীরা ডলির সহোদরদের দেহ পরীক্ষা করে দেখছেন। বলাবাহুল্য, ডলির চার সহোদররা ডেইজি, ডেবি, ডেনাইস ও ডায়ান। ডলিকে যে পূর্ণবয়স্ক ভেড়ার কোষ থেকে ক্লোন করা হয়েছিল এদেরও সেই একই ভেড়ার কোষ থেকে জন্ম দেয়া হয়। বর্তমানে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন একটি খামারে মোট ১৩টি ক্লোন ভেড়া রয়েছে। এদের মধ্যে পরীক্ষার জন্য ডেইজিকে বিশেষভাবে বেছে নেয়া হয়। ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ সান্ড্রা কর এই ভেড়াটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছেন। বিশেষ করে তিনি এর জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিগুলো দেখছেন কোন ধরনের তাপ বা ফোলা অনুভব করা যায় কিনা। হাঁটা-চলার সময় অস্থিসন্ধির হাড়ে হাড়ে ঘষা লাগার শব্দ বা পঙ্গুত্বের কোন লক্ষণ দেখা যায় কিনা। কিংবা এমন কিছু ধরা পড়ে কিনা যা থেকে অস্টিও আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোন রোগ শুরু হওয়ার লক্ষণ মনে হতে পারে। শুধু ডলির চার সহোদররা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুটং বনিংটন ক্যাম্পাসের খামারে রাখা ১৩টি ভেড়াকেও সেই একই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ভেড়াগুলোও যেন এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ধাতস্থ হয়ে গেছে। ঠিক যে উৎসাহিত হয়ে ওরা এগুলো গ্রহণ করছে তা নয় বরং নির্বিকারচিত্তে মেনে নিচ্ছে। তবে এটাও ঠিক যে পৃথিবীতে যেসব প্রাণীকে আজ অতি নিবিড় পর্যবেক্ষণাধীনে ও পরীক্ষাধীনে রাখা হয়েছে এরা তার অন্যতম। নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কেভিন সিনক্লেয়ার বলেছেন এসব পরীক্ষার ফলাফলের ওপর হয়ত ক্লোনিংয়ের গোটা বিজ্ঞানের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। বয়সের স্মৃতি এই প্রশ্নটি ক্লোনিং প্রক্রিয়া সম্পর্কিত একটি মৌলিক ভাবনার বিষয়। কেননা এর সঙ্গে একটা পূর্ণবয়স্ক প্রাণীর দেহকোষ থেকে ডিএনএ বের করে আনার বিষয়টি জড়িত। সেটা আবার যেমন তেমন কোষ নয়। এই কোষ পুরোদস্তুর বেছে আলাদা করে নেয়া এবং সেই কোষের অসংখ্যবার বিভাজন ঘটেছে। সেই কারণে কিছু কিছু বয়সঘটিত স্মৃতি কোষের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। অধ্যাপক সিনক্লেয়ার বলেন এর অর্থ হচ্ছে ক্লোন প্রাণী কোন না কোনভাবে আপনার প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি বয়সী হতে পারে। তিনি বলেন, নবজাতক ক্লোন মেষটিকে দেখতে লাগতে পারে মেষশাবকের মতো। কিন্তু কোষের বয়সের দিক থেকে দেখলে ওটার বয়স হবে অনেক বেশি। আর সে কারণেই বুড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব রোগব্যাধি আছে সেগুলো অতি অল্প বয়সেই এই প্রাণীটির মধ্যে দেখা দিতে পারে। ডলি সাড়ে ছয় বছর বয়সে মারা গিয়েছিল। একটা ভেড়ার জন্য সময়টা অপেক্ষাকৃত মাঝারি সময়। পালের বেশ কিছু ভেড়ার সঙ্গে ডলিও একটি ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে যা থেকে তার ফুসফুসে ক্ষত দেখা হয় এবং মৃত্যুর কারণ ঘটায়। কিন্তু তার আগে থেকেই ডলি অস্টিও আর্থ্রাইটিসে ভুগছিল। এ বয়সী ভেড়ার অস্টিও আর্থ্রাইটিস হওয়ার কথা একেবারে অশ্রুতপূর্ব তা নয়। তবে ডলির ক্ষেত্রে সেটা ঘটায় অকাল বার্ধক্যের বিষয় নিয়ে ভাবনার জন্ম হয়। তাই মূল দেহকোষ লাইনে ফিরে গিয়ে তা থেকে আরও ক্লোন সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ডলির অকাল মৃত্যুটা কি নিতান্তই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার ছিল, নাকি এর সঙ্গে ক্লোনিং প্রক্রিয়ার কোন না কোন ভাবে সম্পর্ক ছিল? আর্থ্রাইটিসের মতো বার্ধক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগগুলো কি ক্লোন প্রাণীদের ক্ষেত্রে অধিকতর সচরাচর দেখা যায়? অধ্যাপক সিনক্লেয়ার বলেন যে আমরা এই প্রশ্নগুলোরই উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করেছি এবং সেই উত্তর পাওয়ার জন্য ডলির জীবিত চার সহোদরা এবং ভিন্ন সেললাইন লেকে ক্লোন করা আরও ৯টি ভেড়াকে হাজারো রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের অধীনে আনা হয়। পরীক্ষার মধ্যে ছিল নিয়মিত অস্থিসন্ধির এক্স-রে এবং পুরো শরীরের এমআরআই স্ক্যানিং। অধ্যাপক সিনক্লেয়ার বলেন, পরীক্ষার মৃত্যুর আরও তিনটি কারণÑ কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ডায়াবেটিস ও অস্টিও আর্থ্রাইটিসের ওপরও দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয় যে রোগগুলো বুড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সর্বাধিক সম্পর্কিত। গবেষণার ফলাফল খুব শীঘ্রই জানা যাবে এবং তা ক্লোনিংয়ের ভবিষ্যতের ওপর সুগভীর তাৎপর্য ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, বিবিসি
×