ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রোকারেজ হাউস পরিদর্শন করবে কমিশন

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৬ আগস্ট ২০১৬

ব্রোকারেজ হাউস পরিদর্শন করবে কমিশন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে কাজের স্বচ্ছতা যাচাই ও কমপ্লায়েন্স পরিপালনের বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় পরিদর্শনের নিয়ম রয়েছে দেশের সিকিউরিটিজ আইনে। এরই ভিত্তিতে নিয়মিত ও বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আইন পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য বিগত সময়ে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসকে জরিমানাও করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরু থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে বিএসইসির নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, কমিশনের প্রতিনিধিরা ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় নিয়মিত পরিদর্শনে গেলে তা বাজারের লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল। তাই নিয়মিত পরিদর্শনের পরিবর্তে অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ পরিদর্শন ও তদারকি আরও বাড়ানো হয়েছে। এদিকে নিয়মিত পরিদর্শন বন্ধ থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনে ঘাটতি ও গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কমপ্লায়েন্স তদারকিতে দুই ধরনের পরিদর্শন পদ্ধতি রয়েছে বিএসইসির। এর মধ্যে প্রথমটি হলো, কোন ব্রোকারেজ হাউস বা স্টক ডিলারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিএসইসির পরিদর্শন, যাকে বিশেষ পরিদর্শন বলা হয়। দ্বিতীয়টি হলো, যে কোন সময় কারো অভিযোগ ছাড়াই কমিশন কর্তৃক ব্রোকারেজ হাউস ও স্টক ডিলারের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন। নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় সাধারণত হাউসগুলোয় গ্রাহকদের সমন্বিত হিসাবে টাকা আছে কিনা, ব্রোকারেজ হাউসগুলো সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যাংক অফিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ পরিদর্শনকালে ব্রোকারেজ হাউসের ওয়ার্ক স্টেশনের নির্ধারিত জায়গা ও অনুমোদিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হয় কিনা তা যাচাই করা হয়। এর বাইরে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ক্লায়েন্ট পেমেন্টের তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন ছাড়া কোন হিসাবে লেনদেন হচ্ছে কিনা, কোন হিসাবে কমিশন নির্ধারিত ৫ লাখ টাকার বেশি নগদে গ্রহণ হচ্ছে কিনা, কিংবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন হালনাগাদ করা আছে কিনা, তা তদারকি করা হয়। এছাড়া কোন ব্রোকারেজ হাউস তাদের পরিচালকদের নিয়মবহির্ভূত মার্জিন ঋণ দিয়েছে কিনা বা মার্জিন ঋণ বিতরণে সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করা হয়েছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরিদর্শনকালে কমিশনের প্রতিনিধি দল ব্রোকারেজ হাউসের সব হিসাব বই, রেজিস্টার প্রতিবেদন ও অন্য দলিলাদি পর্যালোচনা করেন। ফলে কমিশনের কাছে জবাবদিহিতার ভয়ে অনিয়ম থেকে দূরে থাকে ব্রোকারেজ হাউস ও স্টক ডিলাররা। তবে দীর্ঘদিন এ পরিদর্শন বন্ধ থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন কমে গেছে বলে মনে করছেন বিএসইসির কর্মকর্তারা। বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মূলত ব্রোকারদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের শুরু থেকেই নিয়মিত পরিদর্শন বন্ধ রয়েছে। পরিদর্শনের ফলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর মধ্যে ভয় কাজ করায় লেনদেনে তার প্রভাব পড়ে বলে অভিযোগ করা হলেও এতে হাউসগুলোর মধ্যে আইন পরিপালনের চর্চা তৈরি হয়। কোন হাউস সহজেই আইন অমান্য করে না। কেউ চাইলেই বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে না। এর বাইরে কমিশনের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের কারণে ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা সিকিউরিটিজ আইনের বিষয়গুলো ভালভাবে আয়ত্ত করারও একটি চাপ অনুভব করেন। তারা আরও জানান, বিএসইসি আগে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের তালিকা ধরে নিয়মিত পরিদর্শনে যেত। এতে বড় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর অধিকাংশই কমপ্লায়েন্সের আওতায় চলে এসেছে। তবে কিছু ব্রোকারেজ হাউসে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা কখনই না যাওয়ার কারণে এ হাউসগুলো বেশি অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ কমিশনে জমা হচ্ছে। এ কারণে কমিশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিদর্শন আবার চালু করা দরকার বলে মনে করছেন তারা। প্রসঙ্গত, ব্রোকারেজ হাউসের কাজের স্বচ্ছতার জন্য হাউসগুলোয় সরেজমিন পর্যবেক্ষণে আইন প্রণয়ন করে বিএসইসি। সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ ও প্রবিধান ৩৬-এর ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা অনুযায়ী, স্টক ডিলার এবং সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ধারা ৬(১) অনুসারে স্টক ব্রোকার বা অনুমোদিত প্রতিনিধিদের হিসাব এবং জমাকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা কমিশনকে দেয়া হয়েছে। এই আইনের অধীনে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে নিয়মিত পরিদর্শন করে আইনের ব্যত্যয় ও গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করার দায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে ব্রোকারেজ হাউসে লেনদেন বাড়াতে চলতি বছরের শুরু থেকে নিয়মিত পরিদর্শন বন্ধ রেখেছে কমিশন।
×