ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

রবিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি

রিভিউয়ে সব থেকে বেশি সময় পাচ্ছে মীর কাশেম

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৫ আগস্ট ২০১৬

রিভিউয়ে সব থেকে বেশি সময় পাচ্ছে মীর কাশেম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মীর কাশেম আলীর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শুরুর পর রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। অন্যদিকে আসামিপক্ষ সময়ের জন্য তিন সপ্তাহের জন্য যে আবেদন করেছিল তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। বেঞ্চে অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। শুনানিতে অংশ নেন মীর কাশেমের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের মামলায় কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন যেদিন দায়ের করা হয়েছে, তার পরদিনই শুনানি হয়েছে। কামারুজ্জামানের মামলায় রিভিউ দায়েরের ৩১ দিনের মাথায় শুনানি হয়েছে। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মামলায় ৩৪ দিন, নিজামীর মামলায় ৩৭ দিনের মাথায় রিভিউ শুনানি হয়েছে। মীর কাশেমের মামলায় রিভিউ দায়ের হয়েছে গত ১৯ জুন, আজ পর্যন্ত ৬৬ দিন চলে গেছে। তিনি বলেন, নানা অজুহাতে তারা (আসামিপক্ষের আইনজীবীরা) বলেছেন, মীর কাশেমের ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য আইনজীবী সময় চেয়েছেন। আপীল বিভাগ তাদের এ বক্তব্য গ্রহণ করেননি। আপীল বিভাগ শুনানি শুরু করতে বলেছেন। আগামী রবিবার বাকি শুনানিতে অংশগ্রহণ করবেন বলে কথা দিয়েছেন, ওইদিন শুনানি শেষ হবে বলে আমরা আশা করি। তিনি আরও বলেন, আদালত বলেছেন, আইনে রিভিউ আবেদনের কোন বিধান নেই। রিভিউ যে নেই- সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জোরাল যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিল। তবে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপীল বিভাগ তার সহজাত ক্ষমতায় তা দিয়েছেন। বুধবার সকাল পৌনে দশটায় রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হওয়ার পর দুই মিনিট শুনানি করেন মীর কাশেমের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। পরে রবিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপীল বেঞ্চ। কার্যতালিকার ৫ নম্বরে থাকা রিভিউ আবেদন সাড়ে ৯টার পর শুনানির জন্য আসলে খন্দকার মাহবুব দাঁড়ান। প্রস্তুতির জন্য দুই মাস চেয়ে আবেদন করার পর গত ২৫ জুলাই আদালত রিভিউ শুনানি এক মাস পিছিয়ে দেয়। এক মাস পর শুনানির জন্য আসলে ফের এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় শূরা সদস্যের আইনজীবীরা। বুধবার খন্দকার মাহবুব সময় আবেদনের কথা বললে প্রধান বিচারপতি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি যে যুক্তিতে সময় চেয়েছেন, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার ব্রাদার বিচারপতি এখানে আছেন। তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন। আপনি এরপর ৬ সপ্তাহ সময় পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জুলাই আপনি সময়ের আবেদন করেছেন। আমরা সময় দিয়েছি। অথচ রিভিউয়েরই কোন আইন নেই। এরপরও আমরা সেই সুযোগ দিয়েছি। যদিও এখানে কনস্টিটিউশনাল বেরিয়ার রয়েছে। আপনি জানেন, রিভিউতে যুক্তি খুবই কম থাকে। এ সময় খন্দকার মাহবুব সময়ের জন্য বারবার বলতে থাকলে জবাবে আদালত বলে, আমরা দুঃখিত। এ পর্যায়ে মীর কাশেমের প্রধান এই আইনজীবী আদালতকে তার কাছে মামলার কোন কাগজপত্র না থাকার কথা বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। আমার কাছে কিছুই নাই। কাগজপত্রও নাই। এসব ছিল তার ছেলের নিকট। তাকে কেউ নিয়ে গেছে। সে কেবল তার ছেলেই ছিল না। সে এ মামলার আইনজীবীও ছিল। তার কাছেই সব কাগজপত্র ছিল। আমি এ মামলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ঠিক আছে। কিন্তু আমার কাছে তো কিছুই নাই। আমি অসহায়, বলেন খন্দকার মাহবুব। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা ওই যুক্তিতে (সময় মুলতবি) দিব না। হতে পারে সে (মীর কাশেমের ছেলে) তো ইয়ে করতে নাই। এক পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, আমার কাছে পেপারবুকও নাই। কোন কাগজপত্র নাই। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা তো রায়ের বাইরে যাব না। কোথায় ‘এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড’? খন্দকার মাহবুবকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনার কাছে ওইদিনও পেপার বুক ছিল। এখন নাই কেন? খন্দকার মাহবুব বলেন, ওইদিনের পর ওরা নিয়ে গেছে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ওইদিন আপনি আবেদন করেছেন। আমি সময় দিয়ে দিয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ নানা বক্তব্য দিয়েছে। আমি বলতে গেলে, তাদের বক্তব্য শুনিও নাই। সময় দিয়ে দিয়েছি। এরপর নিজের ‘পেপার বুক’ খন্দকার মাহবুবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমি আমার পেপার বুক দিয়ে দিচ্ছি। আপনি শুনানি শুরু করেন। এ সময় খন্দকার মাহবুব অন্তত এক সপ্তাহ সময় চান। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাকে আমি বিগত ৪০ বছর যাবত চিনি। ওয়ার ক্রাইম নিয়ে আপনার ইয়ে আমি জানি। আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি। আশা করি, আপনি আপনার সম্মান রাখবেন। এ পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব সময়ের জন্য বারবার পীড়াপিড়ি করতে থাকলে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি শুরু করেন, আমরা রবিবার শেষ করব। এরপর প্রধান বিচারপতি তার হাতে থাকা পেপার বুক খন্দকার মাহবুবের দিকে বাড়িয়ে দেন। এ সময় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও তার হাতে থাকা পেপার বুক খন্দকার মাহবুবের সামনে ডায়াসে এগিয়ে দেন। এই পর্যায়ে পেপার বুক ছাড়াই শুরু করতে পারবেন বলে জানান খন্দকার মাহবুব। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি শুরু করেন, আপনার স্মরণশক্তি ভাল আমি জানি। খন্দকার মাহবুব বলেন, আমি একটা অভিযোগের ওপর বক্তব্য রাখব। যে অভিযোগে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এ সময় আনুষঙ্গিক কিছু কথা বলেন খন্দকার মাহবুব। এক পর্যায়ে আদালত রবিবার পর্যন্ত মুলতবি করে। প্রধান বিচারপতি জানান, এটা ‘আংশিক শুরু’ হিসেবে রবিবার কার্যতালিকার শীর্ষে আসবে। উল্লেখ্য, মীর কাশেম আলীর মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১০ সালের ২৬ জুলাই। তাকে গ্রেফতার করা হয় ২০১২ সালের ১৭ জুন। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ ১৪টি অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু করে। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। ২০১৫ সালের ৩০ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে মীর কাশেম আলী আপীল দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ৮ মার্চ আপীল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদ- বহাল রেখে আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় ৬ জুন প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাশেম।
×