ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১৪ দলের

বিএনপি-জামায়াতের নির্দেশেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২১ আগস্ট ২০১৬

বিএনপি-জামায়াতের নির্দেশেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দ্রুত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার সম্পন্ন করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। এ ক্ষেত্রে আইনমন্ত্রী ও বিচারকার্যে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে জোটের নেতারা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের নির্দেশেই আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে এ হামলা চালানো হয়েছিল। গ্রেনেড হামলার পুরো তত্ত্বাবধায়ন হয়েছিল হাওয়া ভবন থেকে। বর্তমানের জঙ্গী হামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর যে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছিল তারাই এ সকল হামলার সঙ্গে জড়িত। শনিবার দুপুরে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়। বৈঠকে ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে জেলায় জেলায় জঙ্গীবাদবিরোধী সমাবেশ করারও সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ দল। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গ্রেনেড হামলার ঘটনা বিএনপি-জামায়াতের নির্দেশে হয়েছিল উল্লেখ করে বলেন, অনেক বিলম্ব হয়েছে, আর দেরি নয়। দ্রুত গ্রেনেড হামলার বিচার সম্পন্ন হওয়া দরকার বলে মনে করে ১৪ দল। এ ক্ষেত্রে আইনমন্ত্রী ও বিচারকার্যে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের কাজ শেষ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় বিলম্বিত ও প্রলম্বিত যুদ্ধাপরাধের এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলারও বিচার হবে। বৈঠকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কর্মসূচী অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৪ দল। নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদবিরোধী ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ১ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ, ২৩ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা, ২৪ জয়পুরহাটে ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর নওগাঁয় সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ কর্মসূচী পালন করবে ১৪ দল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জঙ্গীবাদকে সমূলে উৎপাটন করা হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থানের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত জঙ্গীবাদের উত্থান পুরোপুরি নির্মূল করা হবে এবং এর খলনায়কদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী’ মর্মে সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- নিয়ে অসত্য কথা বলে বিএনপি জনগণের কাছে ক্ষমা পাবে না। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আপনারাই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, এখনও দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের জিয়াউর রহমান আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন, এমনকি বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুনর্বাসনও করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের রক্ষা করতে খুনী মোশতাকের ইনডেমিনিটি ধারণ করেছিলেন জিয়া, এইচএম এরশাদ ও খালেদা জিয়া। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সঙ্গে বিএনপিই জোট করেছে। এখনও জঙ্গীদের জন্য বিএনপি মায়াকান্না করছে। সুতরাং এ কথা বলে কোন লাভ হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণ খালেদা জিয়ার হাওয়া ভবনের দুঃশাসন ভুলে যায়নি। গ্রেনেড হামলার পুরো তত্ত্বাবধান হয় হাওয়া ভবন থেকে। এ কারণে এ বিচার তো দূরের কথা তদন্ত পর্যন্ত হয়নি ওই সময় হয়নি। বিচার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাজানো হয়েছিল জজ মিয়া নাটক। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নিকৃষ্টতম কর্মকা-ের দিন ২১ আগস্ট। একুশ আগস্ট হামলায় নিহতদের প্রতি রবিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ১৪ দল শ্রদ্ধা জানাবে। গ্রেনেড হামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে দেশের মানুষ সাড়া দিয়েছে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বাইরেও সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানের জঙ্গী হামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর যে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছিল তারাই এসব হামলার সঙ্গে জড়িত। বৈঠকে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বন্যাকবলিতদের ত্রাণ কর্মকা-ে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করার জন্য কেন্দ্রীয় ১৪ দল এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জঙ্গী উত্থানের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জেগে উঠেছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের কোন ঠাঁই হবে না। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা এসেছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের কেউ এক ছটাকও ত্রাণ বিতরণ করেনি। মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আবদুস সাত্তার, ফরিদুন্নেসা ইন্দিরা, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সুজিত রায় নন্দী, জাসদ (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় পার্টির (জেপি) এজাজ আহমেদ মুক্তা, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।
×