ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনেক চলচ্চিত্রের উপজীব্য বেদের মেয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২০ আগস্ট ২০১৬

অনেক চলচ্চিত্রের উপজীব্য বেদের মেয়ে

যে যাযাবর মানবগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষত জলবহুল-বিলবহুল-নদীবহুল অঞ্চলে দেখা যায়, তাদেরই প্রচলিত নাম বেদে। বৈদ্য থেকে বেদে শব্দটির উদ্ভব। সাধারণত অধিকাংশ বেদে পুরুষ-নারী নানা রকম জড়িবুটি এবং টোটকা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত বলে এদের নাম হয়েছে বেদে বা বাইদা। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা মোট নয়টি শাখায় বিভক্ত। এগুলো হলো : লাউয়ো, চাপাইলা, বাজিকর, বেজ, গাইন, মেল্লছ, বান্দাইরা, মাল ও সাপুড়িয়া। বেদেরা আমাদের সমাজের এতই প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে যে, আমাদের জাতীয় পরিসংখ্যানে পর্যন্ত তাদের কোন গুরুত্ব নেই। আমাদের জাতীয় নীতি-নির্ধারণী বৈঠকগুলোতে তাদের কথা কখনই উঠে আসে না। ১৯০৫ সাল থেকে ঢাকা পূর্ববঙ্গের রাজধানী হওয়ার পর বাড়তি সুইপার দরকার হলে ভারতের কানপুর, নাগপুর, তেলেগু ও মাদ্রাজ থেকে ‘ভালো’ কাজের কথা বলে এই অঞ্চলে নিয়ে আসা হয় এই সব দলিত জনগোষ্ঠীর মানুষদের। তবে বেদেরা দাবি করে তারা মোগল আমলে ১৬৩৮ সালে আরাকান থেকে এ দেশে এসেছে। এ জন্যই তাদের কথায় কিছুটা আরাকানী টান আছে। তারা নিজেদের মধ্যে যখন কথাবার্তা বলে তখন এই টান স্পষ্ট বোঝা যায়। একটা সময় ছিল, যখন সাপের গল্প নিয়ে প্রচুর সিনেমা তৈরি হয়েছে। বেদের মেয়ে জোছনা বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ১৯৮৯ সালে মুক্তি লাভ করে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল ছায়াছবি। যাযাবর বেদেরা এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকে না। জলপথে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়ায় জীবিকার সন্ধানে। জলপথে চলাচল বলেই নৌকা তাদের কাছে খুবই মূল্যবান! এই নৌকাতেই হয় রান্না-বাড়া, খাওয়া-দাওয়া আর থাকা। নিজেদের মুসলমান দাবি করলেও ঈদ কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় আচার-রীতি পালন করে না। বেদে সম্প্রদায়ের অন্যান্য গোষ্ঠীর বিয়ে মুসলিম ধর্মীয় মতে হলেও তাদের রীতিনীতি বিচিত্র। এদের কুঁড়ে ঘরের ছাউনি হয় শত ছিন্ন পলিথিন কিংবা নাইলনের অথবা সিমেন্টের ব্যাগে। আর খেজুর পাতার পাটি দিয়ে তৈরি বিছানা। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত সব ঋতুতেই ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, পরিজন নিয়ে অবস্থান করে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। নানা প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে বেঁচে থাকে এরা। অবহেলিত এই বেদে-বেদেনীদের সভ্য মানুষের চোখের সামনে অবলীলাক্রমে জীবন কাটলেও কেউই তাদের জীবন নিয়ে ভাবে না অথবা তাদের পুনর্বাসনের কথা চিন্তা করে না। Ñসাজেদুর রহমান শিলু দিনাজপুর থেকে
×