ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

৮৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও সাড়ে তিন লাখ টাকা উদ্ধার

চট্টগ্রামে ঘুষ নেয়ার সময় বিটিসিএল প্রকৌশলীসহ গ্রেফতার ৩

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৮ আগস্ট ২০১৬

চট্টগ্রামে ঘুষ নেয়ার সময় বিটিসিএল প্রকৌশলীসহ গ্রেফতার ৩

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নন্দনকানন কার্যালয়ে প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের সময় দুই কর্মচারীকে বুধবার হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সদ্য অবসরে যাওয়া এক কর্মকর্তার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকালে এই দুজন ধরা পড়ে। পরে বিভাগীয় প্রকৌশলীর (অভ্যন্তরীণ) কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে নগদ অর্থ ও জমির দলিল পাওয়ায় তাকেও গ্রেফতার করা হয়। বিটিসিএল’র অফিস থেকে গ্রেফতারকৃত তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী ফোন্স (আভ্যন্তরীণ) প্রদীপ দাশ, প্রধান সহকারী গিয়াস উদ্দিন ও টেলিফোন অপারেটর হুমায়ুন কবির। দুদকের চট্টগ্রাম অফিসের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল আজিজ জানান, অবসরপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল কাশেম ভুঁইয়ার কাছ থেকে ঘুষের ২০ হাজার টাকা নেয়ার সময় বিটিসিএলের প্রধান সহকারী গিয়াস উদ্দিন ও টেলিফোন অপারেটর হুমায়ুন কবিরকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় গিয়াস উদ্দিনের অফিস কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে তার ও তার স্ত্রীর নামে করা ৮৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও নগদ ২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। দুদক পরিচালক আরও জানিয়েছেন, পরে একই অভিযোগে বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রদীপ দাশের অফিস কক্ষে তল্লাশি চালানো হলে একটি স্টিল কেবিনেটের ড্রয়ারে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ টাকা পাওয়া যায়। ড্রয়ারে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ও ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কেনা দুটি জমির দলিলও পাওয়া গেছে। ওই জমি গিয়াস উদ্দিন ও হুমায়ুন কবিরের নামে কেনা হয়। এ ঘটনায় প্রদীপ দাশকে গ্রেফতার করা হয় বলে তিনি জানান। অবসরে যাওয়া বিটিসিএল কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবুল কাশেম ভুঁইয়া বলেন, সাত মাস আগে আমি অবসরে যাই। পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার জন্য ফাইল নন্দনকানন অফিস থেকে আগ্রাবাদ অফিসে পাঠাতে হবে। কিন্তু এ ফাইল পাঠানোর জন্য তারা আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেবার পর তারা ২০ হাজার টাকা দাবি করে।’ শুধু তার কাছ থেকেই নয়, তার আরও পাঁচ সহকর্মী সাহাবউদ্দিন, মারুফা, সাধনা, রমা ও কোহিনুরের কাছ থেকেও বিটিসিএল’র কর্তারা ঘুষ চেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভুঁইয়ার কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ওঁৎ পেতে থাকেন দুদক কর্মকর্তারা। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঘুষ লেনদেনের সময় তারা প্রথমে ঘুষ গ্রহণকারী দুই কর্মচারীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেন। পরে গ্রেফতার করা হয় অপর কর্মকর্তাকে। অভিযোগ রয়েছে যে, দীর্ঘদিন ধরে বিটিসিএল নন্দনকানন অফিসে প্রকাশ্যে ঘুষের লেনদেন হয়ে আসছে। ঘুষ না দিলে এখানে কোন কাজই হয় না। কাজের ধরন বুঝে ঘুষের টাকা নিরূপণ করে থাকেন এই অফিসের কর্মকর্তারা। এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ফাইল হস্তান্তর করতে এখানে গুনতে হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। সাধারণ গ্রাহক দূরে থাক এই অফিসে ঘুষ প্রদান থেকে রেহাই পায় না স্বয়ং ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও। অবসরে যাওয়ার পর এলপিআরের টাকা তুলতে গিয়ে তাদেরও গুনতে হয় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।
×