ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্য হওয়ায় জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৫ আগস্ট ২০১৬

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্য হওয়ায় জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে ॥  নাসিম

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে। জঙ্গীবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই পিতা-মাতা ও স্বজনরা তাদের জঙ্গী সন্তানদের লাশ গ্রহণ করছে না। রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ মিলন হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ বদিউজ্জামান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)’র সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হাসান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)’র সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সনাল, মহাসচিব এম এ আজিজ প্রমুখ। মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, স্বাধীনতার পর দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে ওই একই শক্তি আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাত করার জন্য এ ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কতিপয় বিপথগামী তরুণ তথাকথিত আদর্শের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। গুলশান হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের কথা উল্লেখ করে নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সকলের সমর্থন চান। এ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারও বিরুদ্ধে কোন কথা বলেননি। অথচ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের জঙ্গী হামলাকে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান হিসেবে উল্লেখ করেন এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে জঙ্গী হামলার পর সরকারের পদত্যাগ দাবি করে নির্বাচন দাবি করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ হয়, জঙ্গীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ষড়যন্ত্র করে পরাজিত করা যাবে না। আর সেজন্যই বঙ্গবন্ধুর মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর বাংলাদেশকে আমাদের কাছে অপরিচিত দেশ মনে হয়েছে। গত তিন বছর যেভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও মুক্তমনা লেখক এবং বিদেশী নাগরিকদের ওপর হামলা হয়েছে তা দেশের সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর সংবিধানের মূলনীতিকে পরিবর্তন করে দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারার একটি রাষ্ট্র বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সংগঠনের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। তোপের মুখে সফিউল্লাহ ॥ ১৫ আগস্ট নিয়ে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে পঁচাত্তরের ভূমিকার জন্য কিছুটা তোপের মুখে পড়তে হয়েছে ফোরামের আহ্বায়ক দেশের প্রথম সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহকে। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছিলেন তিনি। তিনি যখন পঁচাত্তরের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করছিলেন, তখন শ্রোতাদের মধ্য থেকে প্রশ্ন তোলেন কৃষক লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক কে এম সফিউল্লাহ বলছিলেন, তিনিসহ ওই সময়কার বিমানবাহিনী প্রধান ও নৌবাহিনী প্রধানকে ‘বাধ্য হয়ে’ মোশতাক সরকারের প্রতি সমর্থন দিতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিবস আমার জন্য কষ্টকর একটি দিন। এই দিনে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। আমি বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারিনি। চারদিক থেকে আমার হাত বাঁধা ছিল। তখন আবদুল হাই কানু দাঁড়িয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘স্যার যখন আপনার কাছ থেকে সিগনেচার নিচ্ছিল, তখন আপনি মৃত্যুবরণ করেননি কেন?’ বসে থাকা সফিউল্লাহ এ সময় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমাদের আনুগত্যে বাধ্য করা হয়েছে। আপনি (কানু) সে সময় কী করেছেন?’ জবাবে কানু বলেন, আমি কর্মী ছিলাম, প্রতিবাদ করেছি, জেল খেটেছি। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে কিছুটা হৈ চৈ শুরু হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এই কানু ভাই বসেন। আমাদের প্রত্যেকেরই এই জিনিসটা নিয়ে মনে দুঃখ আছে। আমরা সবাই ব্যথিত। আমিও তো কিছু করতে পারিনি, আমি তখন কর্মী ছিলাম। এই গ্লানি-কষ্ট এখনও বয়ে বেড়াচ্ছি।’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আলোচনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংগঠনের মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হারুন হাবিব, সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী মেজর (অব) জিয়াউদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান আবদুল হান্নান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকসহ বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে জড়িতদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভূমিকা তদন্তের জন্য কমিশন গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস জিয়া, খন্দকার মোশতাক ও অন্যান্যদের ভূমিকা কী ছিল, সেটা জাতির সামনে তুলে ধরার সময় এসেছে। একটি তদন্ত কমিশন করে সেই সমস্ত সত্য তুলে আনতে হবে। জিয়ার মরণোত্তর বিচার জাতির দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্যান্য সেক্টর কমান্ডাররা কী করেছিল, আর তিনি (জিয়া) কী করেছিল, তা সবার জানা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার হলেও এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা এখনও চিহ্নিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেবল এই খুনীদের নয়, পর্দার অন্তরালে যে খুনী আছে, তাদের চরিত্র ও মুখোশ উন্মোচন হওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধু ছিলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা- প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ॥ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো। তাঁর ডাকে বাঙালী জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। তাঁর কারণেই আজ আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, পেয়েছি স্বাধীনতা। আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার বসাক, পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ আলী জুলকারনাইন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুবলীগ আয়োজন করে পৃথক আলোচনা সভার। এতে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বক্তব্য রাখেন।
×