ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খানা খন্দে ভরা বড়বাড়ী-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৩ আগস্ট ২০১৬

খানা খন্দে ভরা বড়বাড়ী-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ বড়বাড়ী লালমনিরহাট ও বুড়িমারী নামেই জাতীয় মহাসড়ক। সড়কটিতে জাতীয় মহাসড়ক মর্যাদার কোন বৈশিষ্ট্য নেই। ১০৫ কিলোমিটার রাস্তাটির অধিকাংশ খানা খন্দে ভরা। ভাঙ্গা বেহাল এই রাস্তায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ভারি ভারি যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাস। রাস্তাটি পুনমেরামত না করে, রাস্তা সংস্করণের নামে প্রতি বছরে কোটি কোটি টাকার হরিলুটের খেলা চলছে। দেখার কেউ নেই। লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলা লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলাসহ বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা বড়বাড়ী লালমনিরহাট ও বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক। রাস্তাটি লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) আধীনে। রাস্তাটির দীর্ঘ প্রায় ১০৫ কিমি.। তবে প্রস্থ মাত্র ১৮ ফিট। রাস্তায় কোন ফুটপাথ নেই। একটি গাড়িকে ওভারটেক অথবা সাউড দিতে গেলে অন্য গাড়িটিকে ঝুঁকি নিতে হয়। এই জাতীয় মহাসড়কে ১২ স্থানে রয়েছে ৪৫ এ্যাঙ্গেলের মোড়। লালমনিরহাট পাটগ্রাম রেলরুটটি ১১ বার রেললাইন ক্রোস করেছে। রেলওয়ের জনবল সঙ্কটের কারণে অধিকাংশ রেল ক্রসিংয়ে কোন গেট ম্যান নেই। ১৯৭৮ সালে তিস্তা নদীর ওপর থাকা রেল সেতুরটির ওপর কাঠের ডেকিং নির্মাণ করে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। পরে ১৯৮৯ সালে বুড়িমারী স্থলবন্দর চালু হয়। তখন সড়কটিকে জাতীয় মহাসড়ক ঘোষণা করা হয়। রংপুর কুড়িগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়কের সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু বড়বাড়ী লালমনিরহাট ও বুড়িমারী পর্যন্ত ১০৫ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কটি নামে মাত্র মহাসড়ক। জাতীয় মহাসড়ক হতে যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তা এই সড়কটির নেই। তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বুড়িমারী স্থলবন্দর ও সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলছে। ২০০২ সালে বড়বাড়ী লালমনিরহাট ও বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক প্রস্থ ও নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই সময় ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু মহাসড়কটিতে পাথর বালুর কমপোস্ট করে পরীক্ষামূলকভাবে (নতুন পদ্ধতিতে) রাস্তাটি সংস্কার করা হয়। সেই সময় রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারের কাজটি সঠিক পদ্ধতিতে হয়নি। ফলে তখন হতেই বর্ষা মৌসুম এলেই রাস্তাটি পাথর বালু ও কাদার মিশ্রণে বেহাল দশা সৃষ্টি হয়। রাস্তাটি চলাচলের উপযুগী রাখতে প্রতিবছর সড়ক ও জনপথ কোটি কোটি টাকা অর্থ ব্যয় দেখায়। আসলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। ২০১৪ সাল বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কে প্রায় শতাধিক স্থানে ফাটল ও ডিপ্রেশন দেখা দেয়। বর্তমানে রাস্তায় বড় বড় খাদ সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে খাদ (ডিপ্রেশন) গুলোতে পানি জমে সড়কের মূল বেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ খ- খ- ভাবে মেরামত ও সংস্কার করে সড়কটি জোরাতালি দিয়ে সচল রাখার কাজ করে থাকে। সড়ক জনপথের সংস্কার ও চলরাখার কাজ নিয়েও জনমনে নানা দুর্নীতি ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে। বর্তমানে বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের প্রায় শতাধিক স্থানে এমন খালে খন্দের সৃষ্টি হয়েছে যানবাহন চলাচল করা প্রায় অনুপোযুগী হয়ে পড়েছে। একসময় ছিল বুড়িমারী স্থল বন্দরের পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো তিস্তা সেচ প্রকল্পের সেতু তিস্তা ব্যারেজ দিয়ে পারাপার হতো। অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ট্রাক তিস্তা সেতুর ওপর দিয়ে পার হলে সেতুর পাটাতনে ফাটল দেখা দেয়। ফলে ১০১৪ সালের ২৫ নবেম্বর তিস্তা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ সেতুর ওপর দিয়ে ভারি যানবাহন চলা চল সর্ম্পূণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে এখন ব্যারেজের সেতু দিয়ে ট্রাক ও ভারি যানবাহন পারাপাড় বন্ধ রয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর উত্তরাঞ্চলের একমাত্র ত্রিদেশীয় স্থলবন্দর। এই বন্দর দিয়ে ভারত, ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশের সাথে আমদানি রফতানি বাণিজ্য হয়ে আসছে। বুড়িমারী হতে পণ্যবাহী ১০ চাকার ট্রাক, লরি চলাচল করে। এসব ট্রাক ও লরিতে প্রায় ৩০/৪০ টন পণ্য বোঝাই থাকে। যাহা বর্তমান রাস্তার ধারণক্ষমতার অধিক। লালমনিরহাট ও বুড়িমারী সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ভারি যানবাহন চলাচলের করে। বর্ষা মৌসুমে কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণের ফলে রাস্তাটি বেজমেন্ট ও পেভমেন্ট নরম হয়ে গেছে। এতে করে ১০৫ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ৮৫-৯০ কিমি. রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্থল বন্দরের জিরো পয়েন্ট থেকে পাটগ্রাম পৌরসভার কবরস্থান পর্যন্ত ১৭ কিমি. রাস্তার সংস্কারে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার কাজ হয়েছে। এই সংস্কার কাজ পাবনার মেসার্স ধ্রুব কনস্ট্রাকশন নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পায়। কাজ শুরু করে ১৫ সালের ২৬ ফেব্রয়ারি কাজ শেষ করে এই সালের ২৫ আগস্ট। অপরদিকে পাটগ্রাম কবরস্থান বাজার থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী পর্যন্ত ৩৭.৫০ কিমি. রাস্তা সংস্কার করতে ১৫ কোটি দুই লাখ ব্যয় হয়। সংস্কার কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শুরু করে ১৫ সালের ১৭ নবেম্বর শেষ করে চলডিত বছরের ১৫ মে। লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগ এই নির্মাণ কাজের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই রাস্তায় ভাঙন ও খাদ দেখা দিয়েছে। জাতীয় মহাসড়কের কাকিনা, সাপিটবাড়ি, কলেজ বাজার, আদিতমারী থানা গেট, নামুড়ি, বড়বাড়ি, মহেন্দ্র নগরসহ প্রায় শতাধিক স্থানে খানা খন্দে ভরে গেছে। এদিকে জাতীয় মহাসড়কের এই দুর্রাবস্থার কারণে জেলা মোটর মালিক সমিতি ২৫ জুলাই মানববন্ধন করে। জাতীয় মহাসড়কটির ইন্নয়নে ও সচল রাখতে সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ার সহ-সভাপতি ও মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ সিরাজুল হক জানান, বর্তমানে জাতীয় মহাসড়কের যে, অবস্থা যেকোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সড়ক জনপথ বিভাগের এসডি মোঃ সুলতান মাহামুদ জানান, লালমনিরহাটের সড়ক জনপথের জনবল মারাত্মক সঙ্কটে রয়েছে। তিনি আরও জানান, ১৯৮৪ সালে সড়কটি জেলা সড়ক ছিল। কোন রকম উন্নয়ন ছাড়াই সড়কটিকে ১৯৮৯ সালে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা হয়। রাস্তাটিতে ওভার লোড কন্ট্রোল করা হয় না। পুলিশকে বারবার পত্র দিয়েও ওভারলোড বন্ধ করা যায়নি। জাতীয় মহাসড়কের দুই পাশে কোন জমি অধিগ্রহণ করা নেই। ফলে রাস্তা ঘেঁষে বাড়ি, দোকান, ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তায় বেজ মেন্ট ও সাব বেজমেন্ট ফেল করছে। তাই সংস্কার কাজ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না।
×