ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাবাড়ী-মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাংগা পর্যন্ত ৫৫ কিমি সড়ক ;###;ধীরগতির যান চলাচলে থাকছে পৃথক লেন

দেশে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৩ আগস্ট ২০১৬

দেশে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে আজ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক পথে রাজধানী ঢাকা ও পূর্বাঞ্চলে যাত্রী-পণ্য পরিবহন নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক করতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় যাত্রাবাড়ী-মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চার লেনের নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে আজ। এ মহাসড়কটি হবে দেশে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। সড়কের কোথাও ট্রাফিক ক্রসিং থাকবে না। ফলে যানবাহন নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য পাঁচ দশমিক ৫০ মিটার প্রশস্ত পৃথক লেন থাকবে। এটিও দেশে প্রথম। আজ গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগাযোগ খাতের মেগা এই প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ২৫২ কোটি টাকারও বেশি। যা শেষ হবে ২০১৯ সালে। যোগাযোগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু ব্যবহার করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহে যাতায়াত দ্রুততর, নির্বিঘœ ও সহজতর করা এবং অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নের জন্য যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন (ইকুরিয়া-বাবুবাজার) লিংক সড়কসহ মাওয়া এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা মহাসড়ক উভয় দিকে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ মে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ২৫২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বর্তমানের দুই লেন থেকে চার লেনে সড়কটি উন্নীত করা হবে। সড়কের উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পাঁচ দশমিক ৫০ মিটার প্রশস্ত পৃথক লেন থাকবে। মাঝ বরাবার থাকবে পাঁচ মিটার প্রশস্ত মেডিয়ান। ভবিষ্যতে এ মেডিয়ান ব্যবহার করে মেট্রোরেল নির্মাণ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। এছাড়া নতুন এ প্রকল্পে থাকছে ৬টি ফ্লাইওভার, চারটি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৫টি আন্ডারপাসসহ তিনটি ইন্টারচেঞ্জ। এসব সুবিধা সংযোজনের ফলে মহাসড়কটি একটি এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরীত হবে। সড়কের দু’পাশে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন করা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এ মহাসড়কটি হবে দেশের নির্মিত প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। সড়কের কোথাও ট্রাফিক ক্রসিং থাকবে না। ফলে যানবাহন নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে। এ মেগা প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-পশ্চিম এর আওতাধীন ১৭ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এবং ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নসহ সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের পূর্বাঞ্চলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক হবে। পদ্মা সেতু লিংক রোড চার লেনে উন্নীত করার কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে আগত যানবাহনগুলো যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন হয়ে সহজে ও স্বল্প সময়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে। এক নজরে প্রকল্প ॥ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ঢাকা খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার-লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ চার লেনে উন্নয়ন প্রকল্প’। চলতি বছরের মে থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরসহ চার জেলা মিলিয়ে প্রকল্পের অবস্থান। মূলত দুই প্যাকেজে এই মহাসড়কের নির্মাণকাজ হবে। প্যাকেজ এক-১৭ ইবিসি যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করবে। এছাড়া প্যাকেজ-২ এর কাজ করবে ২০ ইবিসি। পাঁচ্চর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করবে তারা। প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২৪ দশমিক ৮৮ হেক্টর জমি। সেতু ৩১টির মধ্যে রয়েছে পিসি গার্ডার ২০টি এবাং আরসিসি ১১টি। এর মধ্যে বড় সেতুঃ ধলেশ্বরী-১ সেতু (২৫৮ দশকি পাঁচ মিটার), ধলেশ্বরী-২ সেতু (৩৮২ দশমিক পাঁচ মিটার)। এ ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ সেতু (৪৫০ দশমিক পাঁচ মিটার)। পুরো প্রকল্পজুড়ে ছয়টি উড়াল সড়কের অবস্থান হবে, আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়াবাজার ও সদরপুর। চারটি রেলওয়ে ওভারপাস থাকছে জুড়াইন, কুচিয়ামোরা, শ্রীনগর ও আতাদি। যাত্রাবাড়ী, তেঘরিয়া ও ভাঙ্গা পয়েন্টে থাকবে তিনটি ইন্টারচেঞ্জ। এছাড়া সাত কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম আট লেন জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ। ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর পর্যন্ত এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। নতুন এই প্রকল্পের যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে যাতায়াত আরও সহজ হবে। অর্থাৎ পুরো এলাকা পাড়ি দিতে এখন যানজটের আর ভোগান্তি হবে না। পরিবহন মালিক শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ যাত্রীরাও এতে সন্তেুাষ প্রকাশ করেছেন। মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছেন, অর্থনীতির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মহাসড়কের কাজ শেষ হওয়ায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগ সিলেট এবং বন্দরনগরী চটগ্রামসহ ঢাকা এই তিন অঞ্চলেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়বে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
×