ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফালু ও শামীমের পর বিএনপি থেকে ইকোনো কামালের পদত্যাগ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১১ আগস্ট ২০১৬

ফালু ও শামীমের পর বিএনপি থেকে ইকোনো কামালের পদত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু ও সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমের পথ ধরে এবার বিএনপির সদ্য ঘোষিত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলেন কাজী সালিমুল হক কামাল। জানা যায়, নির্বাহী কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া এবং মাগুরা জেলা বিএনপির নিয়ন্ত্রণ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর হাতে চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন। সালিমুল হক কামাল ‘ইকোনো কামাল’ হিসেবে পরিচিত এবং জিকিউ গ্রুপের মালিক। তিনি ১৯৯৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদের মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি করে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। বিতর্কিত নেতাদের বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্থান দেয়ার অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সালিমুল হক কামাল। বুধবার দুপুরে নিজের স্বাক্ষরে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রের কপি মাগুরায় কর্মরত সাংবাদিকদের কাছে পাঠান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সালিমুল হক কামাল। এছাড়া এ পদত্যাগপত্র ঢাকায় বিএনপি কার্যালয়েও পৌঁছানো হয় বলে জানা যায়। সালিমুল হকের রাজনৈতিক এপিএস আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজী সালিমুল হক বিএনপির কমিটি নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। একইসঙ্গে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত নেতাদের দিয়ে মাগুরা জেলা বিএনপি কমিটি করায় তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে কাজী কামাল অভিযোগ করে বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে, যিনি গ্রুপিং সৃষ্টি করে মাগুরা জেলা বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করেছেন। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটিতে কিছু বিতর্কিত লোকদের সদস্য করা হয়েছে যাদের নেতৃত্বে বিএনপি করা সম্ভব নয়। তাই তিনি সদ্য ঘোষিত বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়াচ্ছেন। লিখিত পদত্যাগপত্রে তিনি আরও অভিযোগ করেন ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে যার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবোধক সেই নিতাই রায় চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নির্বাচিত করায় দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ইউপি নির্বাচনে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিতাই চৌধুরীর নিজ ঘরানার প্রার্থী দেয়ায় বিএনপির চরম ভরাডুবি হয়েছে। উল্লেখ্য, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজী সালিমুল হক কামালও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি। ১৯৯৪ সালে মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচনে কাজী সালিমুল হক কামালকে নির্বাচিত করাতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠে। ওই নির্বাচনের জের ধরে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের কঠোর আন্দোলনের ফলে পরবর্তীতে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আসে। কাজী সালিমুল হক কামাল ১৯৯৪ সালে বিএনপির মনোনয়নে মাগুরা-২ আসনের বহুল আলোচিত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের নির্বাচনে একই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ওই বছরই তিনি মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি হন। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে কাজী সালিমুলের রাজধানীর বাসায় বসে আওয়ামী লীগকে হারানোর ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে সেসময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর ৬ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদিত দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি, ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণার পরপরই ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে আরও ক’জন নেতা বিএনপি থেকে পদত্যাগ করবেন এমন গুঞ্জন আগেই ছিল।
×