ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আকরম হোসেন ও তপন মাহমুদ রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৮ আগস্ট ২০১৬

আকরম হোসেন ও তপন মাহমুদ রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবীন্দ্রনাথের সুরকে আশ্রয় করেই শুরু হলো অনুষ্ঠান। মাঝে উচ্চারিত হলো কবিগুরুর কবিতা। একক বক্তৃতায় উঠে এলো বিশ্বব্যাপী উগ্রপন্থার উত্থানে বিশ্বকবির দর্শন ও সৃষ্টির প্রাসঙ্গিকতা। এভাবেই বক্তৃতা ও গান-কবিতায় সাজানো আয়োজনে প্রদান করা হলো বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত রবীন্দ্রপুরস্কার। রবীন্দ্র-গবেষণা এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দুই গুণীজনের হাতে তুলে দেয়া হয় এ বছরের পুরস্কার। রবীন্দ্র-গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার পেয়েছেন গবেষক অধ্যাপক আকরম হোসেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা ও প্রসারে অবদান রাখায় পুরস্কার পেয়েছেন কণ্ঠশিল্পী তপন মাহমুদ। বাংলা একাডেমি আয়োজিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণবার্ষিকীর দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিন রবিবার এ পদক প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কারের সম্মাননা স্মারক, সম্মাননাপত্র ও পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন অতিথিরা। বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রবিষয়ক একক বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে অধ্যাপক আকরম হোসেন বলেন, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির কাছ থেকে রবীন্দ্রপুরস্কার পেয়ে আমি আনন্দিত। জানি না আমি কী কৃতিত্ব দেখিয়েছি। তবুও একাডেমি মনে করেছে যে আমি কৃতিত্বপূর্ণ কিছু করেছি সে কারণে আমি কৃতজ্ঞ। বর্তমান সঙ্কট সমাধানে রবীন্দ্র চেতনা ধারণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে পৃথকভাবে শনাক্ত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সংস্কৃতি হচ্ছে সৃজনশীল আর সভ্যতা হচ্ছে যান্ত্রিক। পুঁজিবাদী সভ্যতারই বিনাশী ফল হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মাথাচাড়া দেয়া জঙ্গীবাদ। সভ্যতার যান্ত্রিক বিকাশের পাশাপাশি যদি আমরা রবীন্দ্রনাথের চেতনায় হৃদয়বৃত্তির অনুশীলন করতে সক্ষম হই তবেই বর্তমান সঙ্কটময় দেশীয় ও বিশ্ব-পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে পারে। কবিগুরুর সৃষ্টি থেকেই খুঁজতে হবে সঙ্কট সমাধানের পথ। অনুভূতি ব্যক্ত করে তপন মাহমুদ বলেন, আজ সারাদেশে যে সাংস্কৃতিক শূন্যতা বিরাজ করছে তা নিরসন করতে দেশের তরুণ প্রজন্মকে রবীন্দ্ররচনার সান্নিধ্য দান এবং তৃণমূলে সাংস্কৃতিক বিস্তার অত্যন্ত জরুরী বিষয়। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সংস্কৃতিচর্চার পথ বিনির্মাণে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। হারিয়ে যাচ্ছে দেশজ সংস্কৃতির অংশ যাত্রাপালা, জারি গান কিংবা কবি গান। সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে বিপথগামী তরুণদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ। বর্তমান বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাসঙ্গিকতা শীর্ষক একক বক্তৃতায় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন সত্য ও সুন্দরের সাধনা করে গেছেন। গেয়েছেন মানবমঙ্গলের গান। তাই সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চায় রবীন্দ্রনাথের দর্শন সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। বিভাজিত বিশ্বে যখন ধর্মের নামে অধর্মের আচরণ চলছে তখন রবীন্দ্রনাথ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথের দর্শনের তিনটি বিষয় হচ্ছে সত্য, আনন্দ ও মঙ্গল। এ কারণেই মানুষের সঙ্কটে-সংকল্পে রবীন্দ্রনাথের বাণী যেন অমৃতধারার মতো বয়ে চলে অনুভবের নদীতে। ব্যক্তি মানুষের অন্তর্গত বিষাদ-মোচনে রবীন্দ্রনাথ যেমন তাঁর জীবন ও সৃষ্টি নিয়ে প্রেরণার কাজ করেন, তেমনি সমাজ, দেশ ও বৈশ্বিক সঙ্কটেও তিনি দিয়ে চলেন মুক্তির নির্দেশনা। সভাপতির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, যে সঙ্কটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চলছে তার সমাধান খুঁজতে হলে রবীন্দ্রনাথ পড়তে হবে। কিন্তু যারা জঙ্গী হচ্ছে তাদের কাছে পৌঁছায় না রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিময় শান্তির বাণী। তারা রবীন্দ্রনাথের প্রতি আগ্রহী নন। তাই যারা সঙ্কট উত্তরণের কথা ভাবেন তাদের উচিত রবীন্দ্রনাথ পাঠ করা। তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাঙালী, ভারতীয় ইত্যাদি পরস্পর-সম্পৃক্ত নানা বৃত্তের মধ্যে বাস করেও ছিলেন একজন বিশ্বনাগরিক। বাঙালিত্বের পরিচয়কে তিনি তাঁর জীবনচর্যায় মুখ্য করে তুলেছেন কিন্তু একই সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বিভাজনমূলক জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন। তাই রবীন্দ্রনাথের মতো একই সঙ্গে বাঙালিত্ব ও আন্তর্জাতিকতার সদর্থকবোধ লালন করার মধ্য দিয়েই আমরা সম্মুখযাত্রার দিশা পেতে পারি। স্বাগত বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, রবীন্দ্রনাথ না থাকলে বিশ্বে বাঙালীর গর্ব করার মতো তেমন কিছু থাকত না। তাই আমাদের চর্চার মধ্য দিয়ে যেন রবীন্দ্রনাথ আপন আলোয় আলোকিত হন এদিকটি মাথায় রাখতে হবে। বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে রবীন্দ্রনাথকে প্রাসঙ্গিক মনে করেই পাঠ করতে হবে। সাংস্কৃতিক পর্বে রবীন্দ্র-কবিতার আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী ও অদিতি মহসিন। দর্শকসারিতে বসে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী প্রমুখ।
×