ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন শীর্ষপদ ফাঁকা

শেকৃবি কার্যত অভিভাবক শূন্য, বেতন হয়নি জুলাই মাসের

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৮ আগস্ট ২০১৬

শেকৃবি কার্যত অভিভাবক শূন্য, বেতন হয়নি জুলাই মাসের

এমদাদুল হক তুহিন ॥ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ তিনটি পদ ফাঁকা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি এখন কার্যত অভিভাবক শূন্য। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। জুলাইয়ের বেতন না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ বিষয়ে এক শিক্ষক ফেসবুকে পোস্ট দিলে তা আলোচনায় উঠে আসে। একাধিক শিক্ষক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৬ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ তিন পদে তিন কর্মকর্তার যোগদানের আদেশ জারি হয়। এর মধ্যে ওই বছরের ২৬ জুলাই ৪ বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক সাদাত উল্লা ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। আর ২ দিন পর কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. হযরত আলী। যোগদানের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের ২৫ জুলাই উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আর কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৮ জুলাই। ফলে প্রতিষ্ঠানটি এখন কার্যত অভিভাবক শূন্য। বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষক বেতন না হওয়ার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘গত মাসের বেতন পাইনি, মানিব্যাগ প্রায় ফাঁকা, এ মাসেও যদি বেতন না পাই তাহলে বাসায় আত্মগোপন করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’ বেতন না হওয়ায় এক শিক্ষকের এমন পোস্ট আলোচনার অংশ হয়ে ওঠে। পরে সেই শিক্ষক সূত্রে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ তিন পদ ফাঁকা থাকায় এই অচলাবস্থা, কষ্টে আছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। প্রাণরসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবু ভট্টাচার্য্য জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অভিভাবক হচ্ছেন উপাচার্য। তাঁর স্বাক্ষরে বেতন থেকে শুরু করে শিক্ষা ছুটিসহ সকল প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন হয়। উপাচার্যের অবর্তমানে উপ-উপাচার্য অথবা কোষাধ্যক্ষ অনেক সময় দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই তিনটি পদই ফাঁকা, ফলে কার্যত প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। একই তথ্য জানান মোস্তফা কামাল রিপন ও সহকারী রেজিস্ট্রার শহীদুল ইসলামও। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-পরামর্শ নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. সেকান্দর আলী জনকণ্ঠকে বলেন, দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ওই পদগুলোতে নিয়োগ দেয়ার কথা। বড় তিনটি পদে কেউ না থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে আমরা অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ের নেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তার বেতন হয় না। তাই এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীররা জুলাই মাসের বেতন পাননি। বেতন না হওয়ায় অনেকে পরিবার নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। মনোকষ্টে ভুগছেন কেউ কেউ। গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদ ফাঁকা হওয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বশিরুল ইসলামও। তিনি জানান, একাধিক শিক্ষক শূন্য পদগুলোতে বসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিমও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জনকণ্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছেন সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাদাত উল্লাও। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক উপাচার্য সাদাত উল্লার চাকরির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ। তবে তিনিও উপাচার্য পদে বসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই পদে বসার চেষ্টা করছেন সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। উপ-উপাচার্য হিসেবে ৪ বছরের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হলেও চাকরির বয়সসীমা পার হয়নি, তিনিও বসতে চাচ্ছেন উপাচার্য পদে। একই পদে বসার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদও। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জনকণ্ঠকে বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদ তিনটিতে নিয়োগ দেয়া হবে। ‘শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যাতে দ্রুত সময়ে বেতন পান সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
×