ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মংলা কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১১ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৭ আগস্ট ২০১৬

মংলা কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১১ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিগত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করেছে খুলনার মংলা কাস্টম হাউস। আগের যে কোন সময়ের চেয়ে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুল্কযোগ্য পণ্য আমদানি ও কর ফাঁকি রোধ হওয়ায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে বলে দাবি করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। মংলা কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরের জন্য মংলা কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই হাজার ৬৫৫ কোটি আট লাখ টাকা। তার বিপরীতে ওই অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই হাজার ৯৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। আর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে ২২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মংলা কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। মংলা কাস্টম হাউসের কর কমিশনার ড. মোহাম্মদ আল-আমিন প্রামানিক জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পণ্য খালাসের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ২১ শতাংশ। আমদানিকৃত পণ্যের ৫৫ শতাংশই সার, গম বা এ ধরনের পণ্য। সে বিবেচনায় শুল্কযোগ্য পণ্যের পরিমাণ অনুমানিক ১৫-১৬ শতাংশ। মংলা বন্দরে প্রধানত রাজস্ব আদায় হয় আমদানিকৃত গাড়ি থেকে। কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, মিথ্যা ঘোষণা প্রতিহতকরণ, কর ফাঁকি উদঘাটন, পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি, ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন, প্রতিমাসে নিলাম অনুষ্ঠান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পিছিয়ে পড়া মংলা বন্দরে কর্মতৎপরতা বাড়াতে সরকারী কিছু প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে একটি অসাধু চক্র নিয়মিত অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করছে। এসব কর্মকা-তে সহযোগিতা করছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ক্লিয়ারিং এ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএ্যান্ডএফ) এজেন্ট। সিএ্যান্ডএফ এজেন্টরা ছাড় করে নেয়ার সময় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন পণ্য আটক করে পুনঃকায়িক পরীক্ষা চালাচ্ছে। এতে বড় ধরনের রাজস্ব ক্ষতি চিহ্নিত করা হচ্ছে। মংলা কাস্টমস হাউসের কর কমিশনার ড. মোহাম্মদ আল-আমিন প্রামাণিক জানান, গত অর্থবছরে কাজের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে মিথ্যা ঘোষণা উদঘাটন থেকে জরিমানা ও অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা হয়েছে ৮৮ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা, যা এর আগে কখনও সম্ভব হয়নি। একই সময় বিগত সময়ের পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি থেকে আদায় হয়েছে ১০ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা। শুল্কায়ন করে পণ্য খালাসের পর পুনরায় সে পণ্যের ওপর বর্ধিত কর আদায় করা হয়েছে নয় কোটি দশ লাখ টাকা। ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন থেকে আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মোট রাজস্বের ১২১ কোটি ৫১ লাখ টাকা আদায় হয়েছে শুধু কাজের স্বচ্ছতা আনায়ন খাত থেকে। মংলা বন্দরের রাজস্ব আদায়ের প্রধান খাত গাড়ি আমদানি। বিগত অর্থবছরে মোট গাড়ি আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার ৬৮০টি। গত মে মাসেই শুধু এসেছে দুই হাজার ৮৯৯টি গাড়ি। গত অর্থবছরের মধ্যে মোট গাড়ি খালাস হয়েছে ১৪ হাজার ৮৪৭টি। একইভাবে গত অর্থবছর শেষে মংলা বন্দরে শুল্ক জটিলতার কারণে খালাস না হওয়া গাড়ির সংখ্যা এক হাজার ১২৬টি, আমদানি নিয়ন্ত্রিত হওয়াই অ-খালাসকৃত গাড়ির স্যংখ্যা ৫৫৬টি ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় খালাসযোগ্য গাড়ি পড়ে আছে তিন হাজার ৬২টি। মোট চার হাজার ৫২৪টি গাড়ি আমদানি হলেও নানা কারণে খালাস হয়নি। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বিগত অর্থবছরে মংলা কাস্টম হাউসের বড় সফলতা এসেছে বন্ড হাউসের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের রাজস্ব ফাঁকি থেকে। এসব প্রতিষ্ঠান শূন্য শুল্কে শুল্কযোগ্য পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে।
×