ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সিএনজির দাম বাড়ালে ফিলিং স্টেশন বন্ধের হুমকি

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ৫ আগস্ট ২০১৬

সিএনজির দাম বাড়ালে ফিলিং স্টেশন বন্ধের হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়ানো হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এ্যান্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন। পাশাপাশি পরিবহন ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞসহ অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এ মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। তারা সরকারের বঙ্গোপসাগরে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানে বাপেক্সকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি ও সিএনজির মূল্য বৃদ্ধি থামাও’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ‘পরিবহন খাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার স্বার্থে’ ফিলিং স্টেশন বন্ধের হুমকি দেন সংগঠনটির সভাপতি মাসুদ খান। অনুষ্ঠানে পরিবহন ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পরিবহন নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বক্তারা বলেন, সরকারের ভেতরে একটি মহল পরিবহন সেক্টরে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা শুরু করেছে, যার ধারাবাহিকতায় প্রায় শতভাগ সিএনজির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন পরিবহন ভাড়া বাড়বে, অন্যদিকে পণ্য আনা-নেয়ার ভাড়া হবে দ্বিগুণ, যা সাধারণ মানুষের ওপর বর্তাবে। সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়বে। অর্থনীতিতে আসবে বড় রকমের ধাক্কা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সেপ্টেম্বরে সিএনজির মূল্য ২৬ শতাংশ বাড়ানোয় পরিবহন ভাড়া দেড় গুণ বেড়েছে। এবার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৩ শতাংশ। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পরিবহন ভাড়া আবার বেড়ে দ্বিগুণের বেশি দাঁড়াবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে পণ্যর দামও বাড়বে। গ্যাসের দাম বাড়াতে গত মার্চে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাদের প্রস্তাবের ওপর আগামী ৭ থেকে ১৮ আগস্ট গণশুনানি হবে। অনেক সময় দেখা যায় গণশুনানিতে মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করা হলেও দাম বাড়ানো হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বর্তমানে দেশে সিএনজি স্টেশন ৫৯০। রূপান্তরিত গাড়ি তিন লাখ। থ্রি হুইলারের সংখ্যা ৫ লাখ। ২০১৫ সালে প্রতি ইউনিট সিএনজি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়। গত ছয় বছরে এর দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ৫ ভাগেরও কম ব্যবহার করে সিএনজি খাত সরকারকে মোট গ্যাস মূল্যের ২২ ভাগের বেশি রাজস্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ এমএম আকাশ বলেন, এতে দেশী সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। তাই দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারকে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিএনজির দাম বাড়লে সবকিছুর দাম বাড়বে মন্তব্য করে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সরকার যেভাবে দাম বাড়াতে চাচ্ছে তা যৌক্তিক নয়। সরকার খুবই যোগ্য তবে আক্কেল কম। সরকারকে কা-জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। অপরিকল্পিত ব্যয়ের বোঝা জনগণ কেন বহন করবে। সিএনজির দাম বাড়ানোর পর তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টির জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে দাবি করে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সরকার সিএনজির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে আয় বৃদ্ধির জন্য নয়। যারা নতুন ব্যবসায় নামছে তাদের ব্যবসা যেন লাভজনক হয় সেজন্য। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশে গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছেÑ এ অজুহাতে দাম বাড়াতে চাচ্ছে। দেশে গ্যাস নেই, এটি ঠিক নয়। বঙ্গোপসাগরে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে কূপ খননে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সরকার এলএনজির সঙ্গে দাম সমন্বয় করতে সিএনজির দাম বাড়াতে চাচ্ছে মন্তব্য করে বদরুল ইমাম বলেন, সরকারের বিরোধিতা করতে চাই না। তাদের অদক্ষতার বিষয়টি উপলব্ধি করাতে চাই। তিনি বলেন, সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী। যেখানে মানুষের মতামত বা সুবিধা অসুবিধার বিষয়টি প্রধান্য দেয়ার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। সভায় বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ সিএনজির দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, আমরাও চাই না সিএনজির দাম বৃদ্ধি হোক। দাম বৃদ্ধির এ প্রভাব সবার ওপরে পড়ে। আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বলেন, গত ছয় বছরে সিএনজির মূল্য ২০০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে জনভোগান্তি আরও বাড়বে। পরিবহন খাতে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এমএম আকাশের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন সিএনজি অটোরিক্সা ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন সভাপতি বরকত উল্লাহ প্রমুখ।
×