ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতির নতুন উদ্বেগ, রেমিটেন্সে ধস

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৫ আগস্ট ২০১৬

অর্থনীতির নতুন উদ্বেগ,  রেমিটেন্সে ধস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স উদ্বেগজনকভাবে কমে যাচ্ছে। দেশে যখন বিনিয়োগ মন্দা ছিল, তখনও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে আসছিল বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। অথচ অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারীদের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। ফলে অর্থনীতির জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রেমিটেন্স। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া ও ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান কমার ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা মাত্র ১০০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন, যা গত ৪৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত জুনে তারা পাঠিয়েছিলেন ১৪৬ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে রেমিটেন্স কমেছে ৩১ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, সামগ্রিকভাবে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ গত অর্থবছর কমেছে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্রবাসীরা গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছিলেন। তার আগের বছর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার কারণে সামগ্রিকভাবে প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশ থেকে প্রবাসীরা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯০৭ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশে। কিন্তু বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসব দেশ থেকে তারা ৫২ কোটি ডলার কম পাঠিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, গেল জুলাই ছিল ঈদের পরের মাস। ঈদ উপলক্ষে তারা আগের মাসে বেশি রেমিটেন্স পাঠানোর ফলে গেল মাসে কিছুটা কম পাঠিয়েছেন। এছাড়া সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এক ধরনের মন্দাভাব চলছে। সেসব দেশে বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। এর প্রভাব পড়েছে রেমিটেন্সে। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার এই ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রেমিটেন্স উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে মনে করেন বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্কের সিনিয়র গবেষক আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, প্রবাসী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ রয়েছে জ্বালানি তেল নির্ভর দেশগুলোতে। কিন্তু সম্প্রতি এই দেশগুলো নিজেরাই পড়েছে সঙ্কটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুলাইয়ে প্রবাসীরা ১৩৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে এর পরিমাণ ছিল ১৪৯ কোটি ডলার। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে তারা ১২৩ কোটি ডলার এবং ২০১২ সালের জুলাইয়ে ১২০ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন। প্রবাসী আয় ৃকমার আরেকটি কারণ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। ওই সব দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্থানীয় মুদ্রাকে ডলারে রূপান্তর করতে আগের চেয়ে বেশি স্থানীয় মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে প্রবাসী আয়ে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ডলারের বিপরীতে অনেক দেশের মুদ্রার মান কমেছে। আবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেলের দামও কমে গেছে। যে কারণে রেমিটেন্স কম এসেছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালে সৌদি আরবে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৩ জন। বর্তমানে ওই দেশে বাংলাদেশের ৫৮ হাজার ২৭০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণে সৌদি আরবে শ্রমের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একইভাবে কাতার, কুয়েত ও যুক্তরাজ্য থেকেও রেমিটেন্স প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১২০ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। গত এপ্রিলে রেমিটেন্স এসেছিল ১১৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। মার্চে এসেছিল ১২৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১১৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছিল ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।
×