ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্প-মুসলিম দম্পতি বাগযুদ্ধ

নতুন রাজনৈতিক বিভাজন

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২ আগস্ট ২০১৬

নতুন রাজনৈতিক বিভাজন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুদ্ধে নিহত মুসলিম মার্কিন সৈন্যের মা-বাবার মধ্যকার বাগযুদ্ধে আমেরিকার নতুন কৃষ্টিগত ও রাজনৈতিক বিভাজনের আভাসই ফুটে উঠেছে। একজন মুসলিম অভিবাসী আমেরিকান স্বাধীনতার গুণকীর্তন করে এবং সংবিধানের একটি পকেট কপি হাতে নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের ডিএনসি মঞ্চে আবির্ভূত হন। তার স্ত্রী তার শোক সংবরণ করতে করতে নীল হিজাব পরে তার পাশে এসে দাঁড়ান। বৃহস্পতিবার রাতে ডিএনসিতে প্রেসিডেন্ট পদে এক বড় দলের মনোনীত প্রার্থী প্রথম মহিলা প্রার্থী হিসেবে হিলারি ক্লিনটন প্রথম ভাষণ দেন। বিশাল সংখ্যক দর্শক সেই ভাষণ শোনেন। সেখানে ছিলেন নিহত এক মার্কিন আর্মি ক্যাপ্টেনের মা-বাবা, যারা ছিলেন গভীরভাবে শোকাচ্ছন ও আমেরিকান হিসেবে গর্বিত। সেখানে ছিলেন পাকিস্তান থেকে আগত মুসলিম অভিবাসীরা, যারা বর্তমান বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে চলমান প্রচার অভিযানের মধ্যে নিজেদের অস্বস্তিকর অবস্থা সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন। সেখানে ছিল একটি পকেট সংবিধান, যা সাম্প্রতিক সময়ে কনজারভেটিভ ও ইভানজেনিকান দলগুলোর জন্য এক জনপ্রিয় জিনিসে পরিণত হয়েছে। আর সেখানে ছিল হিজাব-মুসলিমদের মাথা ঢাকার কাপড়, যা পশ্চিমা বিশ্বে ইসলামের স্থান নিয়ে বির্তকেরই প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। খিজির ও গাজালা খানের মঞ্চে আবির্ভূত হওয়ার প্রতি যে বিশাল প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়, তাতে ২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর আমেরিকার জীবনযাত্রায় প্রাধান্য বিস্তার করেছে এমন কৃষ্টিগত ও রাজনৈতিক বিভাজনই প্রতিফলিত হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা ও উগ্র স্বাদেশিকতা নিয়ে খিজির খানের বক্তৃতাকে অনেকে সত্যিকারের দেশপ্রেম ও আমেরিকান সত্তা সম্পর্কিত এক বিবৃতি বলে দেখেন। অন্যরা বক্তৃতাটিকে দলীয় সমালোচনা কিন্তু এক আমেরিকান সৈন্যের মৃত্যুতে শোকাহত মা-বাবার এক শক্তিশালী আবেদন হিসেবে দেখেন। ট্রাম্প একে এক ব্যক্তিগত অপমান বলে ধরে নেন। গত সপ্তাহান্ত ধরে ট্রাম্প চার্লেটসার্ভিলের ওই অভিবাসী দম্পত্তির সমালোচনা করতে টুইট ও টিভি সাক্ষাতকারকে কাজে লাগান। ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করার দায়ে সৈন্যের বাবাকে অভিযুক্ত করেন। ট্রাম্প তার মা সম্পর্কে বলেন, তাঁকে সম্ভবত কোন কিছু বলতে দেয়া হয়নি। মনে হয়েছিল, তার কিছুই বলার ছিল না। উভয় কনভেনশনেই এরূপ সাধারণ আমেরিকানদের প্রদর্শনী চলে। ডেমোক্র্যাটিক কনভেনশনে পুলিশের গুলিতে নিহত কৃষ্ণাঙ্গদের মায়েরা হাজির হন আর রিপাবলিকান সমাবেশে লিবিয়ার বেনগাজিতে নিহত পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মীর মা প্যাট্রিসিয়া স্মিথ তার ছেলের মৃত্যুর জন্য তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে দোষারোপ করেন। খান পরিবার দ্রুত ট্রাম্পবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। কনভেনশনের পরদিন গাজালা খান ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন যে, তিনি তার প্রয়াত ছেলে ক্যাপ্টেন হুমায়ুন খানের ছবি দেখে এতই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন যে, তিনি প্রকাশ্যে কথা বলা থেকে বিরত ছিলেন। খিজির খান বা তার স্ত্রী কেউই ইতোপূর্বে জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে গিয়ে দাঁড়াননি। তারা এবার লড়াই থেকে দূরে সরে যাননি। তারা রবিবার ট্রাম্প সম্পর্কে তাদের ধারণা তুলে ধরতে প্রয়াসী হন। এনবিসি ও সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাতকারে খিজির খান ট্রাম্পকে এক ‘নীচমনা’ বলে অভিহিত করে বলেন, তিনি ঘৃণা, উপহাস ও বিভাজন ছড়াচ্ছেন। বর্ণগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ট্রাম্পের কর্কশ কথাবার্তার প্রতি লোকজনের মনোভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট প্রতিফলিত হয়। জুলাইয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট এবিসি নিউজের জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৫৬ জন আমেরিকান মনে করেন, ট্রাম্প নারী ও সংখ্যালঘুদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে শতকরা ৩৯ ভাগ আমেরিকান তা মনে করেন না। দলীয় ভিত্তিতে সেটি ভাগ করা হলে দেখা যায় শতকরা ৮৬ ভাগ ডেমোক্র্যাট, ৫৬ ভাগ স্বতন্ত্র ও ২৬ ভাগ রিপাবলিকান ট্রাম্প পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করেন। -ওয়াশিংটন পোস্ট
×