ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের পেস বোলিং উপদেষ্টা আকিব জাভেদ

রুবেল, তাসকিন, মুস্তাফিজরাই এখন বাংলাদেশের ‘রোল মডেল’

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩১ জুলাই ২০১৬

রুবেল, তাসকিন, মুস্তাফিজরাই এখন বাংলাদেশের ‘রোল মডেল’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুক্রবার ঢাকায় এসে শনিবার থেকেই নিজের কাজে লেগে গেছেন পাকিস্তানের সাবেক পেসার আকিব জাভেদ। পেসারদের তালিম দেয়া শুরু করে দিয়েছেন। এক সপ্তাহের জন্য ঢাকায় এসে প্রথমদিনেই এইচপি ও জাতীয় দলের পেসারদের পরামর্শক আকিব জানিয়ে দিলেন, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানরাই এখন বাংলাদেশের ‘রোল মডেল’। শুরুতে ২ আগস্ট পর্যন্ত হাই পারফর্মেন্স প্রোগ্রামের (এইচপি) পেসারদের নিয়েই কাজ করবেন আকিব। এইচপির ১৭ পেসারকে পেস বোলিং সম্পর্কে বোঝাবেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখা আব্দুল হালিম, রিফাত প্রধান, আবু জায়েদ রাহি, শহীদুল ইসলাম, ইমরান আলী এনাম, মোঃ আজিম, আশিকুজ্জামান, মেহেদী হাসান রানা, শুভাশীষ রায়, নুর আলম সাদ্দাম, আবু হায়দার রনি, দেওয়ান সাব্বির আহমেদ, এবাদত হোসেন চৌধুরী, সাইফউদ্দিন, আলাউদ্দিন বাবু, আরিফুল হক ও আবুল হাসানকে শিক্ষা দেবেন আকিব। ৩ ও ৪ আগস্ট জাতীয় দলের পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, আল আমিন হোসেন, মোহাম্মদ শহীদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি, শফিউল ইসলাম ও মুক্তার আলী পেস বোলিং সম্পর্কে আকিব জাভেদ থেকে শিক্ষা নেবেন। এ তালিকায় মুস্তাফিজুর রহমানও ছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে থাকায় আকিবের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারছেন না মুস্তাফিজ। প্রথমদিনেই আকিব জাভেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জানিয়ে দেন, রুবেল, তাসকিন ও মুস্তাফিজই এখন পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের ‘রোল মডেল’। আকিব বলেন, ‘রুবেল, তাসকিন ও মুস্তাফিজ এসে পড়ায় আগামী কয়েক বছরে আপনারা আরও ফাস্ট বোলার পাবেন। আপনাদের নিজেদের আদর্শ আছে এখন। আপনাদের রোল মডেল তারা।’ একটা সময় ছিল, যখন স্পিন আক্রমণ ছাড়া বাংলাদেশ দল কল্পনাই করা যেত না। স্পিনারদের ওপরই ভরসা করতে হত। কিন্তু ২০১৫ সালে তা বদলে গেছে। এখন পেসারদের ওপরই ভরসা করতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গতির ঝড় তুলে এরইমধ্যে সাড়া ফেলেছেন রুবেল, তাসকিন, মুস্তাফিজ। মুস্তাফিজতো এখন যে কোন দল, যে কোন ব্যাটসম্যানের জন্যই আতঙ্কের নাম! রুবেল ও তাসকিনতো গতির ঝড় তুলে দেখিয়েছেন। তাতে প্রতিপক্ষও বিধ্বস্ত হয়েছে। এ পেসত্রয়ীকে নিয়েই তাই আকিব ভবিষ্যত বাণী দিয়েছেন। সামনে এ তিন পেসারকে দেখেই পেসার হতে চাওয়া খেলোয়াড়ের অভাব হবে না বলেই বিশ্বাস আকিবের। বাংলাদেশ দলে এখন পেসাররাই রোল মডেল। কিন্তু ২০১৫ সালের আগে তা ছিল না। কেন? আকিব জানালেন, ‘সামনে আদর্শ না থাকায় এমনটা হয়েছে।’ এখন যা আছে। পাকিস্তান ক্রিকেটে যেমন ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস ও খোদ আকিব জাভেদ তরুণদের আদর্শ ছিলেন। তরুণরা তাদের আদর্শ মেনেই পেসার হতে চাইতেন। কিন্তু বাংলাদেশে সেইরকমটি না থাকাতেই আগে পেসারের আধিক্য ছিল না। এখন সেটি তৈরি হয়েছে। এ তৈরি হওয়ার পেছনে অবশ্য রুবেল, তাসকিনদের গতিটাও অনেক কাজে দিয়েছে। এমনই ইঙ্গিত আকিবের, ‘আপনি যদি কোন ফাস্ট বোলারের ছবি কিংবা ভিডিও দেখান, যদি সে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করতে না পারে তবে সে তরুণ পেসারদের অনুপ্রাণিত করবে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের এমন পেসার আছে। আপনাদের তিন বোলার আছে যারা তরুণদের দেখাতে পেরেছে তারা জোরে বল করতে পারে। এটা শুরু মাত্র। আমাদেরও এমন ছিল। কিন্তু যখন আদর্শ হিসেবে ইমরান এলেন, আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’ বাংলাদেশেও এমনটি হয়েছে। যখন মাশরাফি নিজের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুছড়ে দিতে শুরু করলেন, তখন তরুণরা পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আজ যে রুবেল, তাসকিন, মুস্তাফিজরা পেস চমক দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করছেন, তাদের স্বপ্নদ্রষ্টাও কিন্তু মাশরাফিই। কিন্তু আদর্শ হলেও ২০১৫ সালের আগে আসলে সেইরকমভাবে বাংলাদেশ দলে পেসারদের দাপট দেখা না যাওয়াতে পেসারদের নিয়ে সেইভাবে আলোড়ন ওঠেনি। এখন বাংলাদেশ দলে পেসাররাই সর্বেসর্বা। সেটি আগামীতে আরও বাড়বে, সেটি বাড়ার পেছনে রুবেল, তাসকিন ও মুস্তাফিজরাই আসল ভূমিকা নিচ্ছেন। তাই এ তিনজনকেই ‘রোল মডেল’ বলছেন আকিব। আকিব এবার সাতদিনের জন্য এসেছেন। এ অল্প সময়ে কি খুব বেশি কিছু শেখানো সম্ভব? তাও সাতদিনের মধ্যে মূলত ৬ দিনই কাজ করবেন। চারদিন এইচপিতে থাকা পেসারদের নিয়ে কাজ করবেন। দুইদিন জাতীয় দলের পেসারদের নিয়ে কাজ করবেন। আর ৫ আগস্ট একদিন স্থানীয় কোচদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আকিব মনে করেন এ অল্প সময়েই সম্ভব, ‘ছয়দিন খুব কম সময় না। আর আমাকে একবারে প্রথম থেকে শুরু করতে হবে না। বোলিংয়ে ভাল করার নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া আছে। আমি এই সময়ে বোলারদের এসব প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব, যাতে তারা তাদের বোলিংয়ে গতি বাড়াতে পারে।’ স্থায়ীভাবে পেস বোলিং কোচ না হতে পারা নিয়ে আকিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে জাতীয় দলের বোলিং কোচ হওয়ার জন্য আমার সঙ্গে তিন-চারবার যোগাযোগ করা হয়। এ জন্য আমি অনন্দিত ও সম্মানিত বোধ করছি। তবে লাহোরের সঙ্গে চুক্তি থাকায় আর কোচ হওয়া হয়নি।’
×