ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী সাব্বিরের লাশ গ্রহণ করবে না পরিবার

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৮ জুলাই ২০১৬

জঙ্গী সাব্বিরের লাশ গ্রহণ করবে না পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গীর একজন চট্টগ্রামের অনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়ার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক রাশেদের বড় ছেলে সাব্বিরুল হক কনিক বলে শনাক্ত করেছেন অনেকে। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও এমনটি ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিহত ওই জঙ্গী প্রকৃতপক্ষে সাব্বিরুল হক কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না তার পরিবার। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পুলিশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৯ জঙ্গীর মধ্যে ৮ নম্বর জঙ্গীর চেহারার কিছু অংশ সাব্বিরুল হক কনিকের সঙ্গে মিলছে। তবে চোখ ও নাকের কিছু অংশ মিলছে না। সাব্বিরুলের পিতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা আজিজুল হক রাশেদের বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সাব্বিরুলের পিতাকে আমরা ডেকে এনেছিলাম। তাকে নিহত ওই জঙ্গীর ছবি দেখিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন, নিহত জঙ্গীর সঙ্গে তার নিখোঁজ ছেলের বেশকিছু মিল আছে। আবার কিছু কিছু অংশ মিলছে না।’ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আমরা তাকে ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেখানে গিয়ে তিনি লাশ শনাক্ত করবেন। তারপরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে লাশ সাব্বিরুলের কিনা।’ এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা আজিজুল হককে জিজ্ঞেস করেছিলাম লাশটি তার ছেলের বলে শনাক্ত হলে তিনি কি করবেন? তখন তিনি জানিয়েছেন, লাশ না নিয়ে সোজা ফিরে আসবেন।’ এ বিষয়ে বিকেলে সাব্বিরুল হক কনিকের বাবা আজিজুল হক রাশেদের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। সাব্বিরুল হক কনিকের বাবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগে পরিদর্শক আজিজুল হক চৌধুরী রাশেদ আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাকলিয়া থানাধীন কালামিয়া বাজার সংলগ্ন ইসহাকের পুল এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকছেন। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে সাব্বিরুল হক কনিক নিখোঁজ রয়েছেন। ওইদিন তার প্রতিবেশীর বাসায় বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে তার কোন খবর পাওয়া যায়নি। জানা যায়, আজিজুল হক চৌধুরীর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সাব্বিরুল হক কনিক সবার বড়। সে ২০১০ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে নগরীর সরকারী মুসলিম হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সরকারী কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসির পর চট্টগ্রামের চকবাজারে জামায়াত-শিবির পরিচালিত রেটিনায় কোচিং করতে যাওয়ার পর থেকে কনিকের কথাবার্তা, চালচলনে পরিবর্তন দেখা দেয়। এরপর চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানাধীন রাহাত্তার পুলে অবস্থিত মাইকবিহীন মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করেন। এখানেই মূলত আমূল পাল্টে যায় কনিক। এরপর থেকে সে তবলিগের কথা বলে মাঝে মাঝেই সপ্তাহ-দশ দিনের জন্য উধাও হয়ে যেত। বছরখানেক আগে একবার তিনমাসের জন্য নিরুদ্দেশ থাকার পর বাসায় ফিরে আসে। সর্বশেষ গত চার মাস আগে ফেব্রুয়ারি মাসে রাউজানে এক বিয়েতে যাবার কথা বলে বাবার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নিয়ে বের হয়েছে। দীর্ঘদিন কোন খোঁজ না থাকায় সন্তানের আশা একপ্রকার ছেড়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা। সন্তান নিজেই বিপথগামী হয়েছে বুঝতে পেরে নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি করারও প্রয়োজন মনে করেননি তারা।
×