ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি

চট্টগ্রাম নগরীকে ঢেলে সাজাতে চাই ॥ নাছির

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৬ জুলাই ২০১৬

চট্টগ্রাম নগরীকে ঢেলে সাজাতে চাই ॥ নাছির

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তিতে চট্টগ্রামকে নান্দনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়তে নাগরিকদের দায়িত্বশীলতা ও সহায়তা চাইলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এ নগরীকে আমি ঢেলে সাজাতে চাই। সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দায়িত্ব পালনে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিলবোর্ড উচ্ছেদ, সবুজ ফিরিয়ে আনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক বছরে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমার কাজের চূড়ান্ত মূল্যায়ন করবেন মেয়াদ শেষ হওয়ার পর। মূল্যায়নের জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট নয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোমবার সকালে নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আ জ ম নাছির উদ্দিন। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কর্পোরেশনের কাছে তাদের প্রত্যাশা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও নগর উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরা হয়। তাদের পক্ষ থেকে দাবি ওঠে জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরীর। বক্তব্যে মেয়রও বিগত এক বছরে সিটি কর্পোরেশন ও নগর উন্নয়নে ইতোমধ্যেই সম্পন্ন ও চলমান কর্মকা-ের বর্ণনা তুলে ধরেন। তবে একই সঙ্গে তিনি কর্পোরেশনের জনবল সঙ্কট, নাগরিকদের দায়িত্বশীল না হওয়া এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও বাধা-বিপত্তির কথাও উল্লেখ করেন। এদিকে ঢাকার দুই সিটি মেয়রের মতো চট্টগ্রামের সিটি মেয়রকেও মন্ত্রীর মর্যাদা প্রদানের জোর আওয়াজ ওঠে সমবেত সুধীজনের মধ্য থেকে। বক্তব্যে তারা চসিক মেয়রকে যথাযথ মর্যাদা প্রদানের মধ্য দিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে মূল্যায়নের আহ্বান জানান সরকারের কাছে। চসিক মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম অনেক পুরনো নগরী। নগর পরিকল্পনাবিদ ও সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের পরামর্শ নিয়ে আমি এ নগরীকে ঢেলে সাজানোর পক্ষে। তিনি নাগরিক সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, নাগরিকরা যদি সচেতন ও দায়িত্বশীল না হয় তাহলে সরকার বা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যত পরিকল্পনাই গ্রহণ করা হোক না কেন, সফল হওয়া যাবে না। তিনি সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত শহরগুলোর উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানকার মানুষ আইন মেনে চলে। বাদামের খোসা কিংবা চকোলেটের মোড়ক যত্রতত্র না ফেলে পকেটে রেখে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। আবর্জনা অপসারণের ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, দিনের বেলায় পথচারী ও সাধারণ মানুষের অসুবিধা হতে পারে এই ভেবে রাতে বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম গ্রহণ করি। কিন্তু দেখা গেল, বাসাবাড়ির আবর্জনা রাতের মধ্যেই ডাস্টবিনে না ফেলে দিনের বেলায়ও ফেলা হচ্ছে। ফলে আবর্জনা যদি কিছু থেকে যায় সেই দায়ভার নগরবাসীরই হওয়ার কথা। তিনি আগামী ১ আগস্ট থেকে ডোর-টু-ডোর আবর্জনা সংগ্রহ শুরুর পদক্ষেপের কথা জানিয়ে জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হচ্ছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও গত অর্থবছরে ৪৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় হয়েছে। কর্পোরেশনের কোন বিভাগেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নেই। পুরনো ও অস্থায়ী কর্মচারীদের দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর ধার্য করার এখতিয়ার সিটি কর্পোরেশনের নেই। সরকার যা নির্ধারিত করে দেয় সে অনুযায়ী কাজ করে কর্পোরেশন। জলাবদ্ধতার বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে মেয়র বলেন, সময়মতো নালা-নর্দমা পরিষ্কার ও পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এ বছর বর্ষাতে তেমন জলাবদ্ধতা হয়নি। তবে বহদ্দারহাট, মোহরা, বাকলিয়া, হালিশহরসহ কিছু নিচু এলাকা ডুবে যায় জোয়ারের পানির কারণে। চিরতরে এ জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী নগরীর মদুনাঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ছোট বড় ২৬টি খালের মুখে স্লুইস গেট ও রেগুলেটর স্থাপন করা হবে। প্রত্যেকটি খাল ড্রেজিং করা হবে। এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় হবে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। আগামী এক মাসের মধ্যে পরিকল্পনা অনুমোদন ও চলতি বছরের মধ্যে তা একনেকে পাস হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে মেয়র বলেন, সরকার থেকে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন মেলার পরই জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে দূরীকরণে এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাজের ব্যাপ্তি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এ দুটি খাতে ব্যয় অনেক। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের কোন সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করে না। এ কর্পোরেশন অনেক স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালনা করে। কিন্তু এর জন্য নাগরিকদের কাছ থেকে বাড়তি কোন ট্যাক্স আদায় করা হয় না। কর্পোরেশনের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে চসিক মেয়র বলেন, যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন সংস্থার মাসিক ব্যয় ছিল ৯ কোটি টাকা। এখন সেই ব্যয় ১৮ কোটি টাকা। স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও প্রণোদনা বৃদ্ধির কারণেই ব্যয় বাড়ছে বলে জানান তিনি। সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, বিজিএমই’র প্রথম সহসভাপতি মঈন উদ্দিন আহমেদ মিন্টু, ইউএসটিসি’র ভাইস চ্যান্সেলর ড. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সাদেক চৌধুরী, বিএমএ চট্টগ্রাম সভাপতি ডাঃ মজিবুল হক, চিটাগাং চেম্বার পরিচালক অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, প্রবীণ সংবাদিক এম নাসিরুল হক, দৈনিক চট্টগ্রাম মঞ্চ সম্পাদক উমর ফারুক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, চসিক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, জোবাইরা নার্গিস ও নিছার উদ্দিন মঞ্জু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কাজী শফিউল আলম। চসিক মেয়রকে মন্ত্রীর মর্যাদা প্রদানের দাবি ॥ প্রথম বর্ষপূর্তিতে ঢাকার দুই সিটি মেয়রকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মর্যাদা প্রদান করায় চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকেও পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা প্রদানের দাবি উঠেছে সুধীজনের বক্তব্য থেকে।
×