ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মতবিনিময় সভা থেকে আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীকে

জঙ্গীদের কবর রচনায় মাদ্রাসা শিক্ষকরা পাশে আছেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ জুলাই ২০১৬

জঙ্গীদের কবর রচনায় মাদ্রাসা শিক্ষকরা পাশে আছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে চালানো জঙ্গীবাদীদের দাফন করে দেশ ও ধর্মকে রক্ষা করার অঙ্গীকার এসেছে মাদ্রাসা শিক্ষকদের এক সভা থেকে। সরকার নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসার সুপার-অধ্যক্ষরা জঙ্গীবাদীদের ইসলামের প্রতিপক্ষ অভিহিত করে বলেছেন, এ দেশ পীর, মাশায়েখ, আউলিয়া, তরিকতপন্থীদের দেশ। এখানে জঙ্গীবাদের কোন স্থান হতে দেয়া হবে না। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গীবাদীদের কবর রচনা করা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভয় দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী, আপনি একা নন। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের কোটি কোটি মাদ্রাসা শিক্ষকসহ শান্তিপ্রিয় মানুষ আপনার পাশে আছে। কোন মাদ্রাসা শিক্ষক যদি জঙ্গীবাদীদের মদদ দেন তাকে যেন ছাড় দেয়া না হয়। রবিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সারাদেশের ইবতেদায়ী, দাখিল ও আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সুপারদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে মাদ্রাসা শিক্ষকদের করণীয়’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। সভায় সারাদেশ থেকে এক হাজার ২০০ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং কেন্দ্র সচিব উপস্থিত ছিলেন। যারা অধিকাংশই শিক্ষকতার পাশাপাশি মসজিদের ইমামতিসহ ধর্মীয় নানা কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। সকলেই প্রায় ওয়াজ-মাহফিলেরও বক্তা। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারমান অধ্যাপক এ কে এম ছায়েফউল্যার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব এএস মাহমুদ, এসএম এহসান কবীর, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আহসান উল্লাহ, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব শাব্বির আহমদ মোমতাজি প্রমুখ। জঙ্গীবাদের বিষয়ে সরকার ও শিক্ষক সমাজের করণীয় নিয়ে বক্তব্য রাখেনÑ ময়মনসিংহের ডিএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইদ্রিস খান, দিনাজপুরের ভবানীপুর কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাসান মাসুদ, রাজশাহীর মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোকাদ্দাসুল ইসলাম, খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল খায়ের মোঃ জাকারিয়া, পিরোজপুরের বায়তুল হুদা দাখিল মাদ্রাসার সুপার ফারুক আহমদ হাওলাদার, ফেনীর ছাগলনাইয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হোসেন আহমদ, সিলেটের বিশ্বনাথের কামালবাজার আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একেএম মনোয়ার আলী, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ কাফিল উদ্দিন সরকার প্রমুখ। সভায় শিক্ষকদের পক্ষ থেকে যেমন জঙ্গীদমনে সুপারিশ এসেছে, তেমনি মাদ্রাসার প্রধানদের উদ্দেশে বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুরুতেই মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান একেএম ছায়েফউল্যাহ শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সক্রিয় থাকেন। চারদিকে নজর রাখেন। এ দেশের ইসলামপ্রিয় জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে এই জমিনে জঙ্গীবাদীদের দাফন করা হবে। চেয়ারম্যানের এ বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে হাত তুলে অঙ্গিকার করেনÑ দেশ ও ইসলামকে রক্ষায় জঙ্গীবাদীদের দাফন করা হবে। এ দেশে জঙ্গীবাদের স্থান হবে না বলেও সেøাগান তুলেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব শাব্বির আহমেদ মমতাজি বলেন, কতিপয় ব্যক্তি মাদ্রাসা শিক্ষায় জঙ্গীবাদ আছে বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু আলীয়া মাদ্রাসায় কোন জঙ্গী নেই। আজকে যারা এ সভায় এসেছেন সকলেই কেন্দ্র সচিব। সকলেই বাড়ি ফিরে গিয়ে প্রতি কেন্দ্রে একটি উদ্বুদ্ধকরণ সভা করবেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোরান শিক্ষাও বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোরানে জঙ্গী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা আছে, তা পড়াতে হবে। এটি করতে পারলে জঙ্গীবাদের এ দেশে ঠাঁই হবে না। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, আজকে যারা এখানে এসেছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই শিক্ষকতার পাশাপাশি মসজিদে ইমামতিও করেন। এছাড়া সকলেই প্রায় ওয়াজ-মাহফিলেরও বক্তা। আপনাদের কথা সকলেই মেনে চলে। আপনারা নামাজের আগে বা পরে, ওয়াজে জঙ্গীবাদবিরোধী আলোচনা করুন। জঙ্গীবাদের বিষয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএস মাহমুদ মাদ্রাসায় জঙ্গীবাদ দমনে সাত দফা প্রস্তাব দেন। যেগুলো হচ্ছেÑ সকল শিক্ষার্থীর গতিবিধি ও আচরণ নজরদারিতে রাখতে হবে; প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা সুপারদের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মাদ্রাসায় অবস্থান করতে হবে; শিক্ষকদেরও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মাদ্রাসায় অবস্থান করতে হবে; নিয়মিতভাবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সমন্বয়ে সভা করতে হবে; শিক্ষকরা কী পাঠদান করান সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে; ছাত্রাবাসে আবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর নজর রাখতে হবে ও হোস্টেল সুপারদের দায়িত্বও যথাযথভাবে পালন করতে হবে; হামদ-নাত, ডিবেট ও খেলাধুলার মতো এক্সটা কারিকুলাম এক্সিভিটিজ সকল মাদ্রাসায় চালু রাখতে হবে। ময়মনসিংহের ডিএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ইদ্রিস খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভয় দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি একা নন। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাদ্রাসার শিক্ষকসহ দেশের কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় মানুষ আপনার পাশে আছে। ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ কাফিল উদ্দিন সরকার বলেন, হত্যাকারীরা জানে না কেন তারা হত্যা করছে। আর যারা শিকার হচ্ছেন তারাও জানেন না কেন তাদের হত্যা করা হলো। এজন্য একজন শিক্ষার্থীকে শিশুকাল থেকেই উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত কঠিন সময়। তাই মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। কোরান-হাদিসের আলোকে বই প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বলা আছে তা পাঠ্য করতে হবে। টেলিভিশনে বেশি বেশি শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে। ছাত্রাবাস বা হোস্টেলগুলোতে বিশেষ নজর দিতে হবে। এখানেও নিয়মিত হাজিরার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। সপ্তাহে একদিন জঙ্গীবাদবিরোধী আলোচনারও আয়োজন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, জঙ্গীরা ইসলামের প্রতিপক্ষ। ইয়াজিদির বংশধর। তবে এ দেশের মানুষ তার দেশকে কখনও এ অপশক্তির হাতে যেতে দেবে না। জঙ্গীবাদীদের দাফন করা হবে। ২৩ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না ॥ দেশের ২৩ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় না ৯ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এছাড়া ৪৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে নেই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন। ৪১ শতাংশে বার্ষিক ক্রীড়া ও ৭০ শতাংশে স্কাউটিং হয় না। লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানের মতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্রও এর থেকে খুব একটা ভিন্ন মনে করার কারণ নেই। শাবিপ্রবি’র সাবেক উপাচার্যের মৃত্যুতে শিক্ষামন্ত্রীর শোক ॥ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ছদরুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় দেশে বিজ্ঞানশিক্ষা ও গবেষণায় ড. ছদরুদ্দিনের অবদান বিশেষভাবে স্মরণ করেন। শিক্ষামন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
×