ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বাঁধের ওপর বন্যার্তদের ক্ষণিকের ঘর গেরস্তালি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৫ জুলাই ২০১৬

নতুন বাঁধের ওপর  বন্যার্তদের  ক্ষণিকের ঘর  গেরস্তালি

সমুদ্র হক ॥ যমুনায় থৈ থৈ পানি। পাহাড়ী ঢলের পানি উজান থেকে নেমে ভাটির দিকে যাচ্ছে। ডুবিয়ে দিচ্ছে কৃষকের ঘর বসতি। ভাসিয়ে দিয়েছে জীবনের ধারা। এর মধ্যেই বন্যার্তরা ডিঙি নৌকায় সম্বল যা পেয়েছে তাই তুলে রওনা দিয়েছে উঁচু ভূমিতে। সেখানেও পানি টইটম্বুর। ঢলের স্রোত সামলাতে না পারলেই ডুবে যাবে। এভাবে ডুবে যাচ্ছেও। অস্তিত্বের লড়াই যমুনার সঙ্গে। বগুড়ার যমুনা তীরের সারিয়াকান্দির ঘুঘুমারি এলাকার বসতভিটায় পানি উঠে ডুবে গেছে। গাঁয়ের মানুষ পরিবার-পরিজন জিনিসপত্র নিয়ে ক্ষণিকের আশ্রয় নিয়েছে নব নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর। সেখানেই ঘর গেরস্তালি। প্রায় এক বছর আগে ধনিরকান্দি থেকে কামালপুর পর্যন্ত প্রায় ৮ কি.মি দীর্ঘ বাঁধ নির্মিত হয়েছে। নতুন এই বাঁধ অনেক এলাকাকে বন্যার থাবা থেকে মুক্ত করেছে। যমুনার পানি বেড়েছে-এর পূর্ব ধারে। নিত্য পানি বাড়ছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত যমুনার পানি বিপদসীমার ৩০ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাঁধের ওপর ছোট ঝুপড়িঘর তুলে আশ্রয় নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। তারপরও মানবিক কারণে বন্যার্তরা আশ্রয়ের অনুমতি পেয়েছে। তবে শর্ত আছে, বসতভিটা থেকে পানি নেমে গেলেই ফিরতে হবে। বন্যা ও ভাঙ্গন কবলিত ঘুঘুমারি থেকে নতুন বাঁধে আশ্রয় নেয়া ক’জন বললেন বৃষ্টি না হলে উন্মুক্ত আকাশের নিচেই কয়েক দিন থেকে ফিরে যেতেন। তা আর হচ্ছে না। কখনও টানা বৃষ্টি কখনও থেমে থেমে বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে। কাঁথা-বালিশ ভিজছে। তাই বাঁশ খড় কাশবনের কাঠি সংগ্রহ করে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে তার ভেতরেই ঘর গেরস্তালি। এই ঘরেই রান্নাবান্না। এই ঘরেই থাকা, শৌচাগার উন্মুক্ত স্থানে। পাশেই গরু-ছাগল রাখার জন্য ছোট্ট ঘর বানানো হয়েছে। এমন দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকতে হচ্ছে তাদের। ঘুঘুমারি গ্রামের আফসার আলী বললেন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এই বাঁধেই আশ্রয় নিয়েছেন। পানি নেমে গেলেই ফিরবেন। তোশক কাঁথা বালিশ হাঁড়ি-পাতিল খাওয়ার চাল তরিতরকারি কেরোসিন কুপি ইত্যাদি নিয়েই বাঁধে এসেছেন। সরকারীভাবে আশ্রিতদের রিলিফ বিতরণও শুরু হয়েছে। চন্দনবাইশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন দুলাল বললেন, তার এলাকার বন্যার্তদের জন্য যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা যায় তা করছেন। এই এলাকার সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়ে সাধ্যানুযায়ী সহায়তা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ত্রাণ অফিস, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস বন্যার্তদের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতা দিচ্ছেন। নতুন বাঁধে আশ্রিতদের এভাবে বাঁধের ওপর চলছে ক্ষণিকের ঘর গেরস্তালি।
×