ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচী ঘোষণা

তারেক আপীল করবেন দেশে ফিরে, আজ বিএনপির বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৩ জুলাই ২০১৬

তারেক আপীল করবেন দেশে ফিরে, আজ বিএনপির বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জেল-জরিমানার প্রতিবাদে আজ শনিবার ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, মামলা দিয়ে তারেক রহমানের অগ্রযাত্রা থামানো যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের আইনজীবী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সময় এলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে মুদ্রা পাচার মামলায় আইনের বিধান অনুযায়ী আপীল করবেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে না এলে এ মামলায় তার পক্ষে আপীল করা সম্ভব নয়। তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে মামলাটি করা হয়েছে এবং তার অনুপস্থিতিতে সাজা দিয়েছে। আইনের বিধানমতে যে পর্যন্ত না তারেক রহমান দেশে আসেন এবং এখানে হাজির না হবেন, সে পর্যন্ত তার পক্ষে আপীল করা সম্ভব নয়। খন্দকার মাহবুব বলেন, তারেক রহমান মুদ্রা পাচারের সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত নন। এমনকি বিদেশের কোন ব্যাংকে তার একটি পয়সাও নেই। কিন্তু তারপরও তাকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। তার অপরাধ, তিনি জিয়াউর রহমানের পুত্র। তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি, পর্যুদস্ত ও জনসম্মুখে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যই সরকার ২০০৩-০৬ সালের ঘটনার ওপর ২০০৯ সালে মামলা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে সাজা দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি এ সাজা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। খন্দকার মাহবুব বলেন, তারেক রহমানকে ওয়ান/ইলেভেনের সময় গ্রেফতার করে নেয়া হয়েছিল। অমানুষিক নির্যাতন করে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। তারপর তাকে সরকারের অনুমতিতে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসারত ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলাটি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে। এ মামলায় তারেক রহমানকেও আসামি করা হয়। মাহবুব বলেন, বাংলাদেশ থেকে একটি টাকাও পাচার হয়নি। টাকার লেনদেন হয়েছে বৈধভাবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপরাধ, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতা। সরকারকে বিভিন্ন সময় চমক সৃষ্টি করতে হয়। যখনই সরকার অসুবিধায় পড়ে তখন একের পর এক চমক সৃষ্টি করে। ফলে যে ইস্যুগুলো সরকারের সামনে আসে, তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে আড়ালে চলে যায়। আমরা দেখেছি ব্যাংক ডাকাতি, আমরা দেখেছি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হওয়া। তিনি বলেন, তারেক রহমান স্বীকার করেছেন মামুনের সঙ্গে তার পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। তারেক রহমান বলেছেন, আমি বিদেশে যখন গিয়েছিলাম তখন তার এ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নিয়েছি, খরচ করেছি। আবার দেশে গিয়ে সেই টাকা পরিশোধ করা হয়। তারেকের বিরুদ্ধে মামলাটা কি তা উল্লেখ করতে গিয়ে মাহবুব বলেন, ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খাদিজা ইসলাম, যিনি নির্মাণ ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান। তৎকালীন টঙ্গীতে একটি বিদ্যুতকেন্দ্র তৈরির জন্য তিনটি চাইনিজ কোম্পানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পিডব্লিউডির দরপত্রে। সে দরপত্রে চাইনিজ কোম্পানি হারবাল পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। খাদিজা ইসলাম তার এজেন্ট ছিলেন। তার লোকাল এজেন্টের সঙ্গে গিয়াসউদ্দিন মামুন কনসালটেন্ট ছিলেন। মামুনের কাজ ছিল কাজটি যাতে বাংলাদেশের মাটিতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। মাহবুব বলেন, ঘুষ দেয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়। সম্পূর্ণ মামলা নির্ভর করে খাদিজা ইসলামের বক্তব্যের ওপর। তিনি আদালতে এলেন। আমরা তখন ছিলাম। তারেক রহমান যখন বিদেশে ছিলেন তখন ২০০৯ সালে মামলাটি করা হয়। আইনগতভাবে তারেক রহমানের পক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে আমরা জেরা করলাম। খাদিজা ইসলাম স্পষ্টভাবে বললেন, আমি গিয়াসউদ্দিন মামুনকে কনসালটেন্সি ফি হিসেবে টাকা দিয়েছি। হারবাল কোম্পানি সিঙ্গাপুরে তাদের এ্যাকাউন্ট থেকে আমরা টাকাটা জমা দিয়েছিলাম। আমার এ্যাকাউন্ট থেকে কনসালটেন্সি ফি হিসেবে মামুনকে টাকা দেয়া হয়। বাংলাদেশে থেকে কোন লেনদেন হয়নি। বাংলাদেশের একটি পয়সাও বিদেশে মামুন গ্রহণ করেনি। টাকা দিয়েছে চাইনিজ কোম্পানি, সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরের এ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। সেখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে মামুনের এ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। এই হলো মামলা। মাহবুব হোসেন বলেন, হাইকোর্ট একতরফা বিচার করেছে। সেখানে তারেক রহমানের পক্ষে কোন আইনজীবী বক্তব্য রাখতে পারেননি। একজন লোকের হাত-পা বেঁধে তাকে দুর্নীতিবাজ বলে অর্থ পাচার করেছে বলা হয়। এই যদি হয় দেশের অবস্থা, সেখানে আমরা বিচার ব্যবস্থার কোথায় যাব। সাধারণ মানুষই বা কোথায় যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, এ মামলায় একদিন সুবিচার হবে এবং দেশের মানুষ জানতে পারবে, তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য সাজা দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইমলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আবুল বাশার। তারেকের বিরুদ্ধে রায় সাজানোÑহান্নান শাহ ॥ অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় সাজানো বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে মানবাধিকার পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এরশাদ নয়, এরশাদের ১৪ গোষ্ঠীও সরকারের বিরোধিতা করতে পারবেন না। কারণ এরশাদ ও শেখ হাসিনা ভারতের চাবিকাঠিতে নড়ছেন। হান্নান শাহ বলেন, সরকার মনে করে, তারেকের নামে মামলার নাটক করেই জনগণকে ভুলিয়ে রাখা যাবে। তারেক রহমান অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু জনগণকে বিভিন্ন ইস্যুতে ভুলিয়ে রাখতেই তার বিরুদ্ধে এ মামলা সাজানো হয়েছে। তিনি বলেন, বিনা অপরাধে দেশে গণগ্রেফতার চলছে। অথচ বর্তমান সরকার পুলিশের এ সকল কাজকে উৎসাহিত করছে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন ও সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। আগামী দিনে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠায় আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিন, ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ ও জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন।
×