ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিশোধিত মূলধন বাড়ল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা

পুঁজিবাজারে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২২ জুলাই ২০১৬

পুঁজিবাজারে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়িয়ে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই শেয়ারবাজারের অতিরিক্ত বিনিয়োগ আইনী সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকারী-বেসরকারী ১৩ বাণিজ্যিক ব্যাংক। শুধু তাই নয়, শেয়ারবাজারের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে এসব ব্যাংক তাদের সাবসিডিয়ারির মূলধন এমনভাবে বাড়িয়েছে যে, তাতে উল্টো বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। সবমিলে আইনী সীমার মধ্যে থেকেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত আরও সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ১৩ ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধিত মূলধন বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়কে ঘিরে শেয়ারবাজারে যে ভীতি তৈরি হয়েছিল, তারও অবসান হবে। জানা গেছে, ১৩টি ব্যাংকের এ সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছিল। ব্যাংকগুলো যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করে আইনী সীমার নিচে নামিয়ে আনতে পারে, সেজন্য মূলধন বাড়িয়ে বিনিয়োগ সমন্বয়ের বিকল্প সুযোগ তৈরি করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৭ এপ্রিল গবর্নর ফজলে কবির বিকল্প এ ব্যবস্থাটির অনুমোদন দেন। এরপর ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে মূলধন বাড়িয়ে বিনিয়োগ সমন্বয়ের অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হয়। ধাপে ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব আবেদন অনুমোদন করে। ২০১৩ সালে এ ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য ২০১৬ সালের জুলাইয়ের ২১ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এটি সমন্বয়ের শেষদিন ছিল বৃহস্পতিবার। শেয়ার বিক্রি ছাড়াই এসব ব্যাংক তাদের বিনিয়োগ আইনী সীমায় নামিয়ে আনার সুযোগ নিয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক সহযোগী কোম্পানিকে (ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক) দেয়া ঋণকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মূলধন হিসেবে রূপান্তর করে এ শর্ত পূরণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সমন্বয় করার পর ব্যাংকগুলোর বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ, পূবালীর ২০ দশমিক ১৫, এবি ব্যাংকের ২১ দশমিক ৯৯, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্টের ২৩ দশমিক ৬৯, ওয়ান ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৯৯, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২ দশমিক ৩৯, দ্য সিটি ব্যাংকের ১৪ দশমিক ৬৬, সাউথইস্ট ব্যাংকের ১১ দশমিক ৯, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২১ দশমিক ৩, শাহজালাল ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৫৫, আইএফআইসি ব্যাংকের ১৯ দশমিক ৩, জনতা ব্যাংকের ২৩ দশমিক ৮১ এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ। অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে গিয়ে এই ১৩ ব্যাংকের বিনিয়োগ শুধু ২৫ শতাংশের নিচে নেমে আসেনি, বরং তাদের আইনী সীমার মধ্যে থেকেই অতিরিক্ত ১৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী। তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ১৩টি ব্যাংককে যে আইনী সীমার মধ্যে তাদের বিনিয়োগ সীমা নামিয়ে আনার সুযোগ দিয়েছি। তারা নির্ধারিত সময়েই এটি করেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে আরও বাড়তি ১৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে। পুঁজিবাজারের এই মন্দা সময়ে এটি একটি ভাল খবর। এতে বিনিয়োগকারীরা আরও উৎসাহিত হবে। তিনি আরও জানান, শুধু ১৩টি ব্যাংকই নয়, বর্তমানে তালিকাভুক্ত সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রে মোট ৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এক্সপোজার আইনী সীমার মধ্যে আসার ফলে ব্যাংকগুলো যে টাকাটা ঋণ হিসেবে তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছিল, এটা তারা লস করতে পারতো। কারণ এই ঋণ ক্লাসিফাইড (খেলাপী) হতে পারতো। এতে প্রভিশন রাখার প্রয়োজন দেখা দিত। এখন আর সেই ঝুঁকিগুলো থাকলো না। কারণ ব্যাংকগুলো তাদের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে ঋণ প্রদান করেছিল, তা এখন মূলধনে রূপান্তর করা হয়েছে। এর ফলে ঐসব প্রতিষ্ঠানের সুদ দেয়ার বিষয়টাও আর নেই। আর মূলধন বৃদ্ধি পাওয়ায় সাবসিডিয়ারিগুলোর ভিত শক্তিশালী হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে। সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ঋণ ছিল জানিয়ে সুর চৌধুরী বলেন, এ টাকাটা এখন পুরোটাই মূলধন হিসেবে যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ১ হাজার ২শ’ ৯৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার, ৪১ কোটি ৯২ লাখ টাকার মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ২২০ থেকে ২২৫ কোটি টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ারও মূলধনে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৪০ কোটি টাকায়। ডেপুটি গবর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, বাজারে হিট না করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যাংকের বাড়তি বিনিয়োগ সমন্বয়ের পাশাপাশি আইনী সীমার মধ্যে আরও অতিরিক্ত বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এরপরও যদি শেয়ারবাজারের অবস্থা ভাল না হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটার প্রতি মানুষের কোন আস্থা নেই। তবে বাড়তি বিনিয়োগের এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবে কি না, তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। এ ক্ষেত্রে আইনী কোন বাধ্যবাধকতা নেই। শেয়ারবাজারের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের হিসাব করার ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজারমূল্যকে বিবেচনায় ধরা হয়। বাজারে এখন শেয়ারের দাম কম থাকায় অনেক ব্যাংকের নতুন করে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
×