ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

পানির সঙ্গে বাড়ছে ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২০ জুলাই ২০১৬

পানির সঙ্গে বাড়ছে ভাঙ্গন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও বাঙালী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নদী ভাঙ্গন। ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিঃস্ব হচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। নীলফামারী ॥ তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনে ডিমলা উপজেলায় শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। বসতভিটা, আবাদি জমি হারিয়ে পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে তিস্তার বাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে। উজানের ঢলে মঙ্গলবার তিস্তার বন্যার পানি ওই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি ও ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি চর ও চরগ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভয়াবহ আকারে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তিস্তা আমাগোর জমি জিরাত সব শ্যাষ কইরা দিলে বাহে। সব কিছু ভাসায় নিয়া যায়ছে, বসতভিটা গিল্লা খায়া ফেলায়ছে। মঙ্গলবার সকালে কথাগুলো বলেন একতার চরের দিঘীর পাড় গ্রামের মৃত আকবর আলী পুত্র বুধা ম-ল (৭০)। টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন এর আগে তিস্তার বন্যা ও ভাঙ্গন দেখছিলাম। কিন্তু এবার তিস্তা যেন পাগল হয়ে উঠেছে। সামনে ও আশপাশে যা পাচ্ছে সব কিছু ল-ভ- করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সব থেকে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী ও টাবুর চর ও খোকারচর এলাকায়। এই চরগুলোর ৩৮০টি পরিবারের বসতভিটা রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, স্কুলগুলো তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে। গাইবান্ধা ॥ অবিরাম বৃষ্টিতে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে এখনও তা বিপদসীমার অনেক নিচে রয়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙ্গনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে যমুনার ভাঙ্গনে সাঘাটার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ১৫০টি ঘরবাড়ি এবং আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে হলদিয়া, সাঘাটা, গোবিন্দী, ভরতখালী, কামালেরপাড়া ইউনিয়নের ২শ’ বাড়িঘর, গোহাট, কালিবাড়ি মন্দির, এসকেএস ফাউন্ডেশন সংস্থার কার্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু স্থাপনা। ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য জরুরী ভিত্তিতে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার নিয়োগ করে ভরতখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উল্যার চরপাড়া ও সাঘাটা উপজেলার গোবিন্দী গ্রামে জিও ব্যাগ (বালির বস্তা) ফেলানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে উপজেলার কামালেরপাড়া ইউনিয়নের বাঙাবাড়ি, কিংকরপুর ও জালারতাইড় এলাকায় এ পর্যন্ত অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে আরও ২০টি বসতভিটা এবং বাঙাবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। কুড়িগ্রাম ॥ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ২য় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২য় দফা বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজীবপুর ও সদর উপজেলার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। বন্যার্ত এলাকায় রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে পাট, সবজি, কলাসহ আমন বীজতলা। এসব এলাকার বেশিরভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। চারণভূমি তলিয়ে থাকায় গবাদি পশু নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিতরা।
×